শিমরাইল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সভাপতিকে দিয়ে জোড় করে সংবাদের প্রতিবাদ, চাঁদাবাজ জজের উপরে ক্ষুদ্ব ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মালিকরা । পত্রিকায় এমন প্রতিবাদ দেয়ার ঘটনায় একজন পুলিশ কর্মকর্তা নেপথ্যে থেকে পরামর্শ দেয় কুখ্যাত অপরাধী জজ মিয়াকে
সিদ্ধিরগঞ্জ প্রতিনিধি :
সিদ্ধিরগঞ্জে ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালনের জন্য নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের ছোট ভাই নুরুজ্জামান ওরফে জজ মিয়া শিমরাইল প্রতিটি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিকদের ডেকে নিয়ে হুমকি দিয়ে ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা তুলছেন এমন অভিযোগ। শোক দিবসকে পুঁজি করে পাঁচ শতাধিক ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মালিকদের কাছ থেকে কোটি টাকা চাঁদাবাজির মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন তিনি।
এরই মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল মোড়ে বিশাল আকৃতির একটি প্যান্ডেল করা হয়েছে যেখানে শোক দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।
১৫ আগষ্ট জাতীয় শোক দিবসকে কেন্দ্র করে এমন চাঁদাবাজির নিয়ে দৈনিক জাতীয় ও স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় গত (১১আগস্ট) সংবাদ প্রকাশ হয়।
এই সংবাদের পরিপেক্ষিতে নারায়ণগঞ্জ ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ আব্দুর রশিদ শিকদারকে ভয়-ভীতি হুমকি-দুমকি দিয়ে সমিতির প্যাডের জোড় করে সাক্ষার করান চাঁদাবাজ জজ মিয়া।
এই নিয়ে চাঁদাবাজ জজের উপরে ক্ষুদ্ব ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির সাধারন মালিকরা। নারায়ণগঞ্জ ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ আব্দুর রশিদ শিকদার চাঁদা আদায়ের কথা অস্বীকার করে নাই স্বীকার করেই চাঁদাবাজ জজের পক্ষে নিয়ে সংবাদের প্রতিবাদ দিয়েছেন। সাধারন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন আমাদের এখানে ট্রান্সপোর্ট ব্যাবসা করা দায় হয়ে পড়েছে। আর এখানে ট্রান্সপোর্ট ব্যবসা করতে হলে রিতিমতো চাঁদা দিয়ে করতে হয়। চাঁদা দিলে দোষ না দিলেও দোষ আমরা আছি চাঁদাবাজ জজের আতঙ্কে।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালনের জন্য জজ মিয়া নামে এক চাঁদাবাজ বিভিন্ন সাধারন ট্রান্সপোর্ট মালিকের কাছে থেকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে মোটা অংঙ্কের চাঁদা উত্তলন করেছে। কিন্তু কোন ট্রান্সপোর্ট মালিক আমার কাছে এখনো কেউ এমন অভিযোগ নিয়ে আসেনি। আমি লোক মারফত শুনতে পেরেছি চাঁদাবাজ জজ সাধারন ট্রান্সপোর্ট মালিকদের তার আফিসে ডেকে নিয়ে তাদের কাছে থেকে ২০ হাজার ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছে। এই চাাঁদাবাজির বিষয়ে জজকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি এড়িয়ে অন্য প্রসঙ্গে কথা বলেন আমার সাথে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, কয়েক জায়গায় এমন চাঁদা দাবীর ঘটনা ঘটেছে। তবে কেউ টাকা দেয়নি। আমরাও বিষয়টি শুনেছি এবং তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের একটি টিম সেখানে পাঠাই। তবে এ বিষয়ে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ জানায়নি ।
উল্লেখ যে, ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীদের জজ মিয়ার অফিসে ডেকে নিয়ে বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান সাহেবের নির্দেশ বড় করে ১৫ আগষ্ট শোক দিবস অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। আর এজন্য ৩৬৫ ডেক বিরিয়ানির আয়োজন করা হবে। জজ মিয়া আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়ন শিমরাইল শাখার সভাপতি। ঐ ট্রাকচালক ইউনিয়নে দীর্ঘদিন সভাপতি ছিলেন সাত খুন মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ আব্দুর রশিদ জানান, গত ৮ আগষ্ট দুপুরে জজ মিয়ার সাঙ্গ-পাঙ্গরা ফোন করে আন্তঃ জেলা মালিক সমিতির অফিসে যেতে বলেন। আমি তার অফিসে না যাওয়ায় বিপুল সংখ্যক লোকজন নিয়ে আমার অফিসে জজ মিয়া যায়। তখন আমার অফিসের বাইরে দশ পনের জন ছিল। চার-পাঁচজনের সাথে জজ মিয়া আমার অফিসে প্রবেশ করেই বলেন, এখানে ব্যবসা করবেন, না চলে যাবেন। এখানে ব্যবসা করতে হলে আমি যেভাবে বলব, সেভাবে আপনাকে চলতে হবে। কাল লোকজন ফোন করে আপনাকে ডেকেছিল আপনি আমার অফিসে কেন যাননি। এ ঘটনার পর সমগ্র ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার নূর হোসেনের ভাই জজ মিয়ার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সাধারণ ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির কয়েকজন মালিকের সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, গত নাসিক নির্বাচনে নূর হোসেনের অপর ছোট ভাই নুরুদ্দিন মিয়া কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পরপরই আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের কার্যালয়ের অফিস নির্মান করেন জজ মিয়া। এসময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় চাঁদাবাজির আশঙ্কা প্রকাশ করে সংবাদ প্রকাশ করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।









Discussion about this post