নারায়ণগঞ্জের তরুণ নাট্যকার দিদারুল ইসলাম চঞ্চল হত্যাকান্ডের ১০ বছরেও রহস্যের জট খোলেনি।
বারবার তদন্তকারী কর্মকর্তা বদল হলেও বিচারহীনতার এই ১০ বছরে এখনো নীরবে কেঁদে চলেছে স্বজনেরা।
বর্তমানে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি তদন্ত করলেও ১০ বছরেও রহস্য উদঘাটন করা যায়নি। এখনো জানা যায়নি কি কারণে চঞ্চলকে হত্যা করা হয়েছিল। কারা ছিল হত্যাকান্ডের নেপথ্যে।
জানা গেছে, ২০১২ সালের ১৬ জুলাই গভীর রাতে বাসা থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয় চঞ্চল। ওই রাত ৩টায় চঞ্চল, তার বন্ধু মীম প্রধান, রাকিব ও শফিক একত্রে নগরীর ২নং রেলগেট এলাকার একটি দোকানে চা-নাশতা খেয়েছিল। নিহত চঞ্চলের মোবাইলে রাত ৩টা ৯ মিনিটে সর্বশেষ কল করেছিল মীম প্রধানের আত্মীয় মেহেদী হাসান রোহিত। সে মীমের সঙ্গে তাকে দেখা করতে বলে। এরপর থেকে চঞ্চল নিখোঁজ হয়।
পরে ১৮ জুলাই শীতলক্ষ্যা নদীতে বন্দর উপজেলার শান্তিনগর এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় হিসেবে চঞ্চলের লাশ উদ্ধার করে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে ফেলে পুলিশ। খবর পেয়ে ১৯ জুলাই লাশের ছবি ও পরিধেয় কাপড় দেখে উদ্ধার করা লাশটি চঞ্চলের বলে শনাক্ত করে নিহতের বড় ভাই জোবায়ের ইসলাম পমেল।
২০১৫ সালের অক্টোবরে চঞ্চল হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত ৫জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশীট) জমা দেয় তদন্তকারী কর্মকর্তা। ওই ৫জন হলো চঞ্চলের বন্ধু মেহেদি হাসান রুহিত, মীম প্রধান, রাকিব, রাশেদ, শফিক। ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি চার্জশীটের বিরুদ্ধে আদালতে না রাজি পিটিশন দায়ের করেন মামলার বাদী খালেদা আক্তার রুবিনা। যিনি চঞ্চলের মা।
পিটিশনে উল্লেখ করা হয়, ভিকটিমের ভাই জোবায়ের ইসলাম পমেল তার ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারা জবানবন্দি কালে জনৈক আফরিন এর নাম বলেন এবং উক্ত আফরিন চঞ্চলের বিপদ সম্পর্কে জ্ঞাত ছিল জবানবন্দিতে জানান। কিন্তু আফরিনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শুধু মাত্র রাকিব ও মিম প্রধানকে গ্রেফতার করলেও বাকী আসামীদের গ্রেফতার ও জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। এছাড়াও এমনকি কোন স্থানে ও কারা চঞ্চলকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে তাও চার্জশিটে উল্লেখ্য করা হয়নি। এছাড়াও চার্জশিটে বিভিন্ন বিষয় ত্রুটিপূর্ণ ছিল। চার্জশীটের বিরুদ্ধে না রাজি পিটিশন দায়ের করে পুনরায় তদন্তের দাবি করা হয়েছিল। ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বাদীর নারাজি পিটিশন আবেদন মঞ্জুর করে মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে ঢাকা মালিবাগ সিআইডিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট অশোক কুমার দত্ত এর আদালত।
দিদারুল ইসলাম চঞ্চলের বড় ভাই জোবায়ের ইসলাম পমেল বলেন, কোন প্রকার তদন্ত ছাড়া, নতুন কোন আসামীকে গ্রেফতার ছাড়া, কারো জবানবন্দি না নিয়ে একটা মনগড়া চার্জশীট দেয়া হয়েছিল। এ চার্জশীট দেখে পরিবারের সবাই হতাশ। যে কারণে আমরা নারাজি দেয়া পরে আদালত সিআইডিকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু গত ১০ বছর ধরে একাধিকবার তদন্তকারী কর্মকর্তা পরিবর্তন হলেও মামলার রহস্যের কোন কুলকিনারা হয়নি।
জোবায়ের ইসলাম পমেল আরো বলেন, ‘আজও পর্যন্ত আমরা হতাশ। বিচার দাবি করা ছাড়া আর কোন কিছু করার উপায় নেই। বিচারহীনতার ১০ বছর হতে চলছে কিন্তু এখন পর্যন্ত ভাইয়ের হত্যার বিচার পেলাম না। মনে হচ্ছে যেন চঞ্চল নামের কাউকে হত্যাই করা হয়নি।’
পমেল আরো জানান, চঞ্চলের রুহের মাগফেরাত কামনায় শুক্রবার শহরের দেওভোগ এলাকার দু’টি মসজিদে বাদ জুম্মা দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। এছাড়া শনিবার বাসায় দোয়া ও মরহুমের কবর জিয়ারত করে দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মোঃ কাইউম জানান, মামলাটির তদন্ত কাজ চলছে। আশা করছি শীঘ্রই হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে সক্ষম হবো।
উল্লেখ্য, নিহত দিদারুল আলম চঞ্চল নারায়ণগঞ্জ সরকারি তোলারাম কলেজের অনার্স বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিল। মাত্র ২০ বছর বয়সেই চঞ্চল একজন সফল নাট্যকার হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। নিখোঁজ হওয়ার মাত্র তিন দিন আগে ২০১২ সালের ১৩ জুলাই মুক্তিযুদ্ধের ৪০ বছর উপলক্ষে ঢাকা শিল্পকলা একাডেমিতে যে ১০০টি মুক্তিযুদ্ধের নাটক মঞ্চস্থ হয় তার মধ্যে চঞ্চলের রচিত ‘বক্তাবলী’ নাটকটিও মঞ্চস্থ হয়। ওই নাটকের জন্য শ্রেষ্ঠ নাট্যকার হিসেবে পুরস্কৃত করা হয় তাকে।









Discussion about this post