অনৈতিক কর্মকান্ডে মহাপটুর ভূমিকা পালন করেই যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ । বিতর্ক যেন কোন অবস্থাতেই পিছু ছাড়ছে না এই সংস্থার কতিপয় অসাধু কর্তাদের। ঘুষ বাণিজ্য আর নানা ববে দূর্ণীতি যেন ঘিরে ফেলেছে এই সংস্থার অনেককেই । কে আছেন এই কার্যালয়ের সৎ ব্যক্তি তা অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুজে বের করাও কঠিন । নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্তা থেকে শুরু করে পিয়ন ওমেদার সকলের খুঁটির জোড় যেন অনেক গভীরে । তাই তারা যা খুশি তাই করে বেড়ায় একেবারেই প্রকাশ্যেই। ঘুষ লেনদেন যেন হালাল রোজগারে পরিণত করেছে এই অসাধু চক্র ।
অসংখ্য অপরাধের ঘটনা আর চরম দূর্ণীতিতে অনেকের প্রশ্ন, “এই দূর্ণীতিবাজদের ঠেকাবে কে ?”
আর এমন অপকর্ম দেখার যেন কেউ নাই । উর্ধতন কর্তাদের এমন অসংখ্য অপকর্মের বিষয়ে প্রশ্ন করলে সকলের ই দায়সারা একই উত্তর “আমার তো জানা নাই, খোজ নিয়ে দেখছি, ব্যবস্তা নেয়া হবে । ইত্যাদি ! ইত্যাদি !”
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অসংখ্য অভিযোগ থেকে জানা যায়, সড়কের পাশে যে কোন খুপড়ি ঘর থেকেও প্রতিমাসে মাসোযারা আদায় করে এই দপ্তরের হেডক্লার্ক হিসেবে পরিচিত বড় বাবু। সেই সোনারগাঁ থেকে শুরু করে চাষাড়া- জামতলা-পাগালা সড়কসহ নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের যে কোন সড়কের পাশের জমিতে সকল অবৈধ স্থাপনা থেকেই প্রথমে এককালীন এরপরে আবার প্রতিমাসে মাসোযারা আদায়ের চিত্র সকলে জানা।
এ ছাড়াও সড়কের নির্মান কাজে বিশাল বাণিজ্য তো অনবরত চলছে। ঢাকা নারায়ণগঞ্জ সড়কের লিংক রোডের নির্মাণাধীন কাজের ক্ষেত্রে ধুলো বিক্রি করেও অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে সড়ক ও জনপথ। এমন ধুলো বিক্রির করে অনৈতিক অর্থ হাতিয়ে নেয়ার বিষয়ে খোলাশা করে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মচারী বলেন, “লিংক রোডে যে বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে এই বিশাল কাজ করাকালীন সময়ে যাতে নগরবাসী কোন ধুলোবালির কারণে ভোগান্তির শিকার না হয় সেই জন্য পানি ছিটিয়ে ধুলো নিবারণ করতে কোটি কোটি টাকার অর্থ বরাদ্ধ রয়েছে নির্মান কাজের চুক্তিতে। আসলেই কি পানি ছিটানো হয়। লোক দেখানো মাঝে মাঝে পানি ছিটিয়ে তার ছবি ও ভিডিও করে দেখানো হয় পানি ছিটানো হচ্ছে সঠিক পন্থায়। আসলে কি তা হচ্ছে ? এই পানি ছিটানোর জন্য বরাদ্ধকৃত অর্থই ভাগবাটোয়ারা হযেছে কর্তা আর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাঝে। পানি ছিটানোর ঘটনা তো সামান্য বিষয় । এমন পানির বরাদ্ধ ছাড়াও নিরাপত্তার জন্য বরাদ্ধ রয়েছে কোটি কোটি টাকা। কোথায় সেই নিরাপত্তার বিষয়টি ? কোথায় যাচ্ছে সেই নিরাপত্তার জন্য বরাদ্ধকৃত বিশাল অর্থ ? কত ভাবেই যে সড়ক ও জনপথ বিভাগে চলছে লুটপাট !”
