নারায়ণগঞ্জের সদর নিতাইগঞ্জ এলাকার একটি বাসায় র্যাব সদস্য ও এক নারী দগ্ধ হয়েছেন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদেরকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
দগ্ধরা হলেন- র্যাব সদস্য অভিজিৎ সিং (২৮) ও টুম্পা রানী দাস (৪০)। জানা যায়, অভিজিৎ র্যাব-১১ এর সদস্য।
বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোর ৩ টা ১৬ মিনিটের সময় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে আনা হলে কিসের আগুণে এমন হলো বলে প্রশ্ন করা হলে প্রথমে দগ্ধ অভিজিৎ সিং ও টুম্পা রানী পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়ায় এমন ঘটেছে বলে দাবী করলেও পরবর্তীতে ‘ঘরের মধ্যে পেট্রোল আসেলো কি করে ?’ ‘কেন এই পেট্রোল ঢেলে আগুন দিলেন ?’ এমন অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর দেন নাই কেউ ।
তাদেরকে রেফার্ড করলে র্যাবের গাড়ী এসে দগ্ধ অভিজিৎ সিং (২৮) কে নিয়ে ঢাকা রওয়ানা দিলে টুম্পা রানী দাস (৪০) অপর প্রাইভেট এম্বুলেন্স থেকে নেমে লংকাকান্ড ঘটায়। এ সময় টুম্পা রানী দাস চিৎকার করে বলতে থকেন, ‘আমি তো মরার জন্যই পেট্রোল ডাইল্ল্যা এই কাম করছি । মরমু যখন এক সাথেই মরমু !’
এমন ঘটনার পর র্যাবের গাড়িতে করেই ভোররাত ৪টার দিকে দগ্ধ অভিজিৎ সিং (২৮) ও টুম্পা রানী দাস (৪০) কে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা ।
এমন ঘটনায় দগ্ধ টুম্পা রানী দাসের ছেলে বিশাল চন্দ্র দাস ও দূর সম্পর্কের দেবর জনি দাসসহ স্বজনরা শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে সাংবাদিকদেরকে জানান, পরিবারটি নিতাইগঞ্জের একটি বাড়ির ৩য় তলার ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকে। টুম্পার স্বামী হরি কমল দুবাই প্রবাসী। দুই ছেলের মা টুম্পা। রাতে ফ্ল্যাটের এক রুমে টুম্পার দুই ছেলে ও দেবর জনি দাস ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোরে হঠাৎ চিৎকার শুনে ঘুম ভেঙে গেলে তারা দেখেন, টুম্পা রানীর রুমে আগুন জ্বলছে। টুম্পা ও অভিজিতের শরীরেও আগুন। তখন তারা বাথরুম থেকে পানি এনে তাদের দুজনের শরীরে ঢালেন। এরপর ঘরের জিনিসপত্রে লাগা আগুনও নেভান।
দগ্ধদেরকে সঙ্গে সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের জেনারেল হাসপাতালে (ভিক্টোরিয়া) নিয়ে যান। সেখান থেকে তাদেরকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়।
তারা আরো জানান, র্যাব সদস্য অভিজিতের পরিবার ও টুম্পার পরিবার আগে পাশপাশি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকতেন। তখন থেকে তাদের সাথে একটি পারিবারিক সম্পর্ক। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে অভিজিৎ তাদের বাসায় গিয়েছিলেন। মাঝে মাঝে ওই বাসার ছাদে গিয়ে আড্ডা দিতেন তিনি। এছাড়া মাঝেমধ্যে ওই বাসায় গিয়ে টুম্পা রানীর ছেলে বিশালকে পড়াশুনা বুঝিয়ে দিতেন। তবে রাতে কীভাবে আগুন লেগেছে, সে বিষয়ে কিছু জানাতে পারেননি তারা।
তরে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের একাধিক সূত্র এবং চিকিৎসক সাবিনা ইয়াসমিনের সহযেগি চিকিৎশকের উদ্ধৃতি দিয়ে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে বলেন, “ঘটনাটি স্পর্শকাতর । টুম্পা রানী যা বলেছেন তা হলো : তার স্বামী বিদেশে থাকার সুযোগ নিয়ে অভিজিত তাকে বিয়ে করবে বলে দীর্ঘদিন যাবৎ এই বাড়িতে আসা যাওয়া করেন এবং রাত্রি যাপন করেন। কয়েকদিন যাবৎ বিয়ের জন্য চাপ দিলে টালবাহানা করতে থাকলে পরিকল্পনানুযায়ী এক সাথে হয়তো বিয়ে করে সংসার করবে নয়তো মরবে এই চিন্তা থেকে পেট্রোল এনে ঘরে রাখে টুম্পা । মধ্যরাতে সকলে ঘুমিয়ে পরলে অভিজিত ফোন করে এই বাসায় আসলে বিয়ে করার জন্য চাপ দিলে অভিজিত তা অস্বীকার করে । তখন পেট্রোল ঢেলে আগুণ ধরিয়ে দেই।“ এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দেন দগ্ধ টুম্পা রানী।
এমন ঘটনার পর হাসপাতাল সূত্র আরো জানান, একটি অসম প্রেমের যবনিকাপাত হয়তো চিরতরে ঘটতে পারে । তাদের অবস্থা খুবেই আশংকাজনক ।
বার্ন ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা জানান, অভিজিতের শরীরের ৯০ শতাংশ আর টুম্পার ৭০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।
অভিজিতকে আইসিইউ আর টুম্পাকে রাখা হয়েছে এইচডিইউ’তে। তাদের দুজনের অবস্থাই আশঙ্কাজনক।
জানা যায়, অভিজিৎ র্যাব-১১ এর সদস্য। তবে এ বিষয়ে র্যাবের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।









Discussion about this post