পুলিশ পিটিয়ে দেশে ছেড়ে দেয়া সেই কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী এখন নারায়ণগঞ্জ জাতীয় পার্টির নেতা।
কখনো আওয়ামীলীগ নেতার পিছনে আবার কখনো জেলা বিএনপির এক নেতার শেল্টারে দীর্ঘদিন মাদক ব্যবসা করে আসলেও শেষ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সদর থানার পুলিশের উপর হামলা করে আসামী ছিনিয়ে নিয়ে ক্রসফায়ারের ভয়ে দেশ ছেড়ে কলকাতায় পাড়ি জমায় কুখ্যাত এই অপরাধী। তার অবস্থান এখন জাতীয় পার্টির নেতা ।
পরিস্থিতি মাদক ব্যবসায়ীদের অনূকুলে আসার পর দেশে ফিরে এসে প্রভাবশালী একজন সংসদ সদস্যের আত্মীয়ের মাধ্যমে থানার পুলিশকে মধ্যরাতে ম্যানেজ করে দেশে ফিরে এসে গত আড়াই বছর একেবারেই বিনা বাধায় মাদকের পাইকারী ও খুচরা কারবার প্রকাশ্যেই চালিয়ে যাচ্ছে মাদকের ডন হিসেবে পুরো নগরীতে পরিচিত সালাউদ্দিন বিটুর সাম্রাজ্য। এই সালাউদ্দিন বিটুর কাছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন নারী ও পুরুষ কাউন্সিলরও ধর্ণা দেন বলে ব্যাপক প্রচার রয়েছে।
জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে যখন গতি আনার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । নতুন করে গঠন করা জেলা ও মহানগরের কমিটি সেখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে শহরের এই কুখ্রাত দোর্দন্ড মাদক বিক্রেতা সেই সালাউদ্দিন বিটু কে দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক পদ। সে শহরের দক্ষিণাঞ্চলের মাদকের রীতিমত ডন হিসেবেই পরিচিত। এই সালাউদ্দিন বিটুকে রাখা হয়েছে মহানগর জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে।
এরই মধ্যে তিনি সেই পদ পেয়ে সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন। জুড়ে দিচ্ছেন এমপি সেলিম ওসমান থেকে শুরু করে জাতীয় নেতাদের ছবিও। এসব দেখে বিষ্মিত এলাকার লোকজন। কেআভে ফেটে পরছে পুরো নিতাইগঞ্জের সাধারণ মানুষ । যারা কোন না কোন ভাবেই জিম্মি কয়েকজন স্থানীয় কাউন্সলর / নারী কাউন্সিলর ও মাদকে ব্যবসাযীদের কাছে ।
জানা গেছে, মাদকের বড় বড় চালান সহ একাধিকবার গ্রেফতার হয়েও আইনের ফাঁক দিয়ে বার বার বেরিয়ে এসেছে বিটু। গড়ে তুলেছে মাদকের বিশাল সাম্রাজ্য। নেপথ্যে রয়েছে ক্ষমতাসীন দলের বড় মিয়া / ছোট মিয়ার ঘনিষ্ট আত্মীয়সহ দুই কাউন্সিলর। তাই পুুলিশ প্রশাসনকে ড্যামকেয়ার করে চলেন এই মাদক ব্যবসায়ী বিটু।
সবশেষ গত ১৬ জানুয়ারী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের ভোটের দুইদিন আগে ১৪ জানুয়ারী বিটুকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। প্রায় ১০ দিন পর ২৪ জানুয়ারী সে জামিনে মুক্তি পায়।

গত ৩ ডিসেম্বর সদর মডেল থানার ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠানে ১৮ নং ওয়ার্ডের ওই সময়ের কাউন্সিলর মো. কবির হোসেনও পুলিশ সুপারের কাছ থেকে সালাউদ্দিন বিটুর থেকে ১৮নং ওয়ার্ডবাসী মাদক থেকে নিস্তার চাচ্ছে উল্লেখ করে বলেন, আমাদের এলাকা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। আমার ১৮ নং ওয়ার্ডের সীমানা যেখানে শেষ সেখানে গোগনগর ইউনিয়নের শুরু আবার আমার যেখান থেকে শুরু সেখানে গোগনগর ইউনিয়নের সীমানা শেষ।আর এই এলাকাই হচ্ছে মাদকের সয়লাব। আর এই দুই এলাকায় তার মাদকের সয়লাব সে হচ্ছে সালাউদ্দিন বিটু। অনেক সময় গ্রেফতার হয়েছে। এখন আছে বিভিন্ন প্রার্থীর সাথে আতাত করছে।
এর আগে গত বছরের ৪ মার্চ রাত ১০টায় তামাকপট্টি এলাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের একটি টিম বিটুকে আটকের নাটক মঞ্চায়ন করে। এরপর সদর থানা পুলিশ এই নাটাকের অংশ হিসেবে বিটু কে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর পর ওই দিনই আদালত জামিন দেয় এই তারকাখ্যাত অপরাধীকে ।
সে ওই এলাকার আবিদ আলী চৌধুরী ওরফে হাবলু চৌধুরীর ছেলে। অভিযানের সময়ে বিটুর সঙ্গে কিছু পাওয়া যায়নি জানানো হয়। ৫ মার্চ দুপুরে নারায়ণগঞ্জ আদালতে শুনানীতে বিটুর জামিন মঞ্জুর হয়।
এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনের আগে একজন এমপি প্রার্থীর মঞ্চে দেখা যায় বিটুকে। আর তখনই সে বেপরোয়া হয়ে উঠে।
২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে ৫০০ পিস ইয়াবাসহ শহরের নিতাইগঞ্জ তামাকপট্টি এলাকার শুক্কুর মিয়ার রিকশার গ্যারেজ থেকে ডিবির হাতে গ্রেপ্তার হয় বিটু। একই বছরের ১৯ আগস্ট বিটুকে সাড়ে ৩০০ পিস ইয়াবাসহ তামাকপট্টি থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। বিটু এর আগেও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কদমতলী থানায় সাড়ে ৫০০ পিস ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার হয়।
সালাউদ্দিন বিটুর সেকেন্ড ইন কমান্ড বুইট্টা সুজন, শাহীন ও আরিফকে ৬০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেটসহ আটক করে সদর মডেল থানা পুলিশ। এরপর গা-ঢাকা দেয় মাদক বিক্রেতা সালাউদ্দিন বিটু। পরবর্তীতে তিনি আবারো এলাকাতে ফিরে আসে বিটু ও তার পুরো বাহিনী।
দীর্ঘদিন যাবৎ পুলিশের কোন মাদক বিরোধী অভিযান না থাকায় মাদকের ভয়াবহতা মারাত্মক আকার ধারণ করে । আর এই বিনা বাধায় মাদক ব্যবসার কারণে এরই মধ্যে কোটিপটিও বনে যায় বিটু । মাদকের এই কোটি টাকার প্রভাবেই জাতীয় পার্টিতে অবস্থান করে নিয়েছেন বলে জোড় গুঞ্জন রয়েছে বিটু বাহিনীর সকলের মুখে ।









Discussion about this post