নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের ২০ শয্যা বিশিষ্ট দুটি সরকারি হাসপাতাল কোথায় ? কোন অস্তিত্ব নাই এই দুটি হাসপাতালের । অথচ বেতন ভাতা নিচ্ছেন চিকিৎসকগণ ! হতবাক হবার মতোই তথ্য ।
এমন কান্ডে নারায়ণগঞ্জবাসী হতবাক হলেও তাতে কার কি আসে যায় জেলায় দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের । সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেন নারায়ণগঞ্জ তো মগের মুল্লুক । এখানে যা খুশি তাই করতে পারে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা ।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতলের চিত্র তুলে ধরে অনেকেই বলেছেন, সকালে হাসপাতালে সকল ডক্তার উপস্থিত হয়ে তাদের কমিশন বাণিজ্য করলেও দুপুরের পর থেকে জরুরী বিভাগের একজন চিকিৎসক থাকলেও ওই চিকিৎসক ম্যাটস এর শিক্ষানবীস ছাত্রদের কাছে জরুরী বিভাগের দায়িত্ব দিয়ে ফাকিবাজিতে ভ্যস্ত থকেন । এমন চিত্র নিত্য দিনের। আর রাতে সরকারী এই হাসপাতালে কোন ডাক্তার, নার্স, ওয়ার্ড বয়কে আর খুজেও পাওয়া যায় না । ডাক্তার ও নার্স (সেবক /ব্রাদার) থাকেন ঘুমিয়ে। ওয়ার্ড বয় ও চলে যান হাসপাতালে বাইরে।
আর জেলার একমাত্র সদর হাসপাতালের পুরো দাযিত্বে থাকেন ম্যাটস এর কয়েকজন শিক্ষানবীস ছাত্র । একেইভাবে একজন আউটসোর্সিংয়ের অদক্ষ ব্যাক্তি নানা কান্ডে থাকেন লিপ্ত। আর হাসপাতালে লেবার ওয়ার্ড, গাইনী বিভাগ, সার্জারী কিংবা মেডিসিন বিভাগে কোন চিকিৎসক বছরের পর বছর খুজেও পাওয়া যায় নাই । আর এই সুযোগে দালাল চক্র সক্রিয় থাকে মারাত্মকভাবে। এমন অদ্ভুদ কান্ডের সকল খবর হাসপাতালের আরএমও এবং জেলার সিভিল সার্জন খুব ভালো মতো জানা থাকলেও নিজেদের নানা দূর্ভলতার কারণে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেন না জেনারেল হাসপাতালের দায়িত্বে অবহেরাকারীদের বিরুদ্ধে । এই হচ্ছে হাসপাতালের আজব চিত্র ।
এমন কান্ড ছাড়াও জমি অধিগ্রহণ জটিলতার দোহাই দিয়ে প্রায় ১৫ বছর ধরে আটকে আছে এমন হাসপাতালের নির্মাণ কাজ। এমন প্রচার চালায় কর্তপক্ষ। ফলে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এ দুটি থানায় বসবাসরত প্রায় ১৫ লাখের বেশি মানুষ। অথচ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকায় নাম থাকায় অদৃশ্য ওই হাসপাতাল দুটিতে দীর্ঘদিন ধরে সাতজন চিকিৎসককে নিয়োগ দিয়ে রাখা হয়েছে।
এদিকে, অদৃশ্য এই দুটি হাসপাতাল ঠিক কবে নাগাদ নির্মাণ হবে কিংবা আদৌ হবে কি না এমন প্রশ্নের সঠিক জবাবও কারও জানা নেই।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৬ সালের ৪ জুন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের (উন্নয়ন-২ শাখা) তৎকালীন সিনিয়র সহকারী সচিব আবেদা আক্তারের সই করা এক চিঠিতে নারায়ণগঞ্জ সিভিল সার্জনকে ২০ শয্যা হাসপাতাল নির্মাণে স্থান নির্বাচন করে (কমপক্ষে তিন একর) জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে একটি প্রস্তাব পাঠানোর নির্দেশ দেন। ২০০৭ সালের ১৭ জুলাই এক আদেশে নারায়ণগঞ্জ জেলার ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে দুটি ২০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের জন্য অনুমোদন দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপ-সচিব আবদুল্লাহ আল বাকী।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সূত্রমতে জানা যায়, ২০১০ সালে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে দুটি ২০ বিশিষ্ট সরকারি হাসপাতাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এজন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জায়গাও নির্ধারণ করে। তবে জমি অধিগ্রহণসহ নানা কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। হাসপাতাল নির্মাণ না হলেও সেই দুটি হাসপাতালের নামে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সাতজন চিকিৎসক।
