“অপরাধীদের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে, শিক্ষকের উপর হামলাকারীদের বিচার চাই বিচার চাই“- এমন শ্লোগান দিয়ে বিক্ষুদ্ধ ছাত্ররা ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে কুলাঙ্গার চক্রের শাস্তির দাবী জানিয়েছে । অন্যথায় আগামী ৪৮ ঘন্টার পর ছাত্ররা স্কুল ছেড়ে রাজপথে আন্দোলনের ঘোষনা দেয় ।
ছাত্র শিক্ষকদের এমন আন্দোলনের পর নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি মাহবুবুর রহমান নিজে বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়রী করেছেন ।
থানায় দায়ের করা সাধারণ ডায়রীতে শিক্ষক মাহবুবুর রহমান উল্লেখ করেছেন, স্কুলের অভিভাবক প্রতিনিধি সরকার আলম অনৈতিকভাবে ভর্তি বাণিজ্য করতে না পেরে আমার উপর ক্ষুদ্ধ হয়ে রোববার (১০ এপ্রিল) দুপুর দেড়টায় স্কুল মাঠে শারিরীকভাবে আমাকে (মাহবুবুর রহমানকে) মারধর ও লাঞ্চিত করে আমার হাত কেটে নেয়ার হুমকি দেয় । অপর অভিভাবক প্রতিনিধি ওয়াহিদ সাদত বাবু একই কারণে আমার দাড়ি টেনে ছিড়ে নেয় এবং দা দিয়ে কুপিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
সোমবার (১১ এপ্রিল) বিকেলে সদর থানায় এমন সাধারণ ডায়রী করার পর ইন্সপেক্টর তদন্ত আজিজুল হাওলাদার এ বিষয়ে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান ।
রোববার শিক্ষক মাহবুবুর রহমানের উপর এমন হামলার ঘটনায় সোমবার ১১ এপ্রিল সোমবার সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে স্কুল মাঠে বিক্ষোভ দেখিয়ে ওই আলটিমেটাম দেয়। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা উল্লেখিত আন্দোলনের ঘোষনা দেয়।
ছাত্রদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আন্দোলনকালীন সময়ে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চন্দন শীল বলেন, নারায়ণগঞ্জ হাইস্কুল একটি শত বছরের পুরনো ঐতিহ্যবাহী প্রাচীনতম স্কুল। এই স্কুলে আমাদের কারো দাদা কারো বাবা অধ্যয়ন করেছে। আমরা এই স্কুলের সুনাম ঐতিহ্য ভুলুণ্ঠিত হতে দিবনা। কারো পৈত্রিক সম্পত্তি বানাতে দিবনা। শিক্ষকদের অবমাননা বরদাশত করবো না। আমরা এ বিষয়ে আইনগত প্রক্রিয়া নিব। এ বিষয়ে আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে জানাবো। আমাদের শিক্ষক মাহবুবুর রহমান ও প্রধান শিক্ষক মাহমুদুল হাসান ভূইয়ার উপর হামলা হয়েছে। শিক্ষকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তাই প্রয়োজনে মামলাও হবে।
মারধরের শিকার হওয়া শিক্ষক মাহবুবুর রহমানও ঘটনার বিচার চান। তিনি বলেন, আমরা শিক্ষককের সঙ্গে কথা বলে আইনগত ব্যবস্থা নিব। পরবর্তীতে স্থানীয় এমপি, জেলা প্রশাসক, জেলা শিক্ষা অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের অবহিত করবো । ভবিষ্যতে আর কাউকে স্কুলে ভর্তি বাণিজ্য করতে দিবনা ।
জানা গেছে, ১০ এপ্রিল রোববার সকালে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা নিয়ে তর্ক বিতর্কের এক পর্যায়ে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সরকার আলম ও ওয়াহেদ সাদত বাবু স্কুলের শিক্ষক মাহবুবুর রহমানকে পুরোনো ভবনের অফিস রুম থেকে টেনে হিচড়ে এবং ধাক্কা দিতে দিতে প্রধান শিক্ষকের রুমে নিয়ে আসে। এরপর রুমের সামনে তাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করা হয়। ঘটনা দেখতে পেয়ে তারা ম্যানেজিং কমিটির নারী সদস্য মায়াকে ফোন দেয়। মায়া বিষয়টি জেনে দ্রুত প্রধান শিক্ষককে অবগত করে। পরে প্রধান শিক্ষক তার ক্লাসরুম থেকে ছুটে এসে সরকার আলম ও বাবুর উপস্থিতিতে এই দৃশ্য দেখতে পায়।
জানা গেছে, হাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি অপেক্ষমান শিক্ষার্থীদের ভর্তির দায়িত্ব শিক্ষক মাহবুবুর রহমানের উপর অর্পন করেন। তিনি হাই স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি। মূলত এই দায়িত্ব ইতোপূর্বে প্রধান শিক্ষক পালন করতেন। মাহবুবুর রহমান কেন এই দায়িত্ব নিলেন সেই নিয়েই সরকার আলম, বাবু সহ অন্যান্যরা ক্ষিপ্ত ছিলেন।
প্রধান শিক্ষক মাহমুদুল হাসান ভূইয়া জানান, আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করবো। কেউ কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা করবেনা। আমরা আইনগত পদক্ষেপ নিব।
উল্লেখ্য শত বছরের পুরনো নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজে ভর্তি ও পরিচালনা পর্ষদ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অচলাবস্থা বিরাজমান ছিল। গত জানুয়ারী থেকেই স্কুলটিতে ভর্তি নিয়ে পরিচালনা পর্ষদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি বিরাজ করছিল।
উল্লেখ্য, এর পূর্বেও নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলের নারী অভিভাবক প্রতিনিধি দেলোয়ারা বেগম মায়া কে নানাভাবে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজসহ হুমকির ঘটনাও ঘটায় সরকার আলম। এমন ঘটনায় থানায় অভিযোগ দায়ের হলেও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এবার হামলার ঘটনার শিকার হলেন শিক্ষক মাহবুবুর রহমান।









Discussion about this post