দীর্ঘদিন যাবৎ ওয়রেন্ট মাথায় নিয়ে এক প্রকার নারায়ণগঞ্জবাসীকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সর্বর প্রকাশ্যে চষে বেড়িয়েছে কুখ্যাত অপরাধী নাসিক কাউন্সিলর নানা অপরাধের মূল হোতা সিদ্ধিরগঞ্জের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা মতিউর রহমান মতি। এরপর তার শেল্টারদাতা দেশে না থাকায় প্রায় ১৫ দিন আত্মগোপনে থাকার পর তাকে গত ১০ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ রাইফেল ক্লাবে দেখা যায়।
এ সংক্রান্ত একাধিক ছবি এবং ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে চলছে নানা আলোচনা সমালোচনা।
কাউন্সিলর মতিকে নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে একজন যুবদল নেতা আরও বলেন, তার যে কতো সম্পদ এটা নারায়ণগঞ্জবাসী জানে। দুদকের মামলায় সে কিছুদিন ধরে হয়তো পলাতক কিন্তু এর আগে সে ওয়ারেন্টের আসামি হয়েও প্রকাশ্যে চলাফেরা করেছিল। পুলিশ যদি তাকে তখন গ্রেফতার করার চেষ্টা করতোই তাহলে সে কিভাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রোগ্রামে মিছিলের নেতৃত্বে দেন প্রশ্ন বিএনপির সজলসহ নগরবাসী অনেকের।
ওই যুবদলের নেতা সজল বলেন, আমরা তো তার মিছিলের ছবিগুলো দেখেছি। কিন্তু এখন পুলিশ বলছে তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। আর পালিয়ে থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, মিডিয়াতে তাকে নিয়ে অনেক নিউজ প্রকাশিত হয়েছে। এর ফলে প্রশাসনের উপর চাপ আসার কারণে এখন তিনি হয়তো আত্মগোপনে রয়েছেন। যেটা প্রশাসনই ভালো বলতে পারবেন। উনি হয়তো মিডিয়াকে ম্যানেজ করে কিংবা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে উনি আসার চেষ্টা করবেন। তিনি একসময় ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্টে থাকা আসামি। তখন তিনি বাংলাদেশে ছিলেন। বর্তমানে তার যে আর্থিক উন্নতি হয়েছে তা সম্পর্কে সবাই অবগত।
এর আগে গত ১০ অক্টোবর মঙ্গলবার রাতে শহরের চাষাঢ়ায় রাইফেল ক্লাবে একটি ভোজন আয়োজনে যোগ দেন মতি। ওই ক্লাবের পদাধিকার বলে সহ সভাপতি হলেন জেলা পুলিশ সুপার। সম্প্রতি তিনি বলেছিলেন, পরোয়ানা থাকলে অবশ্যই মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হবে।
এ বিষয়ে নগরীর অনেকেই প্রশ্ন বলেন, কাউন্সিলর মতির বিষয়ে এখন নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল, পিপিএম (বার) কি বলবেন ? যিনি আজ (১২ অক্টোবর) বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্য্যালয়ে ব্যবসায়ীদের সাথে এক মত বিনিময় সভায় সততার উদহারণ সৃস্টি করার জন্য নানাভাবে ব্যবাসায়ীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করেন । সুদানের উদাহরণ টেনে এসপি রাসেল সততার নানা দিক তুলে ধরে ব্যবসায়ীদের সততার সাথে ব্যবসা করার অনুরোধও করেন।
জানা যায়, মতিউর রহমান (মতি) ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের উপপরিচালক মোহাম্মদ ইব্রাহিম বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (ঢাকা-১) মামলা দুটি করেন। প্রথম মামলায় কাউন্সিলর মো. মতিউর রহমানের (মতি) বিরুদ্ধে ৬ কোটি ১ লাখ ৭২ হাজার ২৬৫ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং ১০ কোটি ৮৬ লাখ ৫ হাজার ৬৩৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। আর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্যাংকে ৮২ কোটি ৫১ লাখ ৪২৪ টাকা জমা করে পরবর্তী সময়ে ৭৪ কোটি ১৩ লাখ ৮৮ হাজার ৬৮৯ টাকা উত্তোলন, স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে।
দ্বিতীয় মামলায় কাউন্সিলর মতির স্ত্রী রোকেয়া রহমানের বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৬১ লাখ ১৮ হাজার ৩৯৭ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিভিন্ন ব্যাংকে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৬৭ হাজার ৩৯৫ টাকা জমা এবং সেখান থেকে ১ কোটি ৮৫ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৮ টাকা উত্তোলন, হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরের অভিযোগ আনা হয়েছে। দুটি মামলাই দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর ৪(২) ধারায় করা হয়েছে।
চলতি বছরের জুনে কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির বিরুদ্ধে ঢাকার একটি আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
বিষয়টি শুরু থেকেই ধামাচাপা দিয়ে আসতে পেরেছেন তিনি।
সফলভাবে তিন মাস অতিক্রম করার পর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় এ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার কাগজটি। ওয়ারেন্টের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায় দুদক সূত্রেও। কিন্তু ২০ সেপ্টেম্বর থেকে মতি গা ঢাকা দেয়।
বিভিন্ন গণমাধ্যম ১ অক্টোবর কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়। রাতেই মতিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে দেখা যায়। সেখানে তিনি বেশ কিছু সময় অবস্থান করেন। স্থানীয়রা জানান, ২০ সেপ্টেম্বর থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের বাইরে আছেন তিনি। তার নিজ বাড়ির আশেপাশেও তাকে দেখা যায়নি। এমনকি সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত তার নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যেখানে নিয়মিত বসতেন, সেখানেও নেই তিনি। সব মিলিয়ে এক প্রকার লাপাত্তা ছিলেন নিজ এলাকায়।
এতো সমালোচনার পরও এবার কি করে আবার প্রকাশ্যে নগরীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্লাবে এই কুখ্যাত অপরাধীকে দেখা গেলেও এখনো পুলিশের খাতায় অধরা এই মতি। তবে কি পুলিশ ব্যর্থ নাকি অনৈতিক লেনদেনে ম্যানেজ । নাকি এই পুলিশ অপরাধীদের লালন পালনে ব্যস্ত ? তবে কি নারায়ণগঞ্জে এসপি গোলাম মোস্তফা রাসেল, পিপিএম (বার) ব্যক্তিত্ববান কর্মকর্তা হিসেবে নিজেকে প্রমাণ কর ব্যর্থ হচ্ছেন ?
তরে মতির একটি ঘনিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করে বলেছেন, “এই মতি তার এই অবস্থান জাহির করতে কি পরিমাণ অর্থ খরচা করছেন তার হিসাব করাই কঠিন । একদিকে রাজনীতিবিদ আরেক দিকে পুলিশের উর্ধতন কর্তকর্তা থেকে কন্সষ্টেবল পর্যন্ত সকলকেই মোটা অংকের অর্থ দিয়ে ম্যানেজ করেই চলতে হচ্ছে প্রকাশ্যে। আর মতিকে নিয়ে লিখে লাভ কি ? কে নিয়ে ব্যবস্থা ? আদালতের ওয়ারেন্ট বড়, নাকি টাকা বড় তার প্রমাণ করছেন মতি !”









Discussion about this post