বন্দরের লাঙ্গলবন্দে গণধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবারকে গ্রামছাড়া এবং স্বজনদের বাড়ি-ঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আসামীরা জামিনে বের হয়ে আবারও ধর্ষিতার বাড়ি-ঘরে হামলা করে গ্রামছাড়া করার অভিযোগ উঠেছে।
মামলার প্রধান আসামী মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাকসুদের নির্দেশে এই হামলার ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী সাহিদা আক্তার। এমতাবস্থায় তারা বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় বসবাস করেও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
মামলার বাদী সাহিদা আক্তার বলেন, আমার মেয়ে ধর্ষিত হয়েছে অথচ পুলিশ আমাদের সহযোগিতা করছে না। পুলিশ আসামীদের সহযোগিতা করছে। আমরা আমাদের বাড়িতে বসবাস করতে পারছি না। আমার দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত দুই আসামী কারাগারে ছিল। তারা পরশুদিন জামিনে বের হয়ে আসে। এদিকে অভিযুক্ত এক আসামী সড়ক দূর্ঘটনায় মারা যায়। এই ঘটনায় অভিযুক্ত আসামীরা আমাদের বিরুদ্ধে উল্টা মামলা দায়ের করে। সেই মামলায় আমার দুই ছেলে জেল খেটে জামিনে বের হয়ে বাড়িতে আসে। ছেলেদের নিয়ে আমি বাড়িতে আসার দিনই চেয়ারম্যান মাকসুদের নির্দেশে পরশু দিন জামিনে বের হয়ে আসামীরা ও তাদের সহযোগিরা মিলে আমাদের বাড়ি-ঘরে হামলা করে।
মামলার প্রধান আসামী মাকসুদ তার অনুসারীদের নির্দেশ দিয়ে বলে, ‘বাড়ি-ঘর ভাঙচুর করে বাড়িছাড়া করে দে। মামলাই তো করবে এর বেশি কিছু তো করতে পারবে না। পরে কোর্টে গিয়ে মামলা মোকাবেলা করবো নে।’
মামলার বাদী সাহিদা আক্তার আরও বলেন, চেয়ারম্যান মাকসুদসহ তার অনুসারীরা পুলিশকে ম্যানেজ করে এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। উল্টা আমাদেরকে বলে মামলা তুলে নেয়ার জন্য। অন্যথায় আমাদের দেখে নিবে বলে হুমকি দেয় পুলিশ। আমরা কোথায় গেলে বিচার পাবো জানি না।
তিনি আরও বলেন, আমার পরিবারকে গ্রামছাড়া এবং স্বজনদের বাড়ি-ঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে বন্দর মামলা দায়ের করেছিলাম। এই মামলাটির তদন্তভার বন্দর থানার এসআই মো. ফয়সাল আহমেদকে দেয়া হয়। কিন্তু তিনি মামলাটির সঠিকভাবে তদন্ত করছেন না। আসামীদের গ্রেফতার না করার কারণে তারা আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদেরকে প্রতিনিয়ত হুমকি ধমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। দেখা হলেই অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। কিছুদিন পূর্বে আমাকে লাঙ্গলবন্দ বাজারে পেয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করার চেষ্টা করে। পরে ৯৯৯ কল দিয়ে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে। আসামীরা প্রভাবশালী এজন্য তাদের কেউ কিছু করছে না। পুলিশ আমাদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ করছে।
এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছাড়াও পুলিশের অনেক কর্মকর্তা পরিত্যক্ত পেপার মিলের ভিতরে চেয়ারম্যানপুত্র শুভ এর কয়েকটি টর্চার সেলে প্রতিনিয়তঃ আড্ডা করতে দেখা যায় । এই পেপার মিলের পুরো এলাকা যেন এক ভয়ংকর আস্তানা । দীর্ঘদিন দিন যাবৎ এই পরিত্যক্ত সোনালী পেপার মিলের ভিতরে কয়েকটি বিশাল বিশাল টর্চার সেলের ভিডিও চিত্র দেখে সহজেই অনুমান করা যায় ইট বালু ব্যবসার নাম করে কত অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে এই মিলের ভিতরে । মিলের ছাদে, নীচ তলায়, দ্বিতীয় তলায় এবং অসংখ্য গোপন কক্ষে কি পরিমান অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে তা কেউ সহজে অনুমান করতে পারবে না৷ পুরো সোনালী পেপার মিল যেন অপরাধীদের ভয়ংকর আস্তানা । (যার কয়েকটি ভিডিও চিত্র নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর হাতে রয়েছে )
এর আগে গত ২২ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের বন্দরে গণধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবারকে গ্রামছাড়া এবং স্বজনদের বাড়ি-ঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনায় সাহিদা আক্তার বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছিলেন।
মামলার আসামীরা হলেন মুছাপুর ইউপি চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন, আমিনুল শেখ (৪০), ধর্ষক আলমগীর (২৫), তার ভাই আল আমিন (২৮), বাবা শুকুর আলী (৪৮), মা নাসিমা, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ধর্ষক রকির ভাই আসলাম (২২) জিহাদ (৪৫), শরিফ (১৯), আরিফ (২৫), রনি (২১), অনিক (২৩), সুমন (২৫), নিলুফা (৪০) আবু তাহের (৪১) ও শামীম (৪০)।
মামলার বাদী জানিয়েছিলেন, শবেবরাতের রাতে তার মেয়েকে আলমগীর ও তার ফুফাতো ভাই রকি মিলে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় দুজনকে আসামী করে বন্দর থানায় মামলা হয়। ঘটনার দুই দিন পর আসামী রকি পালাতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পুলিশি হেফাজতে মারা যায়। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা হয়।
তিনি জানান, মামলার পর আসামী আলমগীর ও তার পরিবার এবং ইউপি চেয়ারম্যান মাকসুদ হোসেন ও তার ছেলে শুভ হুমকি-ধমকি দিয়ে তাদের বাড়িছাড়া করে। এছাড়া তাদের স্বজনদের পাঁচটি বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট করে।
এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে ২০ এপ্রিল ভিকটিম পরিবারের পক্ষে এক আইনজীবী নারায়ণগঞ্জ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাহাঙ্গীর আলমের আদালতে একটি পিটিশন মামলার আবেদন করেন।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জবানবন্দি ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত তার অভিযোগ থানায় এফআইআর হিসেবে গণ্য করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বন্দর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। আদালতের নির্দেশে থানায় মামলাটি রুজু করা হয়েছিল।
নারায়ণগঞ্জ জেলা দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী মোস্তাফিজুর রহমান খোকন বলেছিলেন, গণধর্ষণ মামলার ২ নম্বর আসামি রকি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়। এ বিষয়ে ধর্ষণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মাহবুব আলম আদালতকে প্রতিবেদন আকারে অবগত করেছেন। অপমৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা রুজু করা ক্ষমতার অপব্যবহার ও হয়রানিমূলক। একটি সাজানো মামলায় ধর্ষণের শিকার কিশোরীর পরিবার ও স্বজনদের গ্রামছাড়া করে সর্বস্ব লুটে নেয় আসামীরা; যা দুঃখজনক।
বর্তমানে এই মামলার সকল আসামীরাই জামিনে রয়েছেন। ভুক্তভোগী ধর্ষিতার স্বজনদের অভিযোগ ধর্ষণ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর মাহবুব আলম তাদের সহযোগিতা না করে বরং আসামীদের সহযোগিতা করছেন। মামলা তুলে নেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে।









Discussion about this post