অভিযোগের শেষ নাই নারায়ণগঞ্জ স্বাস্থ্য বিভাগের । খোদ জেলা বিএমএ নেতাদের মালিকানাধীন ক্লিনিক যখন কোন বৈধতা না থাকে, তখন অন্যান্যরা কেন এই লাইসেন্স করবেন ? লাইসেন্স বিহীন ক্লিনিক ও ডায়াগণষ্টিক সেন্টারের পরিচালকদের তো রয়েছে প্রভাবশালীদের দৌড়াত্ম। প্রভাবশালীদের দৌড়াত্ম ছাড়াও খোদ স্বাস্থ্য বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের প্রতি মাসে মাসোয়ারা প্রদান করে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চিকিৎসার নামে অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বীরদর্পে ।
জেলা পুলিশের প্রতিটি থানায় অলিখিত পন্থায় যেমন ক্যাশিয়ারখ্যাত চাাঁদাবাজরা নানা অপকর্ম করে বেড়ায় ঠিত তেমনি নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জনের নাম ভোঙ্গিংয়ে প্রতিটি ক্লিনিক ও ডায়াগণষ্টিক সেন্টার থেকে নিয়মিত মাসোয়ার হাতিয়ে নিচ্ছে চাঁদাবাজখ্যাত অসাধু কর্মচারীদের কেউ কেউ ।
সারাদেশের তুলনায় নারায়ণগঞ্জের সব ‘অবৈধ’হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেই সময় শেষ গতকাল রোববার (২৯ মে) শেষ হয়েছে। এর মধ্যে যেসব অবৈধ বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধ হবে না, সেসবের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জের কয়েকটি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কয়েকটি ক্লিনিককে জরিমানা করলেও সকল অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে এখনো ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই।
অভিযোগ রয়েছে জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিছুটা নীরব ভূমিকা পালন করছেন। আবার কেউ কেউ অভিযোগ করে বলছেন যখনি অবৈধ ক্লিনিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ আসে তখন অবৈধ ক্লিনিক মালিকরা টাকা দিয়ে দেন দরবার করে তা মিট করার পায়তারা করেন। অনেক ক্ষেত্রে এতে সমাধানও হয়েও যায়। তবে সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জন জেলার অবৈধ ক্লিনিক গুলোর বিরুদ্ধে এখনো তড়িৎ ব্যবস্থা নেননি কেন ?
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পূর্বের তালিকা অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের ২০টি ক্লিনিক-ডায়গনষ্টিক সেন্টার বৈধ লাইসেন্স পেতে যথাসময়ে আবেদন করেননি। কেউ কেউ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে চিকিৎসা কার্যক্রম চালাচ্ছে বছরের পর বছর। অনেকের লাইশেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েছে বহু দিন আগে, কিন্তু তা নবায়নের নাম নেই। অনুমোদন ছাড়া চিকিৎসাকেন্দ্রগুলোতে কারা চিকিৎসা দিচ্ছে তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। বাড়ছে অপচিকিৎসার অভিযোগ। আর এতে করে ভুল চিকিৎসার শিকার হতে হয় মানুষকে। অনেক সময় ভুল চিকিৎসায় রোগী মারাও যান।
এদিকে জেলার অনুমোদনহীন ২৭ টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের অভিযানে বুধবার মাঠে নেমেছিল প্রশাসন। ওইদিনের অভিযানে লাইসেন্স ও চিকিৎসক ছাড়াই অপারেশনসহ সেবা দেওয়ার অভিযোগে ৩টি ক্লিনিক সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও সিলগালা করা হয়।
