ঢাকা নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড এলাকার ফতুল্লার ভুঁইগড়ে রূপায়ন টাউন যেন অপরাধীদের অভয়ারণ্য । এমন প্রচলন রয়েছে দীর্ঘদিন যাবৎ । এই প্রচলনের আংশিক সত্যতা মিলেছে এবারের উচ্ছেদ অভিযানে । রূপায়ন টাউন কর্তৃপক্ষ যেন নিজেরাই দেশের রাজা বাদশা এমনটাই মনে করে রূপায়ন কর্তৃপক্ষ । শত শত অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিয়ে নিজেরাই বিল গ্রহণ করার অয়ংকর এক চিত্র উঠে এসেছে উচ্ছেদ অভিযানকালে । আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা নিরপেক্ষভাবে রূপায়ন টাউন এলাকায় অভিযান চালালে আরো অনেক ভয়ংকর অপরধের লোমহর্ষক চিত্র উঠে আসবে বলেও অনেকেই মন্তব্য করেছেন
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় যেন অবৈধ গ্যাস সংযোগের শীর্ষ স্থান দখল করে রেখেছে শাসক দলরে নাম ভাঙ্গানো অপরাধী চক্র । এবার ফতুল্লার ভুঁইগড় এলাকায় রূপায়ন টাউনে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান চালিয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড।
অভিযানকালে রূপায়ন আবাসিক এলাকার অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যমে একজন স্থানীয় নেতার নাম উল্লেখ করে বলেছেন, এই অবৈধ সংযোগ দিতে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে এককালীন আবার প্রতিমাসে গ্যাস বিল দেয়া হলেও তিনি এখন কোথায় । তাকে ফোন কররেও ওই নেতা ফোন ধরছেন না । সকলেই ওই নেতাকে খুব ভালো করে চিনলেও কেউ তার নাম মুখ ফুটে প্রকাশ করার সাহস করে নাই ।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) বেলা ১১টার দিকে ফতুল্লার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে এম ইসমামের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে রূপায়ন টাউনের ৭৮৪টি অবৈধ আবাসিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। এ সময় রূপায়নের বাসিন্দারা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলে র্যাব ও পুলিশের সহায়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, রূপায়ন টাউনে মোট আবাসিক গ্যাস সংযোগ রয়েছে ৭৮৪টি। এর মধ্যে তিতাসের হিসাব অনুযায়ী বৈধ সংযোগ রয়েছে ২৫২টি আর অবৈধ সংযোগের সংখ্যা ৫৩২টি। তবে বৈধ আড়াই শতাধিক সংযোগের বিপরীতে ৫৩ লাখ টাকার বিল বকেয়া রয়েছে বলে জানা গেছে।
রূপায়ন টাউনের ৪নং ভবনের ডি-১ ফ্ল্যাটের বাসিন্দা হাবিবুর রহমান (৫৫) বিল পরিশোধের কাগজ দেখিয়ে বলেন, আমার চলতি মাস বাদে সকল বিল পরিশোধ করা আছে। কর্তৃপক্ষ যদি বিল না দিয়ে থাকে তার জন্য আমরা কেন ভুক্তভোগী হবো। আমরা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে বার বার অবহিত করার পরও তারা এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

একই এলাকার ১৩নং ভবনের আশরাফ হোসেন বলেন, নিয়মিত সার্ভিস চার্জ ও গ্যাস বিল দিয়েও হয়রানি হওয়া অর্থহীন। আমরা এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে জবাব চাইলে তারা নানা টালবাহানা করে, কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি। বিল দিয়েও হয়রানি হতে হলো, অথচ আমাদেরকে আগে থেকে কিছুই জানানো হয়নি।
তবে এমন অভিযোগ শুধু হাবিবুর রহমান ও আশরাফ হোসেনেরই নয়, ওই এলাকার অনেকেই একই অভিযোগ জানিয়েছেন।
রূপয়ন টাউনের ইউটিলিটি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা প্রোপার্টিজের সার্ভিস ম্যানেজার শাহীন সারোয়ার বলেন, আমাদের শুধু সার্ভিস দেওয়ার দায়িত্ব। বৈধ-অবৈধ কিংবা কাগজপত্রের বিষয়টি রূপায়ন কর্তৃপক্ষ দেখে। এখানে কী পরিমাণ বৈধ বা অবৈধ লাইন রয়েছে তা জানা নেই।
রূপায়ন টাউনের প্রকৌশলী ও ইনচার্জ (২য় ধাপ) মোয়াল্লেম হোসেন জানান, বছর দুই আগে তিতাসের সঙ্গে আমাদের একটি চুক্তি হয়েছে। যেই পরিমাণ গ্যাস সংযোগ পরবর্তী পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছে তা তিতাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই করা হয়েছে। তাছাড়া হাইকোর্টে এ বিষয়ে একটি রিট করা হয়েছে, হাইকোর্টের স্টে অর্ডার রয়েছে বলে আমি জানি। রূপায়নের লিগ্যাল এইডের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট নথিপত্র নিয়ে আসছেন। আমরা তাদের কাছে সময় চেয়েছি, কিন্তু তারা লাইন কেটে দিয়েছেন।

এখানকার বাসিন্দারা বিল পরিশোধের কাগজ দেখিয়েছেন, তাদের সংযোগ কেন বিচ্ছিন্ন করা হলো ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা বিল দিয়েছেন রূপায়নকে, আমাদের কাছে সেই বিল জমা হয়নি। এ বিষয়ে তারা তাদের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলুক।
অভিযান শেষে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে এম ইসমাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান চলমান রয়েছে। অবৈধ গ্যাস সংযোগের ফলে রাষ্ট্র বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে। আজ এখানে অবৈধ সংযোগের বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় তিতাস গ্যাস আইন অনুযায়ী প্রায় সাত শতাধিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান চলমান থাকবে।









Discussion about this post