নারায়ণগঞ্জের বন্দরের মদনপুর এলাকার সুরুজ মিয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সুরুজ মিয়া ওরফে বিড়ি সুরুজের জুট স্পিনিং মিল নিলামে উঠেছে।
৯৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঋণ খেলাপীর কারণে সুরুজ মিয়া জুট স্পিনিং মিলটির স্থাবর সম্পত্তি নিলামে তুলেছে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড।
এর আগে ২০২০ সালের ২২ নভেম্বর সম্পদের বিবরণীতে তথ্য গোপন করার অভিযোগে সুরুজ মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
জানা গেছে, গত ২৮ আগষ্ট দৈনিক কালবেলায় ঢাকাস্থ অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড বৈদেশিক বাণিজ্য কর্পোরেট শাখা কর্তৃক অর্থঋণ আদালত আইন ২০০৩ এর ৩৩(১) ধারার বিধান মোতাবেক একটি নিলাম দরপত্র বিজ্ঞপ্তি ছাপা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় সুরুজ মিয়া জুট স্পিনিং মিলস লিমিটেডের কাছে ২০২২ সালের ১৭ জুন পর্যন্ত ব্যাংকের পাওনা ৯৫ কোটি ৩০ লাখ ৫৬ হাজার ৫৩২ টাকা। ২০২৩ সালের ২৩ জুন পর্যন্ত সুদসহ ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৬১ হাজার ৩২৫ টাকা এবং আইন খরচ ও অন্যান্য খরচ ৩ লাখ টাকাসহ সর্বমোট ১০৬ কোটি ১১ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৭ টাকা পাওনা রয়েছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। নারায়ণগঞ্জ যুগ্ম জেলা জজ ও অর্থঋণ আদালতে দায়েরকৃত মামলায় দায়িকগণ হচ্ছে সুরুজ মিয়া জুট স্পিনিং মিলস লিমিটেডের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. সুরুজ মিয়া, তার স্ত্রী প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান রওশন আরা বেগম, সুরুজ মিয়ার ৩ ছেলে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক যথাক্রমে শামীম মিয়া, নাদিম উদ্দিন মিন্টু ও মো. নাছির উদ্দিন হিরো। চলতি বছরের ১৫ অক্টোবর নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। নিলামকৃত মোট সম্পত্তির পরিমাণ তিনশত ছাব্বিশ দশমিক পঁচাশি শতাংশ জমি।
উল্লেখ্য, এর আগে সুরুজ মিয়ার বিরুদ্ধে সম্পদের বিবরণীতে তথ্য গোপন করার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ধারায় মামলাটি দায়েরের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। ২০২০ সালের ১৫ অক্টোবর দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক (অনুসন্ধান ও তদন্ত) মো. তালেবুর রহমান মামলা দায়েরের নির্দেশ দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্রে জানা যায়, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে চলতি বছরের মার্চে সুরুজ মিয়ার বিরুদ্ধে তদন্তে নামে দুদক। প্রাথমিক তদন্তে নেমে সম্পত্তির বিবরণী চায় দুদক। এই বিবরণীতে সম্পদের তথ্য গোপন করেন সুরুজ মিয়া। পরে তার বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন।
সুরুজ মিয়া নারায়ণগঞ্জের বন্দরের মদনপুরের চাঁনপুর এলাকার মৃত আফিস উদ্দিন প্রধানের ছেলে। তিনি সুরুজ মিয়া গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)। থাকেন রাজধানীর টিকাটুলীর প্যারামাউন্ট কর্নকর্ড-৯ এর একটি ফ্ল্যাটে। তার ব্যবসায়ীক কার্যালয় মতিঝিলের সেনাকল্যাণ ভবনে হলেও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো সবই নারায়ণগঞ্জের মদনপুরে।
বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের সূত্রে আরো জানা যায়, এক সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বন্দরের মদনপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সাধারণ বিড়ি বিক্রেতা থেকে বর্তমানে হাজার কোটি টাকার মালিক সুরুজ মিয়া। তার বিরুদ্ধে অন্যের জমি দখলেরও অভিযোগ রয়েছে। বন্দর থানার মদনপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার ভেতরে চানপুর এলাকায় এশিয়ান হাইওয়ের পাশেই শত শত বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে সুরুজ মিয়া গ্রুপ। সেখানে রয়েছে সুরুজ মিয়া স্পিনিং মিল, সুরুজ মিয়া জুট স্পিনিং মিল, সুরুজ মিয়া প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ, টাইটানিক অয়েল মিলস, টাইটানিক সল্ট ইন্ডাস্ট্রিজ, টাইটানিক ও মাস্টার্ড অয়েল মিলস। আকিজ বিড়ি ও আকিজ সিমেন্টের ডিলারশিপ ছাড়াও সেখানে রয়েছে তাঁর বিশাল জমির ব্যবসা।
এমন জমি সংক্রান্ত কেলেংকারী ছাড়াও এই বিড়ি সুরুজের বিরুদ্ধে জামায়াত শিবিরের পৃষ্টপোষকতা এবং জোট সরকারের শাসনামলের জামায়াত ইসলামীর এমপি আবু তাহের কে নানাভাবে দল পরিচালিত করতে সহায়তা করতো বলে জনশ্রুতি রয়েছে ।









Discussion about this post