ভয়ে ভয়ে দিন কাটছে সেই সংখ্যালঘু পরিবারের। তাদের পাশে নেই হিন্দু নেতারাও। এই কারনে ভয় যেন তাদের পিছে আরো তাড়া করে বেড়াচ্ছে। কখন কি হয় সেই শংকায় ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে উঠে দিনাতিপাত করছে এই সংখ্যালঘু পরিবারের ।
“স্বামী হারাইছি সেই শোক না কাটতেই এখন ওই মামলা তুলে নিতে একদিকে চেয়ারম্যান, মেম্বার, পুলিশের নানা তদ্বির, আর সাংবাদিকদের অনেকেই তো নানাভাবে আপত্তিকর মন্তব্য করেই যাচ্ছে । একই সাথে আকার ঈঙ্গিতে চোখ রাঙানী তো আছেই । আমার স্বামী হারাইলাম, মামলা হইলো, পুলিশ কি করছে ? নেতারা কি করলো ? আমাদের পাশে না পুলিশ আছে , নাকি আমাদের হিন্দু নেতারা আছে, নাকি কোন জনপ্রতিনিধি আইসা আমাদের শান্তনা দিচ্ছে । আমাদের পঞ্চায়েতের মসজিদের কোনে কোন নেতাসহ অনেকেই কিছু টাকা দিয়ে আমাদের সাথে ওই খুনি মামুনের বিরুদ্ধে মামলা তুইল্রা নিতে নানাভাবে আপত্তিকর মন্তব্য কইরাই যাইতেছে । আর ঘর থেইক্কা বাইরে গেলেই ওই খুন মামুনের পরিবারের লোকজনের চোখ রাঙানী আর সইতে পারি না । আমরা অসহায় । কি করমু এখন ?
মামুনের মতো এমন পোলাপাইন যারে আমার স্বামী (প্রাণ বল্লব) কোলে নিয়ে বড় করছে সেই মামুন আমার স্বামীরে মাইরা ফালাইলো। তারে তেল ছাড়া কড়া কইরা পরোটা ভাইজ্জা দিতে দেরী হওয়ায় এই ৭০ বছরের বুড়া লোকটারে এই বয়সে কি মাইরটাই না মারলো।
আমি স্বামী হারাইলাম । আর আমার দুই সন্তান, মেয়ে, মেয়ের জামাই ,নাতি আর স্বামীর ভিটি টিও হারাইতে চাই না। আমি কইয়া দিছি । মামুন আমার স্বামীরে মারইরা ফালাইলো কেউ যখন আমাদের পাশে দাড়াইলো না । আমরা আর মামলা চালামু না । মামলা তুইল্লা নিমু।
এভাবেই সবদি মন্দিরে দাঁড়িয়ে চোখের জলে ভেজা কন্ঠে মন্তব্য করেন নিহত প্রাণ বল্লব সরকারের স্ত্রী বিধবা পুস্প রানী সরকার।
ঘটনার বিবণে প্রকাশ, ২৩ আগষ্ট (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ৮টায় নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার সাবদি – দীঘলদী ঝাড়তলা অটো স্ট্যান্ডের সামনে বৃদ্ধ প্রাণ বল্লব সরকারের হোটেলে নাস্তা নিতে আসেন একই এলাকার মামুন মিয়ার স্ত্রী রেশমা আক্তার । হোটেলে কাস্টমার বেশী থাকায় নাস্তা দিতে দেরী হবে বলার পর রেশমা আক্তার বাড়ি গিয়ে তার স্বামী মামুন মিয়াকে পাঠায়। মামুন মিয়া হোটেলে এসেই কোন কথা না জিজ্ঞেস করেই অনেকের সামনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, চর থাপ্পর, লাথি ঘুষি দিয়ে শাটের কলার ধরে বৃদ্ধ প্রাণ বল্লব সরকারকে মারধর করে । এবং এলাকা ছাড়া করার হুমকিও দেয় মামুন মিয়া। এমন ঘটনা সহ্য করতে না পেরে সাথে সাথেই বৃদ্ধ প্রাণ বল্লব সরকার হোটেলে বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্ট করে বলে বলে মারফত শুনতে পেয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করে নিহতের পরিবার।
