বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার, গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া (৭৬) আর নেই। মরণব্যাধি ক্যান্সারের কাছে তিনি হার মেনেছেন। নিউইয়র্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় (বাংলাদেশ সময় রাত আড়াইটা) মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন
ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুর খবরটি জানিয়েছেন নিউইয়র্কে তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল এস এম নাজমুল হাসান।
ডা. মাসুদুল হাসান জানান, ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য গত বছরের অক্টোবরে নিউইয়র্কে আসেন ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনি ম্যানহাটনের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নিচ্ছিলেন। মাউন্ট
সিনাই হাসপাতালে তাঁর প্রথম দফা সফল অস্ত্রোপচার হয়। এরপর তিনি বাসায় ফিরে যান। সপ্তাহখানেক পর আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে একই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাঁকে। দ্বিতীয় দফা অস্ত্রোপচারের পর তাকে হাসপাতালের আইসিইউতে রাখা হয়। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাঁকে আইসিউ থেকে সিসিইউতে নেওয়া হয়েছিল।
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বী মিয়া
তিনি জানান, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া সারকোমা ক্যান্সারে ভুগছিলেন। সারকোমা হচ্ছে পাকস্থলীর টিউমার। এটি খুব দ্রত বড় হয় এবং দ্রুত অপারেশন করা না হলে রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। মাউন্ট সেনাই
হাসপাতালে অপারেশন কওে ডেপুটি স্পিকারের পাকস্থলী থেকে সোয়া তিন কেজি ওজনের একটি টিউমার অপসারণ করা হয়।
এর আগে ভারতে আড়াই কেজি ওজনের টিউমার অপসারণ করা হয়েছিল। হাসপাতালে তাঁর কেমোথেরাপি চলছিল। তিনদিন আগে হঠাৎ তাঁর কিডনি অচল হয়ে যায়। চিকিৎসকেরা ডায়ালাইসিসের চেষ্টা করেন। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তা আর করা হয়নি। ২২ জুলাই শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৪টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
ডেপুটি স্পিকারের বড় মেয়ে রিতা বর্তমানে নিউইয়র্কে অবস্থান করছেন। মরদেহ বাংলাদেশে নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে। এর আগে নিউইয়র্কে মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। কখন, কোথায় জানাজা হবে তা পরিবারের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেবেন।
বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৪৬ সালের ১৫ এপ্রিল গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার গটিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার ফয়জার রহমান এবং মাতার নাম হামিদুন নেছা। ১৯৬১ সালে তিনি গাইবান্ধা কলেজে ভর্তি হন। তিনি বিএ এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
পেশায় আইনজীবী ফজলে রাব্বী মিয়া রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত আছেন। ব্যক্তিজীবনে তিনি একজন আইনজীবী। ১৯৬৮ সালে তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সনদ লাভ করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সদস্য হন।
জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বী মিয়া
১৯৫৮ সালে রাজনীতিতে আসেন ফজলে রাব্বী মিয়া। তখন তিনি অষ্টম শ্রেণীতে পড়তেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান পাকিস্তানে মার্শাল ল’ চালু করেছিলেন। সে সময় ফজলে রাব্বীর চাচা উক্ত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। চাচার মাধ্যমে তিনি মার্শাল ল’ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পরেন। এভাবেই তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬২-৬৩ সালে শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টের বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন করেছিলেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফজলে রাব্বী মিয়া মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তিনি ১১ নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বৈশ্বিক জনমত গড়ে তুলতে তিনি কাজ করেছেন।
ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন।
২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯০ সালে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি। দশম সংসদ থেকে তিনি ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ফজলে রাব্বী মিয়ার স্ত্রীর নাম আনোয়ারা রাব্বী, যিনি ২০২০ সালের ২৬ মে সকাল ১১টা ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।











Discussion about this post