নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় ফুটপাতে হকার বসিয়ে মুক্তার হোসেন সরকার নামে এক বাড়িওয়ালা পুনরায় চাঁদাবাজি শুরু করেছেন। এতে প্রতিনিয়তঃ ভোগান্তিতে পড়ছেন ঐ রাস্তা দিয়ে চলাচলরত পথচারীরা।
ফুটপাতে চাঁদাবাজি করে বর্তমানে তার প্রতিমাসে আয় হচ্ছে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা।
বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হীরাঝিল এলাকার ১ নং গলি দখল করে হকার বসিয়েছেন মুক্তার হোসেন।
এতে হীরাঝিলের ঐ রাস্তায় অহরহ রিক্সারজট লেগেই থাকছে। এর আগে কয়েকবার এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসির নির্দেশে পুলিশ ঐ ফুটপাতের হকার সরিয়ে মানুষ চলাচলের জন্য গলিটি সচল করে। কিন্তু কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর আবারও হকার বসিয়েছেন মুক্তার হোসেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হীরাঝিল এলাকার ১নং গলিতে মুক্তার হোসেন হকার বসিয়ে মাসে ৫২ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা তোলেন।
জানা যায়, তার বিএম ভবনের নিচে ডিএনডি খালের দিকে দুটি সবজির দোকান থেকে প্রতিদিন ১ হাজার ২শ টাকা করে মাসে ৩৬ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করেন তিনি। একটি ডিমের দোকান থেকে প্রতিদিন ২শ ৫০ টাকা করে মোট ৭ হাজার ৫শ টাকা চাঁদা উত্তোলন করা হয়। আর একটি মাছের দোকান থেকে প্রতিদিন ২শ টাকা করে মোট ৬ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।
এলাকাবাসীর সূত্রমতে, মুক্তার হোসেন সরকারের হীরাঝিলে চারটি এবং হক সুপার মার্কেটের উত্তর পাশে একটি বাড়িসহ সর্বমোট ১২-১৩টি বাড়ি থাকলেও দীর্ঘদিন যাবত হকারদের থেকে তিনি এ রকম চাঁদা উত্তোলন করে আসছেন। এছাড়া বর্তমানে তার কয়েক কোটি টাকার তিনটি বিলাশবহুল গাড়ি রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন হকার জানান, মুক্তার হোসেন সরকার আমাদের কাছ থেকে অগ্রীম টাকা নিয়ে আমাদের বসতে দিয়েছে।
তবে কত টাকা অগ্রিম নিয়েছেন তা বলতে তারা অপারগতা প্রকাশ করেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তার গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার মতলব থানার ছেংগারচর পৌরসভার চকবাজারের ছোট মরাধন। পূর্বে তিনি গ্রামের বাড়িতে বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিল। মুসলিম সরকার নামে হীরাঝিলের এক বাড়িওয়ালা জানান, এসব চাঁদাবাজি করে বর্তমানে তিনি আহসান উল্লাহ সুপার মার্কেটে তিনটি এবং হীরাঝিলে দুইটি দোকানসহ প্রায় ১৪-১৫টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেছেন।
বর্তমানে মোক্তার হোসেন হীরাঝিল আবাসিক এলাকার সমাজ কল্যান সমিতির যুগ্ন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এলাকার কমিটি থেকে তাকে কয়েকবার নিষেধ করলেও তিনি পুনরায় চাঁদাবাজি শুরু করেছেন।
এমনিতেই মাহে রমযানের মাসে এ গলিতে মানুষের চাপ বেশি থাকে তার উপর তার বাড়ির নিচে হকার বসানোর কারণে সাধারণ মানুষের চলাচল করতে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তার দেখাদেখি ১ নং রোডের অনেক বাড়িওয়ালারাও তাদের বাড়ির নিচে হকার বসিয়েছেন। এর ফলে ১ নং রোডে আবারও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।
হীরাঝিল ৮ নং গলির বাড়িওয়ালা কামাল জানান, মাহে রমযানের মাসে চাঁদাবাজ এই বাড়িওয়ালার হকার বসানোর কারণে ১নং গলিতে রিকশাসহ অন্যসব পরিবহন চলাচল তো দূরের কথা মানুষই ঠিকমতো হাঁটতে পারে না। হীরাঝিল এলাকার এই বাড়িওয়ালার চাঁদাবাজির কারণে সাধারণ মানুষ অতিষ্ঠ। এছাড়া ১নং গলিতে তার চালবাহী ট্রাক রেখে গাড়ি লোড আনলোড করার ফলে রাস্তায় কৃত্রিম যানজট সৃষ্টি হয়। এতে মানুষ ও আশেপাশের দোকান গুলোতে ভোগান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঐ রোডে অবস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন দোকানদার জানান, এমনিতে হকার বসার কারণে এত বড় রাস্তা চিপা গলিতে পরিণত হয়েছে। তার উপর বড় ট্রাক ঢুকলে রাস্তায় দাঁড়ানোর জায়গাও থাকে না। এজন্য তখন আমাদের বেঁচা বিক্রি বন্ধ রাখতে হয়। এ বিষয়ে মুক্তার হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি নিজেকে একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী দাবি করে জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকার ১নং গলিতে অনেক আগে থেকেই অবৈধভাবে হকার বসার বিরোধীতা করে আসছি ।
এর ফলে একটি স্বার্থান্বেষী মহল আমাকে কোনঠাঁসা করার জন্য আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে। তার বাড়ির সামনে হকার বসানোর বিষয়ে তিনি বলেন, রোযার মাস হওয়ায় আমি মানবিক দিক বিবেচনা করে কয়েকজন হকারকে বসতে দিয়েছি। সর্বশেষ তিনি এই প্রতিবেদককে তার সাথে দেখা করার অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এএসআই মো: আকছার আলী জানান, নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনের পাশাপাশি জনগণের যেনো চলাফেরা করতে সমস্যা সৃষ্টি না হয় সেজন্য কাজ করে যাচ্ছে।
মুক্তার হোসেন সরকারের নামে চাঁদাবাজির বিষয়ে এর আগেও এমন কিছু অভিযোগ পেয়েছি। আমরা বিষয়টি দেখবো উল্লেখ্য যে, গতবছরের ২৬ জানুয়ারী এবং ২৭ জুন হীরাঝিল আবাসিক এলাকার ১ নং রোডে মুক্তার হোসেন সরকারের বসানো হকারদেরকে রাস্তা থেকে উচ্ছেদ করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ।









Discussion about this post