ক্রাইমজোন হিসেবে ব্যাপকভাব পরিচিত রূপগঞ্জে চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে হামলার অভিযোগে থানায় মামলা করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে স্থানীয় ইউপি সদস্য বজলুর রহমানসহ ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৪০০-৫০০ জনকে আসামি করে পৃথক তিনটি মামলা হয়।
র্যাব-১, সিপিসি-১ এর নায়েক সুবেদার তৌফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে মাদক ও অবৈধ বিদেশী অস্ত্র রাখা, সরকারি কাজে বাধা দিয়ে র্যাবের উপর হামলা করে আসামি ছিনতাইয়ের চেষ্টা, সরকারি গাড়ি ভাঙচুর ও দাঙ্গায় লিপ্ত থাকার অভিযোগে মামলা তিনটি দায়ের করেন।
পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার রাতে র্যাব-১ এর সদস্যরা চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে মাদক ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান চালায়। ওই রাতেই ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- চনপাড়া পুনর্বাসনকেন্দ্র এলাকার পারভিন বেগম, রিপন মিয়া, রাজু আহাম্মেদ রাজা, মো. হাসান, তপু মিয়া, জসিম বেপারি, মো. বাবু, মো. আমিন, রাসেল হোসেন, নাজমুল হোসেন রায়হান ও মো. সুজন। গ্রেপ্তার মো. হাসান কায়েতপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য বজলুর রহমানের ভাই। গ্রেপ্তার আসামিদের বৃহস্পতিবার সকালে নারায়ণগঞ্জ আদালতে পাঠানো হয়।
মামলার নথির বরাতে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএফএম সায়েদ বলেন, মঙ্গলবার রাতে চনপাড়ায় অভিযান চালিয়ে মাদক ও অস্ত্র উদ্ধার করে গ্রেপ্তার আসামিদের গাড়িতে তোলার সময় অভিযুক্তরা র্যাব-১ এর সদস্যদের উপর হামলা চালায়। আসামিদের ছিনিয়ে নিতে দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হামলাকারীরা র্যাব সদস্যদের উপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। তারা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে গুলি চালায়।
হামলায় নাঈম ইসলাম ও খন্দকার কামরুজ্জামান ইমন নামে দুইজন র্যাব সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানান ওসি। তিনি বলেন, হামলাকারীরা র্যাবের সরকারি গাড়ি ভাঙচুর করেন। এ সময় র্যাব সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে গুলি করেন। পরে খবর পেয়ে র্যাব-১১ ও র্যাব-১ এর পূর্বাচল ক্যাম্প ও রূপগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে র্যাব সদস্যদের উদ্ধার করে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
স্থানীয় লোকজন জানান, ১৯৭৪ সালে রূপগঞ্জ উপজেলায় চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। পুনর্বাসন কেন্দ্রটিতে প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের বসবাস। চনপাড়ায় মাদক কেনাবেচা, চাঁদাবাজি, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে একাধিক বাহিনী সক্রিয়। বাহিনীগুলোর ‘নিয়ন্ত্রক’ হিসেবে পরিচিত স্থানীয় ইউপি সদস্য বজলুর রহমান।
আরো জানা যায়, রাজধানী থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দুরে রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তি। অপরাধীদের অভয়ারণ্য চনপাড়া বস্তির ৮০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত। অপরাধীদের বিচরনক্ষেত্র চনপাড়া দিনেদিনে হয়ে উঠেছে মাদকের অভয়ারণ্য। আর এই মাদকের নিয়ন্ত্রণ করেই কাঁচা টাকার মালিক বনেছেন কয়েকজন।
এ কারণেই বস্তির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গত কয়েক বছরে আলোচিত ১৫টি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। হত্যাকান্ডের শিকার বেশির ভাগই ছিলেন এই বস্তির নিয়ন্ত্রক। বর্তমানে এই বস্তির বিশাল মাদকের হাটের নিয়ন্ত্রক সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতা বজলু মেম্বার। বজলু মেম্বার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সদস্য।









Discussion about this post