সড়ক ও জনপথ বিভাগের একাধিক সূত্র থেকে আরো জানা যায়, গত ২৩ মার্চ নগরীর সদর উপজেলার সস্তাপুর এলাকার এবিসি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের হাজার হাজার অবৈধ স্থাপনাকে রক্ষা করে শুধুমাত্র এবিসি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সমানের প্রায় শতাধিক কাচা টিনের তৈরী দোকান, কাচা ঘর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের উচ্ছেদ করে স ও জ। অত্যান্ত দরিদ্র এই দোকানীরা যে কোন সময় বলামাত্র ই ছেড়ে দিতে বাধ্য বলে ধারনা করা হলেও এই অসহায় দরিদ্রদের চায়ের দোকানসহ শতাধিক দোকান গুটিয়ে দেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ । এমন উচ্ছেদের ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পরেন সড়ক ও জনপথ বিভাগ ।
ভূক্তভোগিদের অনেকেই অভিযোগ করে অনেকেই বলেন, “এবিসি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়াশুনা করে নারায়ণগঞ্জে বদলী হয়ে আসা সরকারী শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সন্তানরা। আর তাদের সন্তানেদের জন্য আনা নেয়ার জন্য গাড়ী পুরো সড়ক দখল করে জনভোগান্তির সৃষ্টি করে যাচ্ছে যুগ যুগ যাবৎ। বিগত সময়ে এবং বর্তমানেও শীর্ষ কর্তাদের বিলাশবহুল স্টিকারযুক্ত গাড়ী সড়কে জনভোগান্তির সৃষ্টি করলেও সেই গাড়ি আবার পাহাড়াও দেয় পুলিশ। এমন ঘটনায় সমালোচনা চলছে সারা বছর জুড়েই। চাষাড়া থেকে সস্তাপুরে লিংক রোড়ের পাশে এবিসি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল স্থানান্তরিত হলেও সেই সরকারী কর্তাদের ম্যানেজ করেই চলছে জনভোগান্তি আর ক্ষমতার দাপট।
এমন অসংখ্য অভিযোগের পর আবারো সেই অসাধু কর্তারা এবার সস্তাপুর এলাকার রাস্তার পাশের সকল অবৈধ স্থাপনা সমুন্নত রেখেই উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে আড়াইলাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নারায়ণগঞ্জের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
এমন জোড়ালো অভিযোগ সকলের সামনেই দুই লাখ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ তুলেন ভূক্তভোগি। ভুক্তভোগির এমন অভিযোগের পরও শুধু মাত্র ওই ভুক্তভোগির স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে সড়ক ও জনপথ ।
আর স ও জ এর নির্বাহী প্রকৌশলী বলছেন প্রমান পেলেই চাকুরি থাকবে না ওই দুই কর্মকর্তার।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে ঢাকা- নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামের বিপরীত পাশে থাকা একটি আধাপাকা স্থাপনা উচ্ছেদ করে গুড়িয়ে দেয় সড়ক ও জনপথ ।
এসময় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামানের নেত্বত্বে সওজের কর্মকর্তারা ভেক্যু দিয়ে ভেঙে দেয় দোকান ঘরটি। অভিযানে যাওয়া কর্মকর্তাদের অভিযোগ ওই দোকানটি স ও জ এর জমি দখল করে নির্মাণ করেছে বীর মুক্তিযোদ্ধা হযরত আলীর ছেলে হাসান। তবে অভিযান চলাচলে দোকানটির মালিক হাসানকে বার বার বলতে দেখা যায় ঘুষের টাকা ফেরত দেন।
ঘটনার বিস্তারিত জানতে চাইলে হাসান বলেন, ২০০৮ সাল থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের পাশেই তিনি দোকান বানিয়েছিলেন। বছর দেড়েক আগে স ও জ উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে তাদের উঠিয়ে দেয়। এরপর মাত্র একটি আধাপাকা দোকান ছিলো। আশপাশের সব জায়গার মালিক এটা সত্য তবে আমারও ৪৮ পয়েন্ট জায়গা আছে।
হাসান বলেন, হঠ্যাৎ করেই বৃহস্পতিবার বিকেলে কোন নোটিশ না দিয়ে স ও জ এর লোকজন এসে দোকানটি ভেঙে দেয়। তার কারণ রাস্তার পেছনের আরেকটি জায়গাটি একজন বড় সরকারি কর্মকর্তার। উচ্ছেদ করার সময় স ও জ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন শামীমও ছিলেন। অথচ এই দোকানটি না ভাঙার শর্তে তিনি আমার কাছ থেকে দুই লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন। ভয় দেখিয়ে ছিলেন উচ্ছেদ করা। আর আরেক উপ-প্রকৌশলী নুরে আলমও নিয়েছেন আর ৫০ হাজার টাকা। তাদের কাছে আমার প্রশ্ন ঘুষ নেয়ার পরও কেন দোকান ভাঙ্গলেন।
এসব অভিযোগ বিষয়ে জানতে সওজের দুই কর্মকর্তার মুঠোফোন একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ করেন নাই । ফলে এমন দুই লাখ টাকার ঘুষের অভিযোগের বিষয়ে কোন মন্তব্যও পাওয়া যায় নাই ।
তবে সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস জানান, যে দোকানটি উচ্ছেদ করা হয়েছে তার পেছনে সরকারি সিনিয়র একজন কর্মকর্তার জায়গা। তাই জেলা প্রশাসকের অনুরোধে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। কারন দোকান বানিয়ে দখলে রাখা জায়গাটির মালিক স ও জ। আসলে উচ্ছেদের বিষয়টি নিয়ে আমরাও প্রশ্নের মুখে পড়েছি। তবে স ও জ এর কোন কর্মকর্তার ঘুষ নেয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। যদি এমনটা হয়ে থাকে তারা কারো কাছ থেকে টাকা নেয়েছে সে প্রমান পাওয়া যায় তাহলে তাদের চাকুরি থাকবে না।









Discussion about this post