তারা হলেন, ফতুল্লা ২০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মধুছন্দা হাজরা মৌ, মেডিকেল অফিসার ডা. আশরাফুল আলম, জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. মিরানা জাহান, জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেস্থেসিওলজি) ডা. মো. আনোয়ার হোসেন খান এবং সিদ্ধিরগঞ্জ ২০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. ফাহিম হাসান, মেডিকেল অফিসার ডা. রাফিয়া মাসুদ ও জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি) ডা. ফারজানা রহমান।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শিল্পাঞ্চলখ্যাত নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসন এলাকার বাসিন্দারা স্বাধীনতার এত বছর পরও পাননি কোনো সরকারি হাসপাতাল। তাই তাদের নির্ভর করতে হয় প্রাইভেট চিকিৎসার ওপর। আর উন্নত চিকিৎসার জন্য ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জবাসীকে ছুটতে হয় শহর অভিমুখে, নয়তো রাজধানীতে।
ফারিয়া সুলতানা পেশায় একজন চাকরিজীবী। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মা-বাবাকে নিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জে বসবাস করছেন। কিছুদিন আগে হঠাৎ তার বাবা হার্ট অ্যাটাক করেন। ওই মুহূর্তে তাকে দ্রুত সরকারি খানপুর হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে রাস্তায় তীব্র যানজটের ফলে তার বাবাকে হাসপাতালে নিতে বেশ দেরি হয়। ডাক্তার তার বাবার অবস্থা দেখে জানান, আরেকটু দেরি হলে তার বাবাকে বাঁচানো সম্ভব হতো না। নিজ এলাকায় কোনো সরকারি হাসপাতাল না থাকায় অনেকেই জরুরি চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।

জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অনিক বিশ্বাস বলেন, এই দুটি হাসপাতাল অনেক আগেই অনুমোদন পেয়েছে। অনেক সিভিল সার্জন এর মধ্যে চলে গেলো কিন্তু কেউই এর সুরাহা করতে পারলো না। এই হাসপাতাল দুটি কেন নির্মাণ হচ্ছে না তা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিংবা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে। ১৫ বছর হয়ে গেলেও কেন হাসপাতাল দুটি নির্মাণ হচ্ছে না তা আমিও বলতে পারছি না।
নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মশিউর রহমান বলেন, এই দুটি হাসপাতালে যে সাতজন চিকিৎসক নিয়োগ রয়েছেন তারা খানপুর, ভিক্টোরিয়া হাসপাতালসহ বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে (সংযুক্ত) দায়িত্ব পালন করছেন। যেহেতু তারা নিয়মিত বেতন পান তাই আমরা তাদের বসিয়ে না রেখে বিভিন্ন হাসপাতালে যুক্ত করে দিয়েছি।
তবে ১৫ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও হাসপাতাল দুটি কেন নির্মাণ হচ্ছে না এর কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেনি। ডা. মশিউর বলেন, এ বিষয়ে আমরা কয়েকবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি কিন্তু তারা রেসপন্স করছে না। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যেন হাসপাতাল দুটি অচিরেই নির্মাণ করা হয়। তাহলে নারায়ণগঞ্জে যে দুটি সরকারি হাসপাতাল রয়েছে এগুলোর ওপর রোগীদের চাপ কমবে। ঘনবসতিপূর্ণ ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে কোনো সরকারি হাসপাতাল না থাকায় তারা জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। সিভিল সার্জন জানালে বিষয়টি দেখবো।









Discussion about this post