এদিকে অনুমোদনহীন ভাবে ২৭টি ক্লিনিক রয়েছে এগুলো হলো, মেট্রো সিনেমা হল চত্বরের সোহেল জেনারেল হাসপাতাল, নবাব সলিমূল্লা রোড মেডিস্টার হসপিটাল এন্ড রেনেসা ল্যাব, নবাব সলিমূল্লাহ রোড মেডিভিশন আই হসপিটাল, নারায়ণগঞ্জ ডায়াবেটিক হাসপাতাল ইউনিট ২ , নারায়ণগঞ্জ প্রেসিডেন্ট রোড স্টার লাইফ হাসপাতাল, পশ্চিম দেওভোগ নাগ বাড়ি ডায়াবেটিক হাসপাতাল, নগরীর বঙ্গবন্ধু রোড মুক্তি জেনারেল হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু রোড রিজিয়া জেনারেল হাসপাতাল,সিদ্ধিরগঞ্জ এসও রোড মা সুফিয়া হাসপাতাল, সিদ্ধিরগঞ্জ মোজাফ্ফর টাওয়ার মেডিস্ক্যান হসপিটাল এন্ড ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার, খানপুর ইমন ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার, চাষাঢ়া মমতাজ ভবন মেডিকেল প্যাথলজি এন্ড ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার, ফতুল্লা শস্তাপুর বিশ্বরোড মাইক্রো প্যাথলজি, চিটাগাংরোড পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল, সিদ্ধিরগঞ্জ আদমজি কদমতলি জেনারেল হাসপাতাল, মাদানি নগর মাদারাসার বিপরীতে শাহ আলম ভবন ট্রাষ্ট হসপিটাল এন্ড ডায়াগনিষ্টিক,সিদ্ধিরগঞ্জ হিরাজিল সূর্যের হাসি ক্লিনিক হিরাঝিল,ভূইয়াপাড়া শাহ সুজা রোড সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক, ফতুল্লা শাহী বাজার সুফিয়া ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার, সিদ্ধিরগঞ্জ নিমাই কাশারি পাইওনিয়ার ডিজিাটাল ডায়াগনিষ্টিক, সিদ্ধিরগঞ্জ মৌচাক ডায়াবেটিক সেন্টার,কতুবপুর লামাপাড়া সূর্যের হাসি নেটওয়ার্ক, ফতুল্লা আয়েশা জেনারেল হাসপাতাল, ফতুল্লা পঞ্চবপি মোড় মেরী স্টার হাসপাতাল।
এছাড়া জেলার আড়াইহাজার উপজেলায় ৫টি ক্লিনিক অবৈধ রয়েছে। অবৈধ ক্লিনিক গুলো হল আড়াইহাজার ফলপট্রি কানন প্লাজা আড়াইহাজার মা ও শিশু হাসপাতাল, গোপালদি রামচন্দ্রি পল্লি বিদ্যুৎ অফিস গোপালদি জেনারেল হাসপাতাল, গোপালদি বাজার সিএনজি স্টেশন ফ্যামিলি কেয়ার ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার,আড়াইহাজার গোপালদি বাজার সিনেমা হলের সামনে শারদা মেডিকেল সেন্টার, আড়াইহাজার বাসস্ট্যান্ড চনপাড়া মোরশেদ টাওয়ার নুরজাহান হসপিটাল।
জেলার বন্দর উপজেলায় ২ টি অবৈধ ক্লিনিক রয়েছে সে গুলো হলো বন্দর বারপাড়া হেল্প হাসপাতাল, বন্দর ১২ নম্বর এইচ এম সেন রোড বন্দরে সিটি ডায়াগনিষ্টিক সেন্টার।
রুপগঞ্জ উপজেলায় ৮ টি অবৈধ ক্লিনিক রয়েছে তা হলো, ভূলতা রুপগঞ্জ পারফেক্ট হাসপাতাল এন্ড ডায়গানস্টিক সেন্টার, রুপগঞ্জ ভূলতা হাবিবুল্লাহ মোতালেব সুপার প্লাজা, গাউসিয়া ডায়বেটিক সেন্টার, রুপগঞ্জ তারাবো বাজার, ২৩ হাজী মানিক ভূইয়া মার্কেট সিটি ল্যাব মেডিকেল সার্ভিসেস, রুপগঞ্জ পুটিনা বেলদী হেলথ কেয়ার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ,রুপগঞ্জ পূর্বগ্রাম, চনপাড়া সেফ লাইফ ল্যাব এন্ড কনসালটেশন সেন্টার, রুপগঞ্জ কাঞ্চন মায়ার বাড়ি এ এস এম টাওয়ার, কে পি এস জেনারেল হাসপাতাল লিঃ, রুপগঞ্জ, ব্রাক্ষ্মনখালী, হাবিব নগর, ইডেন লাইফ কেয়ার হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সার্ভিস, রুপগঞ্জ, সাহাপুর ,নিউ মডার্ণ হেলথ সেন্টার।
