এমন ঘটনায় সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেন, “দীর্ঘদিন যাবৎ এই পাত্তি মিস্ত্রি দিদারুল ইসলাম, তার ছেলে রহমত উল্লাহ ও ভাতিজা রনি নানাভাবে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও তার সহযোগিদের নাম এবং আইনশৃংখলা বাহিনীর ট্রাফিক কর্মকর্তা, ইন্সপেক্টর, সার্জেন্ট, রেকারম্যান ও কন্সষ্টেবলদের নাম ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করলেও এখন সকলেই বলবেন এই বিষয়ে আমাদের কোন সম্পৃক্ততা নাই অথবা আমার জানি না। এমন বক্তব্য শোনা গেলেও এতো দিন এই অপরাধীরা কি করে এই চাঁদাবাজি করলো ? এর দায় কার ? কেউ কি দায় এড়াতে পারবেন ?“ এমন নানা প্রশ্ন নগরবাসীর মুখে উচচারিত হ্চ্ছে
চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ড যাতায়াতকারী লেগুনা পরিবহনে দুই কোটি টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে চাঁদমারী সবুজবাগ এলাকার দিদারুল ইসলাম, তার ছেলে রহমত উল্লাহ ও ভাতিজা রনির বিরুদ্ধে।
এই চাঁদাবাজির ঘটনায় শিবু মার্কেট এলাকার মো. হিমেল বাদী হয়ে তাদের আসামী করে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১নং আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, হিমেল, জাকির, সোসেমান মিয়া, মোহন, মো. মাসুদ রানা ও আরিফ মিলে ২০১৬ সাল থেকে সিটি সার্ভিস নামে চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত লেগুনা পরিবহন চালু করে। আর এই লেগুনা পরিবহন চানানোকালে দিদারুল ইসলাম, তার ছেলে রহমত উল্লাহ ও ভাতিজা রনি পারস্পরিক যোগসাজশে গাড়ি চালাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। সেই সাথে বিভিন্ন অজুহাতে বিভিন্নভাবে প্রতিদিন ৫০টি লেগুনা প্রতি ২০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে। এভাবে এখন পর্যন্ত তাদের চাঁদাবাজির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ কোটি টাকা।
তাদের এই চাঁদাবাজির কারণে অনেক মালিক গাড়ির ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেক মালিক চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে তাদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত ও মারধর করে। একই সাথে প্রত্যেক গাড়ি প্রতি এককালীন ৫০ হাজার করে চাঁদা আদায় করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩ সেপ্টেম্বর দিদারুল ইসলাম ও তার ছেলে রহমত উল্লাহ এবং তার ভাতিজা রনিসহ অজ্ঞাত সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে লেগুনা প্রতি ৫০ হাজার টাকা চাঁদাদাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে হিমেল, জাকির, সোসেমান মিয়া, মোহন, মো. মাসুদ রানা ও আরিফকে এলোপাথাড়িভাবে মারধর শুরু করে। সেই সাথে চাঁদা না দিলে লেগুনা চালাতে দিবে না বলে হুমকি প্রদান করে।
জানা যায়, দিদারুল ইসলাম ১৯৮২ সালে চাষাঢ়া এলাকার বেইলী টাওয়ারের খালি জায়গায় পাত্তি মিস্ত্রির কাজ শুরু করে। আর সেই দিদার এখন কোটি টাকার মালিক হয়ে গেছে। শহরের উত্তর চাষাঢ়া, চাঁনমারী ও সবুজবাগে তার নামে বেনামে ৪ থেকে ৫টি বাড়ি আছে। নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন পরিবহনে তার গাড়ি রয়েছে। দিদারের মাধ্যমে গত ৫ থেকে ৬ বছর আগে উত্তর চাষাঢ়া মোড় থেকে ইউনিটি নামে একটি লেগুনা সার্ভিস চালু করে। কিন্তু তাদের চাঁদাবাজির কারণে সেই পরিবহনটি বিলুপ্ত করা হয়। বর্তমানে চাষাঢ়া-সবাইনবোর্ড রোডে সিটি সার্ভিস নামে লেগুনা পরিবহন চালু হলে সেটাও বিলুপ্তির পথে। প্রথমে তাদের একটি গাড়ি থাকলেও চাঁদার টাকা দিয়ে ৪ থেকে ৫টি গাড়ি ক্রয় করে।
বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে বিভিন্ন পদের মাধ্যমে উনাদের নাম ব্যবহার করে মালিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। কিছুদিন আগে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ায় ফয়েজউদ্দিন লাভলুকে প্রধান উপদেষ্টা করে চাঁদাবাজি বহাল রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
খোজ নিয়ে এরা জানা যায়, শহরের চাষাড়া থেকে অবৈধভাবে পরিচালিত মুন্সীগঞ্জগামী ৪৫টি লেগুনা থেকে জিপি নামক চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছে ২৬০ টাকা করে, সিদ্ধিরগঞ্জগামী ৪০টি লেগুনা থেকে ২৫০ টাকা, লিংক রোড়ের লেগুনা থেকে ২২০ টাকা, হিমাচল পরিবহণে প্রতিদিন প্রতিটি গাড়ী থেকে ১৮৩০ টাকা করে জিপি নামক চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছে পরিবহণ মালিকরা।
৪০/৪২ টি হিমাচল থেকে প্রতিদিন চাঁদা আদায় হচ্ছে ৭০/৭৫ হাজার টাকা । শুধু মাত্র হিমাচল থেকেই প্রতিমাসে ২০/২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চাঁদাবাজচক্র। প্রতিদিন বিশাল টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে প্রকাশ্যেই । যা দেখে, জেনে শুনে চোখ বন্ধ করে বরখেছে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন ।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি জিপির নামে এমন চাঁদাবাজির একটি বিশাল অংক জেলা পুলিশের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা হাতিয়ে নিচ্ছে বছরের পর বছর জুড়ে । শুধুমাত্র পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার কারণে নারায়ণগঞ্জের কোন পরিবহণ সঠিক আইন মেনে চলে না বলেও জানায় কয়েকজন পরিবহণ ব্যবসায়ী । পুলিশকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিলে অবৈধ পন্থায় চলাচলরত পরিবহণের মাসোয়ারা দিলেই কোন আইন লাগে না পরিবহণ ব্যবসা করতে । শুধুমাত্র বাই সাইকেল ছাড়া আর সকল পরিবহণ থেকে বিশাল অংকের চাঁদা দিলেই সকল অবৈধ পরিবহণ যেন বৈধ হয়ে যায় । নইলে একটি রিক্সাও বাদ যাবে না । প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত সদর উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ২০/৩০/৪০টি অটো/ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও সিএনজি আটক করে । আটকের পর কন্সষ্টেবল /এটিএসআইদের মাধ্যমে শুরু হয় ১/ ২ আবার কখনো কখনো ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে গাড়ী ছাড়ানোর হিড়িক। প্রতিদিন নিম্নে বিশাল চাঁদাবাজি ছাড়াও ৫০ হাজার টাকা পুলিশের পকেটে না আসা পর্যন্ত অবৈধভাবে চলাচলের অভিযোগ এনে আটকের পর শুরু হয় বেচাকেন । এ যেন বেচাকেনার এক বিশাল হাট বাজার ।
অপরদিকে এক সময়ের পাত্তি মিস্ত্রি দিদার, লোকমান ও সোহেল লেগুণা, সিএনজিসহ সকল অবৈধভাবে চলাচলরত পরিবহণ থেকে বিশাল চাদাবাজি করে বর্তমানে বিশাল ধন সম্পদের মালক । এই পাত্তি মিস্ত্রি দিদার নিজেকে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নাম ব্যবহার করে পরিবহণ মালিক/ ড্রাইভারদেরকে নানাভাবে হুমকিও দেয়।
এ ছাড়াও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ ফিটনেস বিহীন ও অদক্ষ চালক দিয়ে নারায়ণগঞ্জে গণপরিবহন গুলো চলছে কোন ধরণের বাধা ছাড়াই । আর অদক্ষ চালক হওয়ায় প্রতিদিনই ঘটছে দূর্ঘটনা। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে গণপরিবহণে হয়রানি বেড়েই চলেছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এই নৈরাজ্য এখন আর কমার অবস্থায় নেই । বরং প্রতিনিয়তঃ যেন নৈরাজ্য বেড়েই চলেছে । কারণ হিসেবে অনেকেই বলেছেন, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে নিয়মিত মাসোয়ারা পেলে কে কার কথা চিন্তা করে । আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অসাধু সদস্যরা চায় মাসোয়ারা । আর এই মাসোয়ারা ই জনগণের বিপরীতে কাজ করে প্রশাসন।









Discussion about this post