রাজনীতি পদ পদবী ব্যবহারসহ টেলিভিশন ও গাড়ির পার্টসের ব্যবসার অন্তরালে তাঁদের ছিলো নানা অপরাধ কর্মকন্ড । আড়ালে গড়ে তোলা হয় মাদকদ্রব্য বিপণন নেটওয়ার্ক। শুল্ক ফাঁকি দিয়ে আমদানির পর ধরা পড়েছে চক্রটির ৩৭ কোটি টাকা মূল্যের বিদেশি মদ ও কোটি টাকার দেশি–বিদেশি মুদ্রা। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে । এই অপরাধে ষোলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলামের জড়িত রয়েছে বলেও প্রথমিকভাবে ধারণা করেছে গোয়েন্দা সংস্থাসহ দূদক । চলছে চুলচেরা তদন্ত ।
গার্মেন্টস পণ্য ও গাড়ির পার্টস ব্যবসার আড়ালে ভুয়া তথ্য দিয়ে মদ আমদানিতে জড়িত মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর ইউনিয়নের চিহ্নিত অপরাধী চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম আত্মগোপন করেছেন। র্যাব তাকে খুঁজছে। তিনি শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
আজিজুল ইসলাম এরই মধ্যে দেশ ছেড়ে দুবাই পালিয়েছেন বলেও চাউর হয়েছে । তার ছেলে আব্দুল আহাদ, নাজমুল মোল্লা ও এক সহযোগী সাইফুল ইসলাম ওরফে সাইফুল র্যাবের হাতে আটক হয়েছেন। জব্দ করা হয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার বোতল বিদেশি মদ।
একই সাথে ষোলঘর ইউপি চেয়ারম্যান ও শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য আজিজুল ইসলাম নিজেকে রক্ষা করতে এবং দলের যাতে সুণাম নষ্ট না হয় এমন দোহাই দিয়ে তার নাম মামলায় যাতে না আসে সে জন্য দৌড়ঝাপ চালাচ্ছে বিদেশ থেকেই
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে র্যাব-১১’র অভিযানে বিপুল পরিমান অবৈধ বিদেশী মদ উদ্ধারের ঘটনায় মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার ষোলঘর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলামের পুত্র আব্দুল আহাদ গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এর আগে শনিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে র্যাব-১১ এর একটি দল ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলামের ছেলে নাজমুল মোল্লা ও তার সহযোগী সাইফুল ইসলামকে আটক করে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিমানবন্দর এলাকা থেকে আব্দুল আহাদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি এ চক্রের অন্যতম হোতা। তার বাবা পেছন থেকে কলকাঠি নাড়েন। প্রায় এক বছর ধরে তারা অবৈধভাবে মদ এনে বিভিন্ন বার-রেস্টেুরেন্টে বিক্রি করে আসছিলেন। তাদের মদ বিক্রি করার কোনো লাইসেন্সও নেই। শুক্রবার দিবাগত রাতে অভিযানে জব্দ হওয়ার মদের মূল্য প্রাথমিক হিসেবে টাকার অংকে ৩১ কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ভ্যাটসহ যার মূল্য দাঁড়ায় ৩৬ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ টিপর্দি সালাউদ্দিনের পার্কিং স্ট্যান্ডের সামনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর চেকপোস্ট বসায় র্যাব। এসময় দুটি কনটেইনারবাহী ট্রেইলার থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩৬ হাজার ৮১৬ বোতল বিদেশি মদ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় উপজেলাব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এর আগে গেল শনিবার ষোলঘর ইউনিয়নের ভূইচিত্র এলাকার আলী আক্কাস মোল্লার পুত্র নাজমুল মোল্লা ও পার্শ্ববর্তী লৌহজং উপজেলার নাগেরহাট গ্রামের মৃত জয়নুল আবেদীনের পুত্র সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
এ ঘটনায় আজ রোববার বিকালে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, সিঅ্যান্ডএফের যোগসাজশের মাধ্যমে মাদক আমদানি কার্যক্রম চালাত চক্রটি। মাদক আমদানির ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন কোম্পানির কাগজপত্র ব্যবহার করতেন।
অবৈধ মাদকদ্রব্যের চালান আমদানি কারবারের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে আহাদের ঢাকার ওয়ারীর বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নগদ দেশি-বিদেশি মুদ্রা উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীটি। এর মধ্যে রয়েছে ৯৮ লাখ ১৯ হাজার ৫০০ টাকা, নেপালি রুপি ১৫ হাজার ৯৩৫, ভারতীয় রুপি ২০ হাজার ১৪৫, চায়না ইওয়ান ১১ হাজার ৪৪৩, ইউরো ৪ হাজার ২৫৫, থাই বার্থ ৭ হাজার ৪৪০, সিংগাপুর ডলার ৯ এবং ১৫ মালয়েশিয়ান রিঙ্গিত।
ষোলঘর এলাকার নাজমুলের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি।
ষোলঘর ইউপি চেয়ারম্যান ও শ্রীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক উপ কমিটির সদস্য আজিজুল ইসলাম ও তার ছেলের মাদকের সাথে সম্পৃক্ততার ঘটনাটি জনসম্মূখে উঠে আসায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
আজিজুল ইসলাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ লাভের আশায় দীর্ঘ সময় ধরে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন।
একটি সূত্র জানায়, চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী মায়া ইসলাম ও তিন পুত্র মিজানুর রহমান আশিক, আব্দুল আহাদ, আব্দুল ইহাদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন করার অভিযোগ রয়েছে দুদকে।
এছাড়াও ষোলঘর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের গত ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন চলাকালীন সময়ে আজিজুল ইসলামের ছোট ভাই মাহি লাইসেন্সকৃত অস্ত্র দেখিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রর্দশন করে।
এলাকায় নানা বিতর্কের সৃষ্টি করে চেয়ারম্যান আজিজুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে সংবাদের শিরোনাম হন।
আটকরা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, গার্মেন্টস পণ্য ও গাড়ির পার্টস ব্যবসার আড়ালে অবৈধ মাদকদ্রব্য বিপণন নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছেন তারা। অবৈধ মাদক বিদেশ থেকে আনার পরে মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর, রাজধানীর বংশাল ও ওয়ারীতে ওয়্যার হাউজে রাখতেন। পরে সুবিধাজনক সময়ে এসব অবৈধ মাদক বিপণন করতেন। ক্ষেত্রবিশেষে ট্রাক ও কনটেইনার থেকে সরাসরি ক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করা হতো।









Discussion about this post