দীর্ঘ আট নারায়ণগঞ্জ থেকে কমলাপুরের ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় এক প্রকার পোয়াবারো ব্যবসা করেছে কয়েকটি পরিবহণ কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে বন্ধন পরিবহন, উৎসব পরিবহন। এ ছাড়াও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত শীতল পরিবহন চাষাড়া থেকে চলাচল করলেও ওই ট্রেন যাত্রীদের অনেকেই নির্ভর করতে হতো এই শীতল পরিবহণের উপর।
যেখানে ট্রেনের ভাড়া ছিলো ১৫ টাকা সেখানে বন্ধন ও উৎসব পরিবহণের প্রত্যেক যাত্রী গুণতে হয় ৫৫ টাকা করে। অপরদিকে বিআরটিসি সকালের ভাড়া ৫৫ টাকা হলেও দুপুরে ১০ টাকা ভাড়া কমিয়ে রাখা হয় ৪৫ টাকা। পরিবহণ বাড়ার এই নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কারণে গত আট মাস ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় একেকজন পরিবহণ মালিক প্রতিদিন গড়ে ৪/৫ হাজার টাকা ব্যবসা করতো।
নাম প্রকাশ না করা অনুরোধে একজন পরিবহণ মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘প্রতিদিন একেকজন মালিক ৪/৫ হাজার টাকা লাভ নেয়ার কথা থাকলেও জুয়েল, আইয়ুব আলী ও মিলন নামের তিনজন লুটপাটের আখড়া হিসেবে বন্ধনের মালিকদের চুষে চুষে খাচ্ছে । এতো দিন বাস মালিকরা কিছু টাকা হাতে পেলেও ট্রেন চালু হওয়ায় পরিবহণ মালিক সকল খরচা দিয়ে এক হাজার টাকা করে বাাড়িতে নিতে পারবে কিনা সন্ধেহ। নতুন করে ট্রেন চালু এবং ২০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ হলেও নারায়ণগঞ্জে থেকে যাত্রীরা ট্রেনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পরবে । এক্ষেত্রে সকল গণপরিবহণ মালিকদের মাথায় হাত । ট্রেন চালু হওয়ায় বন্ধন, উৎসব, শীতলসহ সকল পরিবহণের কর্তৃপক্ষ হায় হায় করতেছে। বন্ধন উৎসবের মাথায় ঠাটা পইরা গেছে। একেকটি বাস ঢাকা থেকে আপডাউন ট্রিপে ১৪/১৫ শত টাকা তেল লাগে। সব সময় কি সিটিং যায় ? তবে ট্রেনের ভাড়া ৫ টাকা বাড়ালেও যাত্রীরা তাতেও খুশি । এখন আর সেই লুটপাট করবে কেমনে তা দেখার বিষয়।”
ক্ষোভের সাথে এই পরিবহণ মালিকের দুই দফায় (৫ মিনিট ২৫ সেকেন্ড আর ৪ মিনিট ৪৪ সেকেন্ড) মুঠোফোনের আলোচনায় পরিবহণ সেক্টরের বিশাল দূর্ণীতি লুপপাট আর সাধারণ মালিকদের উপর নির্যাতনের বিস্তর তথ্যচিত্র তুলে ধরেন নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর কাছে।
মঙ্গলবার (১ আগস্ট) থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিনের ভোগান্তির শেষে এবার স্বস্তি মিলেছে যাত্রী সাধারণের। তবে পূর্বের তুলনায় অর্ধেক ট্রেন চলাচল করায় ক্ষোভ জানিয়েছেন যাত্রীরা। পূর্বে ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করলেও বর্তমানে চলাচল করছে ৮ জোড়া। তাদের দাবি, আগের শিডিউল চালু এবং আরেকটি ট্রেন যুক্ত করার হোক।
গত ২৫ জুলাই রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকার অনেক রেলক্রসিং উন্নয়ন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল লাইন রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদার প্রত্যাহারসহ বিভিন্ন কারণে সময়মতো রেলপথটির কাজ শেষ করে লাইনটি পুনরায় চালু করতে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। আমরা ১ আগস্ট থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন চলাচল শুরু করে দেব।’
এদিকে দীর্ঘ প্রায় ৮ মাস পর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে আবারও শুরু হয়েছে ট্রেন চলাচল। এতে ভোগান্তি কমেছে যাত্রীদের, ফিরেছে স্বস্তি। অবশেষে রাস্তায় যানজট থেকে যাত্রীদের দুর্ভোগ শেষ হতে যাচ্ছে। তবে নতুন সময়সূচীর কারণে যাত্রীদের দুর্ভোগ দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা।
নারায়ণগঞ্জ স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম খান জানান, ১ আগস্ট থেকে ট্রেন চলাচল পুনরায় শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ রেলপথে মোট ৮টি ট্রেন ১৬ বার আসা যাওয়া করবে। কমিউটার ট্রেন হওয়ায় ভাড়া ২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নতুন সময় সূচি অনুযায়ী, নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রথম ট্রেন ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে ভোর ৬টা ৫ মিনিটে। দ্বিতীয় ট্রেন সোয়া ৮টায়, তৃতীয় ১০ টা ২৫, চতুর্থ ১২টা ৩৫, পঞ্চম দুপুর ২ টা ৪৫, ষষ্ট সোয়া ৫টা, সপ্তম ৭টা ২৫ ও অষ্টম ট্রেন ছাড়বে ৯টা ৩৫ মিনিটে। ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে ভোর ৫টায়, সকাল ৭ টা ১০মিনিটে, সকাল ৯ টা ২০ মিনিটে, সকাল ১১ টা ৩০ মিনিটে, দুপুর ১ টা ৪০ মিনিটে, বিকেল ৪ টা ১০ মিনিটে, বিকেল ৬ টা ২০ মিনিটে, রাত ৮ টা ৩০ মিনিটে। ফতুল্লা, পাগলা, শ্যামপুর ও গেন্ডারিয়া স্টেশনে ২ মিনিট করে থামবে ট্রেন গুলো।
রেলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শাহ আলম কিরণ শিশির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মঙ্গলবার ১ আগষ্ট থেকে ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জ দীর্ঘ ১৭ কিলোমিটার ৪০ মিনিটে সহজে যাতায়াত করতে পারছেন যাত্রীরা। কমিউটার ট্রেনটিতে লাইট, ফ্যান ও বাথরুমের সুব্যবস্থা রয়েছে। লোকাল ট্রেন থেকে কমিউটার ট্রেন চালু করায় ১৫ টাকার পরিবর্তে ২০ টাকা ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।’









Discussion about this post