নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ফতুল্লার ৪টি ইউনিয়নকে অর্ন্তভুক্ত করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর বরাবরে চিঠি দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনের এমপি শামীম ওসমান।
গত ২৫ এপ্রিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী বরাবরে ওই ৪টি ইউনিয়নে সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত না করতে আবেদন জানিয়ে এই চিঠি দেন এমপি শামীম ওসমান।
চিঠিতে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি অবাক বিস্ময়ে দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে জানাতে বাধ্য হয়েছি যে আপনার সঙ্গে এ বিষয়ে আমার মৌখিকভাবে বহুবার কথা হয়েছে। আমি নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য। আমার নির্বাচনী এলাকার পাশেই সিটি কর্পোরেশন এলাকা। সিটি কর্পোরেশনের তুলনায় আমার নির্বাচনী এলাকার জনসংখ্যা প্রায় তিনগুণ। যে ইউনিয়নগুলো সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে সেই ইউনিয়নগুলোর ভোটার সংখ্যা যথাক্রমে কাশিপুর ইউনিয়ন ৭৬ হাজার ৮৭৯, এনায়েতনগর ৮২ হাজার ২৫৮, ফতুল্লা ইউনিয়ন ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৯৩, কুতুবপুরে ১ লক্ষ ৬২ হাজার ১৬৮, গোগনগরে ২০ হাজার ৩২ ভোট। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত এলাকার ভোটার ২ লক্ষ ২ হাজার, ৬৪৩ ভোট। এই এলাকাগুলো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এবং আপনার সহযোগীতায় উন্নয়নের মহাসড়কে রুপান্তরিত হয়েছে যার ফলে এ এলাকা নৌকার ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে।
আপনার সঙ্গে মৌখিক আলোচনায় আপনি জানিয়েছিলেন যে, আমার নির্বাচনী এলাকার অংশ সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করে সিটি কর্পোরেশন সম্প্রসারনের কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছেনা কিংবা হবে না। সেখানে যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী জাতীয় সরকার নির্বাচন সন্নিকটে। সে সময় নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫ আসনের সংসদ সদস্যদের অবগত না করেই তাদের এলাকাগুলোকে সিটি কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
আগামী নির্বাচনে এই দুই আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পরাজিত হয় এটি তারই একটা পরিকল্পনা বলে আমার মনে হচ্ছে। এ আসনে কারা প্রার্থী হবেন তা জননেত্রী শেখ হাসিনা জানেন। তবে যিনিই নির্বাচন করুক জন প্রতিনিধি হিসেবে এই এলাকার মানুষ কী চায় তা আমি অবগত আছি। সদ্য অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে সবকটি আসনেই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।
হঠাৎ করে গোপন সূত্রে গত ২৮ মার্চ উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে অত্র এলাকা সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। যেকোন এলাকা সিটি কর্পোরেশন হবে কী হবে না তা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে নিতে হবে। সিটি কর্পোরেশন হওয়াতে নারায়ণগঞ্জের মানুষ যে খুব শান্তিতে আছে তা নয়, মানুষের ঘাড়ে অতিরিক্ত ট্যাক্সের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। তারচেয়ে বরং সিটি কর্পোরেশনের বাহিরে যারা বসবাস করছেন তারাই শান্তিতে আছেন। আমার নির্বাচনী এলাকার ৩১ ভাগ সিটি কর্পোরেশনে রয়েছে। শেখ হাসিনার আন্তরিক সদিচ্ছায় আমার নির্বাচনী এলাকায় বিশেষত ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। অবশিষ্ট কাজগুলো শেষ হলে নারায়ণগঞ্জ আবারও প্রাচ্যের ড্যান্ডি হিসেবে রুপ নেবে।
আমার এলাকার মানুষ সিটি কর্পোরেশন হলে এত উন্নয়ন পেত কীনা তা সে বিষয়ে আমি সন্দিহান। কারণ আমার এলাকা সিদ্ধিরগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অধীনস্থ হলেও চাহিদার তুলনায় উন্নয়ন বঞ্চিত বলে তাদের মাঝে বেশ ক্ষোভ বিরাজ করছে। সেখানে আমাদের না জানিয়ে গোপনে এই ইউনিয়নগুলো সিটি কর্পোরেশনে অন্তর্ভুক্তির জন্য চিঠি আদান প্রদান আমার বোধগম্য নয়। আমার মনেহয় সর্ষের ভেতর ভুত রয়েছে। এই ধরনের ষড়যন্ত্র আমার এলাকার মানুষ কখনওই মেনে নেবে না আমি ব্যাক্তিগতভাবেও মেনে নেব না।
এর আগে গত বছর সিটি কর্পোরেশনের বাজেট অনুষ্ঠানে মেয়র আইভী বলেছিলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন সম্প্রসারণের জন্য আমরা বিগত ৮ থেকে ৯ বছর ধরে চেষ্টা করে যাচ্ছি। বিশেষ করে এনায়েতনগর, কাশিপুর, গোগনগর এবং ফতুল্লার আংশিক (কুতুবপুর ছাড়া) বাকিটা আমরা নেওয়ার চেষ্টা করছি। কারণ আপনারা দেখবেন সিটি থেকে তারা সব ধরনের সার্ভিস পাচ্ছে। প্রত্যেকের যাতায়াত কিন্তু শহর মুখি। কিন্তু শহর তাদের কিছু করে দিতে পারছে না। ইতোমধ্যে দেখবেন ইউনিয়ন পরিষদের ভেতরেও আমাদের প্রয়োজনে রাস্তা ঘাট ড্রেন করতে হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য আজকে ৮ বছর যাবৎ আমরা চাচ্ছি। তৎকালীন ডিসি মনোজ কান্তি বড়াল তিনি মন্ত্রণালয়ে রিপোর্ট লিখেছিল যে, কাশিপুর, এনায়েতনগর এবং ফতুল্লায় এখন নাকি মাঠ আর মাঠ এবং শুধু জমি আর জমি। রিপোর্টটা দেখলে আমার মনে হয় এরকম একটা মিথ্যা রিপোর্ট, এরকম প্রশাসনিক লেভেল থেকে দিতে পারে এটা আমার কাছে আশ্চার্যজনক ছিল। পরবর্তীতে আবার আমরা সম্প্রসারণের জন্য লিখেছি তবে আমাদের এখানের ডিসি অফিসের মতামত চেয়েছে। মতামত এখনও দেয়া হয়নি। আমি অনুরোধ করবো ডিসি সাহেব যেন মতামতটা দেন। তাছাড়াও কিছুটা প্রতিবন্ধকতা আছে। আমাদের লোকাল এমপি মহোদয় (নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি একেএম শামীম ওসমান) চাচ্ছেন না এটা সম্প্রসারিত হোক। ওনি মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বলেছে যে, এটা তার এলাকা, তাকে জিজ্ঞাসা না করে যেন সম্প্রসারিত করা না হয়। এটা আমাকে মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছিল। অনেক জনপ্রতিনিধি আছেন তারাও হয়তো চায় না। বিভিন্ন কারণেই সম্প্রসারিত করতে জটিলতা দেখা দিয়েছে।









Discussion about this post