সদর উপজেলার গোগনগর ইউনয়নে চাঞ্চল্যকর এবং বহুল উত্তেজনাকর দৌলত মেম্বার হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন নিহতের স্ত্রী সমতাজ বেগম । তিনি ২২ জনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করাে হয়েছে । এই মামলায় এরই মধ্যে তিন জন আসামী গ্রেফতার করা হয়েছে বলে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনিচুর রহমান।
তিনি আরো বলেন, অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার করতে জোড়ালো চেষ্টা চলছে। তদন্তের স্বার্থে এই মুহুর্তে এর বাইরে আর কোন তথ্য দেয়া ঠিক হবে না বলেও জানান তিনি ।
দৌলত মেম্বারের লাশ ময়না তদন্তের পর নারায়ণগঞ্জের আনার পর সোমবার (২৭ জুন) রাতে গোগনগর কবরস্থানে নামাজে জানাযা শেষে দাফন সম্পন্ন হযেছে । তবে এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে ।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার গোগনগর ইউনিয়নে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রিমিয়াম সিমেন্টে ওয়েস্টেজ মালামাল ভাগাভাগি নিয়ে প্রভাব বিস্তার, ফজর আলীর নিয়ন্ত্রণাধীন বিচ্ছু বাহিনীর সাথে দৌলত বাহিনীর দ্বন্ধ, দুটি গ্রুপের মধ্যে মারামারি, পাল্টাপাল্টি মামলায় যে উত্তেজনা ছিল সেটা আরো বৃদ্ধি করে দিয়েছে একটি হত্যাকাণ্ড। ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার এক সময়ের বহুল আলোচিত সমালোচিত দৌলত মেম্বারকে কুপিয়ে ও পায়ের রগ কেটে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উল্লেখিত প্রিমিয়াম সিমেন্টের ওয়েস্টেজ মালামাল ছাড়াও চর সৈয়দপুরে ডকইয়ার্ড থেকে একটি জাহাজের মালামাল বিক্রিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্বের সূত্রপাত ঘটে। গোগনগর এলাকায় হাজী আহাম্মদ আলী বেপারী নামে একজনের মৃত্যুর পর তাঁর সন্তানদের মাঝে সম্পদের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ঝামেলা দেখা দেয়। মৃত হাজী আহম্মদ আলীর মেয়ের পক্ষ নেন গোগনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফজর আলীর আলী। চেয়ারম্যান ফজর আলী ইউপি মেম্বার রুবেলের ভাই সন্ত্রাসী রবিনকে দায়িত্ব দেন। অপরদিকে মৃত হাজী আহম্মদ আলীর ছেলের পক্ষ নেন দৌলত মেম্বারের লোকজন।
গত ২০ জুন তাদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের এক পর্যায়ে ইউপি মেম্বার রুবেলের ভাই রবিনকে মাথায় ও শরীরে লোহার রড দিয়ে পেটানো হয়। পরে সন্ত্রাসী রবিনকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে নেওয়া হয়েছে থাইল্যান্ডের রাজনধানী ব্যাংককে। এ ঘটনার ওই রাতেই কয়েকজনের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। ২৬ জুন সন্ধ্যায় সন্ত্রাসী রবিনের মৃত্যু হয়েছে একটি উড়ো খবর আসে আসে। তবে তাঁর মৃত্যুর খবর অনেকটাই ধোঁয়াশা ছিল। যদিও ২৭ জুন সকাল থেকে এলাকায় সন্ত্রাসী রবিনের মৃত্যুর খবরে মাইকিং হচ্ছে। এদিকে রাত ৮টায় চর সৈয়দপুর এলাকায় রবিনের অনুসারীরা দৌলত মেম্বারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাথারি কুপিয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এলাকাবাসী দৌলত মেম্বারকে উদ্ধার করে ঢাকায় আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান বলেন, কয়েক দিন আগে বর্তমান ইউপি সদস্য রুবেল হোসেন ও স্থানীয় রানা গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। সাবেক ইউপি সদস্য দৌলত হোসেন ওই রানা গ্রুপের সমর্থক। রাতে দৌলত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় নারায়ণগঞ্জ শহরের দিকে যাচ্ছিলেন। সৈয়দপুর এলাকায় পৌঁছানোর পর একদল দুর্বৃত্ত দৌলতকে মারধর করে। একপর্যায়ে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে দৌলতকে কুপিয়ে সড়কের পাশে ফেলে যায়। পরে স্থানীয় লোকজন দৌলতকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আজগর আলী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর অবস্থার অবনতি হলে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ওসি বলেন, প্রতিপক্ষ রুবেলের লোকজন এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মোহাম্মদ হোসেন, তন্ময় ও মাসুদ নামের ৩ জনকে আটক করা হয়েছে।









Discussion about this post