আজ থেকে ১৫ বছর আগে আমার বড় ছেলে তানভির পাঁচ বছর বয়সে পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল। আজ আমার ছোট ছেলে আতিকুর রহমান নিহাদও (১৩) পানিতে ডুবে মারা গেলো। আমার জানাজা পড়ানোর মতো কেউ রইলো না।
মরদেহের পাশে বসে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা দেওভোগ মাদরাসা এলাকার বাসিন্দা তাসলিমা। বড় ছেলের পর ছোট ছেলেকেও হারিয়ে তিনি শোকে পাথর হয়ে গেছেন।
শুক্রবার (৩ জুন) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ শহরের জল্লারপাড় এলাকায় সিটি করপোরেশনের লেকের পানি থেকে তার ছেলের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সেইসঙ্গে ইমতিয়াজ (১৫) নামের আরও এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
পানিতে ডুবে নিহত নিহাদের মা তাসলিমা বলেন, ‘রাজশাহী বেড়াতে গিয়ে বড় ছেলে তানভিরের পানিতে ডুবে মৃত্যু হয়েছিল। বড় ছেলে মারা যাওয়ার পর থেকেই আমি আমার ছোট ছেলেকে ঘর থেকে তেমন বের হতে দিতাম না। সবসময় তাকে চোখে চোখে রাখতাম। আমার ছেলেও কোথাও যেতো না। আজ ঘর থেকে বের হলো। আর আজই লাশ হয়ে ফিরে এলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার দুই ছেলে ও এক মেয়ে। আজ থেকে আমার দুই ছেলের কেউই রইলো না। আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো? সবাই বলতো ছেলে আমার মতো হয়েছে। ছেলে আমার রইলো না।’
নাহিদের বোন আয়েশা ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। দুই ভাইকে হারিয়ে তিনিও যেন নির্বাক হয়ে গেছেন।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে আয়েশা বলেন, ‘আমরা দুই ভাই-বোন যমজ ছিলাম। ভাই মারা যাওয়ার পর থেকেই আমি আমার ছোট ভাইটিকে সবসময় চোখে চোখে রাখতাম। জুমার নামাজে যাওয়ার কথা বলে সে বাসা থেকে বের হয়েছিল। আগে যদি জানতাম তাহলে একা ছাড়তাম না। ভাই আর ফিরবে না। আমার দুই ভাইও আমাকে রেখে চলে গেলো।’
নিহাদের বাবা উবায়দুর ও ইমতিয়াজের বাবা ইকবাল উভয়ই একই এলাকার বাসিন্দা। নিহাদ ও ইমতিয়াজ দুজনই মাদরাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র ছিল।

নিহাদ দেওভোগ সানোয়ার ফিরোজ বায়তুল কুরআনা মাদরাসা এবং ইমতিয়াজ দেওভোগের জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম মাদরাসায় পড়তো। তাদের কেউই সাঁতার জানতো না।
ইমতিয়াজের বাবা ইকবাল বলেন, ‘সমবয়সী কয়েকজন মিলে জুমার নামাজের কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছিল। পরে বিকেলে নিহাদ ও ইমতিয়াজের কাপড়-চোপড় নিয়ে এসে দুজন বলে তারা পানিতে ডুবে গেছে। আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি তাদের মরদেহ হাসপাতালে নিয়ে গেছে। হাসপাতালের চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।’
মন্ডলপাড়া ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার হামিদুর রহমান বলেন, আমরা বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে একজনের মরদেহ উদ্ধার করি। তার আগে আরও এক কিশোরের মরদেহ উদ্ধার করে স্বজনরা নিয়ে যান।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন বলেন, লেক থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তারা গোসল করতে নেমে পানিতে তলিয়ে গেছে।
(জাগো নিউজ)









Discussion about this post