সোনারগাঁ উপজেলায় রয়েছে, মোগরাপাড়া চৌরাস্তা ডিগ্রী কলেজ রোডে বাদশা প্লাজা দি মাতৃসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, সোনারগাঁ মোগরাপাড়া চৌরাস্তা, সোনারগাঁ মোগরাপাড়া চৌরাস্তা ডিগ্রী কলেজ রোডে গ্রীন লাইফ মেডিকেল সার্ভিসেস, হাজী মোস্তফা ম্যানশন, হাবিবপুর, থানা রোড ইসলামিয়া ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, মোগরাপাড়া চৌরাস্তা দি ল্যাব এইড ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, মোগরাপাড়া চৌরাস্তা ডক্টরস হেলথ কেয়ার লি সহ সব মিলিয়ে পুরো জেলায় ৪৭ টি অবৈধ ক্লিনিক রয়েছে। যে গুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে গতকাল জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করে ৩ প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স না থাকায় চিটাগাংরোড পদ্মা জেনারেল হাসপাতাল, মমতা চক্ষু হাসপাতাল, সীলগালা করেন, শহরের মিশন পাড়া মেডিভিশন চক্ষু হাসপাতাল সিলগালা করা হয়, একই সাথে চিটাগাং রোড মীরাকেল হেলথ কেয়ারের অনুমোদন না থাকায় ৫ হাজার ও ২ মিশনপাড়া মেডিহোপ হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স নবায়ন না থাকায় ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। ২ প্রতিষ্ঠানকে ৩৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
১৯৮২ সালের মেডিকেল অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিস অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া কোনো হাসপাতাল, ক্লিনিক বা ডায়াগনেস্টিক সেন্টার চালানোর সুযোগ নেই। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের অধিকাংশ হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো বছরের পর বছর চালিয়ে যাচ্ছে তাদের চিকিৎসা সেবা। ওই সকল ক্লিনিকগুলো কতটুক মানসম্মত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে তা জানা নেই অনেকেরই।
এমন ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ ক্লিনিক মালিকদের কেউ কেউ নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে বলেন, অবৈধভাবে পরিচালিত সিদ্ধিরগঞ্জে পদ্মা ক্লিনিকে অপারেশনের টেবিলে প্রসূতিকে ফেলে পালিয়ে গেলো ডাক্তার নার্সসহ সকলেই । সত্যিকারেই যদি তারা ডাক্তার নার্স হতেন তবে এই প্রসূতিকে ফেলে পালালেন কেন ? তারা কি সত্যিকার ই ডাক্তার – নার্স ? মৃত্যুর মুখে ফেলে একজন কসাইও পশুকে ফেলে পালিয়ে যায় না। এই পদ্মা ক্লিনিক এতোদিন পরিচালিত হলো কি করে? সিভিল সার্জন কি ঘন্টা ভেজেছেন ? এমন লোমহর্ষক ঘটনায় এই দুই দিনেও কেন এই পদ্মা ক্লিনিকে বিরুদ্ধে কোন মামলা হলো না ? তারা কি আইনের উর্ধ্বে ? এতেই অনুধাবণ করা যায়, ‘সর্ষের ভেতরে ভূত !’









Discussion about this post