সদর উপজেলার আদমজী ইপিজেড এর বন্ধ করে রাখা বেকা গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইলের শ্রমিকদের ৩ মাসের বকেযা বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবীতে এবার নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে জেলা প্রশাসক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের কঠোর সমালোচনা করেন অভূক্ত শ্রমিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি শ্রমিক নেতা রাজেকুজ্জামান রতন শ্রমিকদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে বলেছেন, “যে শ্রমিকরা ঘাম ঝড়িয়ে দেশের উন্নয়নে সহযোগিতা করছে সেই শ্রমিকরা আজ ঈদের দিনে অভূক্ত থেকে অনশন করতে হচ্ছে । জেলা প্রশাসক বেতন নিয়েছেন, পুলিশের ওই কর্তারা বেতন পেয়েছেন তবে আমাদের এই শ্রমিকরা কেন আজ ঈদের দিন অভূক্ত অবস্থায় তাদের বেতনের দাবীতে অনশন করতে হচ্ছে ?”
দীর্ঘ বক্তব্যে রাজেকুজ্জামান রতন সরকার ও প্রশাসন যন্ত্রের কঠোর সমালোচনা করেন।
আজ মঙ্গলবার (৩ মে ঈদের দিন) সকাল সাড়ে ১১টায় শহরের চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে ‘বেকা গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড’ নামে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা অনশন শুরু করেন।
নারী পুরুষ শ্রমিকদের অনেকেই কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, ঘরে ঈদের জণ্য এক কেজি সমাই কিনতে পারি নাই । বাচ্চাদের কোন জামা কিনতে পারি নাই । এই কষ্ঠ বুঝাতে পারছি না। আদমজী ইপিজেডে অবস্থিত বেকা গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেডে ৭০০ শ্রমিকের ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিল মাসের বেতন বকেয়া। গত ২০ এপ্রিল বেতন ও ঈদ বোনাস দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল মালিকপক্ষ। ওইদিন শ্রমিকেরা কাজে গিয়ে কারখানা বন্ধ পায়। তারপর থেকেই আন্দোলন করে যাচ্ছি।
কারখানার শ্রমিক ফরিদ হোসেন বলেন, একাধিকবার তারিখ দিলেও বেতন দেয়নি মালিকপক্ষ। আজ ঈদের দিনে আমরা সেমাই পর্যন্ত কিনতে পারিনি টাকা নেই বলে। যে কারণে অনশনে বসেছি। আমাদের দাবি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বেতন-বোনাস দিতে হবে।
আরেক শ্রমিক নূর জাহান বলেন, আমার মেয়েরা বলছে আম্মা বাড়িতে আসো না কেন ? আমি কী করে বলবো যে বেতন পাইনি! মেয়েদের একটি পোশাক কিনে দিতে পারিনি। বারবার মেয়েরা ফোন দিচ্ছে কিন্তু আমি ধরতে পারছি না। ফোন ধরে আমি কী বলবো ?
এ বিষয়ে শিল্প পুলিশ নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, বেকা গামেন্টসের মালিক পলাতক। তাকে কোনোভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করা চেষ্টা করছি।
তিনি আরও বলেন, সে সময় তারা বলেছিলেন শ্রমিকদের বকেয়া বেতন বুঝিয়ে দেবে। কিন্তু তা না করে গত কয়েকদিন ধরে মোবাইল বন্ধ করে রেখেছে। তাই তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। শ্রমিকরা বকেয়া বেতনের দাবিতে ন্যায্য আন্দোলনই করছে। তাদের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল আচরণ করছি। এছাড়া আমাদের আর কী বা করার আছে।
দুপুর ২ টা ৩০ মিনিটে শ্রমিক নেতা রাজেকুজ্জামান রতন, মন্টু ঘোষ, আহসান হাবিব বুলবুল, হাফিজুল ইসলাম, নিখিল দাস, আবু নাঈম খান বিপ্লবসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ অভূক্ত অনশনরত শ্রমিকদের সেমাই ও পানি পান করিয়ে অনশন সমাপ্ত ঘোষনা করেন।









Discussion about this post