প্রাণ বল্লব সরকারের (৬৫) লাশ কোন অবস্থাতেই যাতে ময়নাতদন্ত না হয় সে লক্ষেও ব্যাপক চেষ্টা চালিয়ে বর্থ হয় মহাধূর্ত মামুন ও তার সহযোগি চক্র। পরবর্তীতে মামলা দায়ের হলেও এই মামরাকে দায়সারা মামলা বলে মন্তব্য করেছেন বন্দর উপজেলার সাবদী এলাকার অনেকেই ।
এমন ঘটনার পর ২৮ আগস্ট (রোববার ) বিকেলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ব্যাপক চাপের মধ্যে ফেলে সাবদী মন্দিরে বসে প্রাণ বল্লব সরকারের (৬৫) হত্যার মীমাংশা করতে প্রায় শতাধিক সন্ত্রাসীদের জড়ো করে মামুন মিয়া । তখন মন্দিরে দাঁড়িয়ে বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি দীপক সাহা সকলের উদ্দেশ্যে সাফ জানিয়ে দেন এই ঘটনা কোন অবস্থাতেই আমরা এমন স্পর্শকাতর মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনা মীমাংশা করতে পারবো না।এমন ঘোষনার পর ঘাতক ও নানা অপরাধের হোতা মামুন মিয়ার ভাই রোমান মিয়া, জামান মিয়া ও চাচাতো ভাই বাসেদ মিয়া নিহত প্রাণ বল্লব সরকারের পরিবারসহ উপস্থিত সকলের সামনেই হুমকি দিয়ে বলেন, ঘটনা মীমংশা আগে হউক তারপরে দেখাবো কোন .(……. অকথ্য গালিগালাজ……..) এই সাবদীতে থাকতে পারে।
চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি দীপক সাহার এমন মন্তব্যের পর কয়েকজন সাংবাদিক, পুলিশের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা জোড়ালো তদ্বির চালায় বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চদ্র সাহার কাছে।
এমন নানা ধরণের হুমকিতে আতংকিত উপস্থিত একজন সনাতন ধর্মালম্বী বৃদ্ধ তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে মুঠোফেনে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, আমরা হিন্দুরা মনে হয় এই বন্দরে আর থাকতে পারবো না। একদিকে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা আমাদেরকে নানাভাবে প্রাণ বল্লব সরকারের হত্যা মামলা তুলে নিয়ে মীমাংশা করতে চাপ দিচ্ছে । একই সাথে এই ঘটনায় চেয়ারম্যানকে নিয়ে আসছে । আবার দেখতেছি কয়েকজন সাংবাদিক ওই খুনি মামুনের পক্ষে থানায় ও আমাদের সাবদী এলাকায় দৌড়ঝাপ চালাচ্ছে । আবার পুলিশ মামুন মিয়াকে গ্রেফতারও করতেছে না । খুনি মামুন মিয়া ও তার ভাই ব্রাদাররা উল্টো হুমকিও দিচ্ছে।
মামুন মিয়া তো খুন করেন নাই, তাকে খুনি বলেন কেমনে এমন প্রশ্নে এই বৃদ্ধ বলেন, প্রাণ বল্লব কে তো সকলের সামনেই মারধর করছে মামুন মিয়া, নাকি ? এমন মারধরের পর তার অবস্থার বেগতিক দেখে মামুন মিয়া ও তার পরিবারের লোকজন যে বৃদ্ধ প্রাণ বল্লব সরকারের মুখে বিষ ঢেলে দেন নাই তার নিশ্চয়তা কি / প্রমাণ কি ? তদন্ত করলেই বেড়িয়ে আসবে আসল ঘটনা। আর তদন্ত করবো কে ? পুলিশ ! তারাতো মামুন মিয়ার সাথে সিগারেট খায়, আড্ডা দেয় ! গ্রেফতার তো করে না । নিহত প্রাণ বল্লবের ছেলে সম্ভু সরকার মামলা করছে, সে দেখে নাই কি ঘটনা হয়েছে । লোক মুখে শুনে এই অভিযোগ দিয়েছে। আর এমন মারধরের পর যদি বিষ খেয়ে আত্মহত্যাই করে থাকে তবে কি মামুন মিয়া অপরাধ করেন নাই ?
Discussion about this post