বিএনপি ক্ষমতার বাইরে দীর্ঘদিন। এরপরেও তাদের সহনশীল আচরণ দেখা যায় না কোথাও । যার কারণে বারবার বিএনপির জনপ্রিয়তা থাকার পরও কোন আন্দোলন কিংবা সরকার বিরোদী কোন সমাবেশ কিংবা আল্টিামেটাম সফলতার মুখ দেখে না । খোদ নিজ দলের নেতাকর্মীদের সাথে অশোভন আচরণ – দাম্ভিকতা এবং পদ পদবী ছাাড়াও নানা কারণে বাণিজ্যিকরণের কারণে দলটি সফলতার মুখ দেখতে পারছে না ।
বিগত ৩০ আগষ্ট নারায়ণগঞ্জ শহরের মহানগর বিএনপির নেতা আবু আল ইউসুফ খান টিপু বন্দর উপজেলা থেকে সরকার বিরোধী সমাবেশে যোগ দিতে আসার পর স্থানীয় বিএনপি নেতা আবদুর রাহিমকে চাষাড়া চত্তরে রীতিমতো চর থাপ্পর কিল ঘুষি লাথি দিয়ে রাঞ্চিত করেন। শুধুমাত্র মত বিরোধের কারণে এমন মারধরের ঘটনার ভিডিও ব্যাপকভাবে প্রচার হলে কেন্দ্র থেকে ডেকে নিয়ে বিস্তারিত জানতে চান শীর্ষ নতারা এবং আবদুর রাহিম কে ধৈর্য্য করার জন্য বলেন।
এরপর ১৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে সমাবেশে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় প্রকাশ্যে ওয়ার্ড পর্যায়ের এক কর্মীকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের থাপ্পড় মারার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় সিদ্ধিরগঞ্জের ৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সালাউদ্দিনকে থাপ্পড় দেন তিনি।
এই ঘটনার ভিডিও গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সেটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় দলের তৃণমূল নেতা–কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। গিয়াসউদ্দিন নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে বিএনপি–দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য।
এমন ঘটনায় একদিকে যেমন নিন্দার ঝড় বইছে খোদ বিএনপির মধ্যেই আবার আরেক দিকে এই ঘটনাকে পুঁজি করে বিএনপির একটি চক্র গরম তেলে ঘি ঢেলে পরিস্থিতি ঘোলাটে করে নিজ নিজ ফায়দা হাসিলেরও চেষ্টা চালাচ্ছে কেউ কেউ ।
বুধবার বিকেলে নয়াপল্টনে এমন কান্ডের ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, নীল রঙের শার্ট পরা জেলা বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিন দৌড়ে গিয়ে মিছিলের সামনে সাদা শার্ট পরা একজনকে থাপ্পড় দেন। এ সময় ধাক্কা দিয়ে সামনে থেকে ওই ব্যক্তিকে সরিয়ে দেন। এ সময় গিয়াসউদ্দিন আরও একজন বয়স্ক লোককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেন। নেতা–কর্মীদের সঙ্গে চিৎকার–চেঁচামেচি করেন এবং একপর্যায়ে নেতা–কর্মীদের দুই হাতের বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে দেখাতে দেখা যায় তাঁকে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বুধবার বেলা তিনটার দিকে নয়াপল্টনে যাওয়ার সময় ফকিরাপুল পুলিশ বক্সের সামনে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতা-কর্মীরা জড়ো হন। সেখানে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া, জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে দলের নেতা–কর্মীরা অংশ নেন। নেতা–কর্মীরা সামনে চলে এলে মেজাজ হারিয়ে ফেলেন গিয়াসউদ্দিন। নেতা–কর্মীদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন; ধমক ও ধাক্কা দেন। তাঁর সঙ্গে এসে সালাউদ্দিনও নেতা–কর্মীদের ধাক্কা দেওয়া শুরু করেন। তখন গিয়াসউদ্দিন সালাউদ্দিনকে থাপ্পড় দেন এবং তাঁকে সরিয়ে দেন। এ সময় মিছিলের সামনে বয়স্ক এক ব্যক্তিকেও ধাক্কা দেন তিনি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ঘটনার শিকার সালাউদ্দিন মুঠোফোনে গণমাধ্যম কে বলেন, ‘নদীর (নারায়ণগঞ্জের বন্দর) থেকে কিছু লোক এসে মিছিলের সামনে এসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে আমি তাদেরকে থামানোর চেষ্টা করি। তখন তিনি (জেলার সভাপতি গিয়াসউদ্দিন) আমাকে থাপ্পড় দেন। বিষয়টি কেউ হয়তো ভিডিও করেছে, পরে সেটি ভাইরাল হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, ‘মিছিল বের করার সময় অতি উৎসাহী কিছু কর্মী সিনিয়র নেতাদের পেছনে ফেলে দিয়ে সামনে এসে মুঠোফোনে সেলফি তুলছিল এবং বেয়াদবি করছিল। এতে সাংবাদিকদের ছবি তুলতে সমস্যা হচ্ছিল। তাদেরকে ধমক দিয়ে বারণ করার চেষ্টা করি, কিন্তু তারা শোনেনি। তখন আমি আমার লোককে থাপ্পড় দিয়েছি। কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সেটি ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে।’
বিষয়টি স্বীকার করে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক (খোকন) বলেন, শৃঙ্খলা ফেরাতে গিয়ে মেজাজ হারিয়ে দলের এক কর্মীকে থাপ্পড় দিয়ে শাসন করেছিলেন জেলার সভাপতি। বিষয়টি নিয়ে এর বাইরে কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।
তবে জেলা বিএনপির সভাপতির এবং মহানগর বিএনপির নেতাদের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন নেতা। দলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে জেলা সভাপতির এমন ঘটনায় তাঁরা বিব্রত। তাঁদের অভিযোগ, প্রতিবারই কর্মসূচিতে নেতা–কর্মীদের সঙ্গে জেলা বিএনপির সভাপতি এমন ঘটনা ঘটাচ্ছেন। তাঁর কারণে দলের কর্মসূচিতে অনেক নেতা–কর্মী আসতে চান না। পৃথকভাবে তাঁরা দলের কর্মসূচি পালন করছেন ।
কেউ কেউ আরো বলেছেন, বিএনপি রাজপথে আন্দোলন করে দলকে সংঘঠিত করা চেষ্টা করছে আর গিয়াস ও টিপুর মতো কিছু নেতা প্রকাশ্যেই কর্মীদের সাথে উগ্রতা দেখাচ্ছেন, গায়ে হাত তুলছেন। সেই আন্দোলনে কি করছে তা সকলেই জানেন। দুইজনই বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও আসলে তারা কি করে তা এই জেলাবাসী খুব ভালো করেই জানেন।









Discussion about this post