নরায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
ঈদকে সামনে রেখে দরিদ্র হকারদের কথা চিন্তা করে প্রশাসন ও রাজনীতিবিদদের সকলেই রমজানের এক মাস নারায়ণগঞ্জ শহরের ফুটপাতে পসরা নিয়ে ব্যবসা করা মৌখিক অনুমতি দিলেও শহরের চিহ্নিত চাঁদাবাজ চক্র বীরদর্পে একেবারেই প্রকাশ্যেই অগ্রিম বাবদ নিম্নে ৫ হাজার উর্দ্ধে হাজার টাকা অগ্রিম নিয়ে নিরীহ হকারদেরকে ফুটপাতে স্থান করে দিচ্ছে । আর এই বিশাল টাকার চাঁদাবাজির একটি অংশ অসাধু রাজনীতিবিদ, পুলিশের অসাধু কয়েকজন কর্মকর্তা এবং বিশাল চাঁদাবাজির যৎসামান্য কিছু অংশ বিশেষ পেশার কয়েকজন নিয়মিত আদায় করে নিচ্ছে ।
ঈদকে সমানে রেখে প্রায় কোটি টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা ।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে কয়েকজন হকার পৃথকভাবে বলেন, রমজান মাসে কিছু আয় করতে ধারদেনা করে ঈদের কিছু পন্য কিনে ফুটপাতে বসতে হয়েছে । যা কিছ আয় হবে তা দিয়ে আমাদের পরিবারের ঈদ করা হবে সুন্দরভাবে । এই আশায় ফুটপাতে দোকান নিয়ে বসতে এসে বিশাল ধান্ধাবাজদের কবলে পরতে হলো । কোন চাঁদাবাজি হরে না ফুটপাতে এমন কথা মেয়র, এমপি, এসপি জোড়ালোভাবে বললেও চাঁদাবাজরা শুনে না কারো কথা । প্রতিরাতেই থানার ভিতরে কি করে চাঁদাবাজরা ? কার সাহসে এমন চাঁদাবজি হচ্ছে তার খবর কি এসপি, এমপি, মেয়র জানেন না ? ফুটপাতের প্রত্যেকেই অগ্রিম টাকার পামাপাশি প্রতিদিন দফায় দফায় চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছে । যা কেউ দেখে না । এমন কঠোর ভাষায় চরম ক্ষোভের সাথে নানা প্রশ্ন ছুড়ে দেন হকারদের কেউ কেউ ।
নিত্যদিনের দফায় দফায় চাঁদাবাজির শিকার হকারদের অনেকেই আরো জানান, আমরা ফুটপাতে বসে দোকানদারী করি পেটের দ্বয়ে । কিন্তু আমাদের প্রতিদিন একেকটি দোকানের খরচা হয় ১২০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। আবার কোন কোন ফুটপাতের দোকানের খরচা হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত । শহরের মূল পয়েন্টের ফুটপাতের চাঁদা দিতে হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত । তাদের পুজিঁ বেশী আবার রোজিও বেশী বিবেচনা করেই চঁদা নেয় চাঁদাবাজরা ।
খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, ক্ষমতাশীন দলের গুটিকয়েক নেতার সমণ্বয়ে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের হকারদের কর্মকান্ড । বর্তমানে যে সকল সেক্টরগুলোতে ব্যাপক চাঁদা বাণিজ্য হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হকারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়। শহরের মাত্র দুই কিলোমিটারে ফুটপাত থেকে দৈনিক লক্ষাধিক টাকার বেশী চাঁদা আদায় করছে চাঁদাবাজরা।
শহরের ফুটপাত দখলকারী হকারদের পুঁজি করে নারায়ণগঞ্জের অসাধু একটি চক্র প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে যাচ্ছে । একই সাথে ফুটপাত দখল করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের নেতারা ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে মোটা অংকের অগ্রিম টাকা দিয়েই ফুটপাত কিংবা সড়কে স্থান দখল করতে হয় ।
শহরের চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের মূল হোতা রহিম মুন্সি, আসাদুজ্জামান আসাদ, আলমগীর হোসেন পলাশ, পুলিশ পরিদর্শক সুরুজ মিয়া, আরিফ ও সোহেল। এসব চাঁদাবাজরা প্রতি বছরে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে নেতা, পুলিশসহ অনেক সেক্টরে বিতরণ করে যাচ্ছে । প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের পর রহিম মুন্সি, আসাদুজ্জামান আসাদ, আলমগীর হোসেন পলাশ, পুলিশ পরিদর্শক সুরুজ মিয়া নিজেদের বন্টন বুঝে নিয়ে নেতাদের ও থানাসহ সকলের জন্য নির্ধারিত অর্থ বরাদ্ধ রাখে ।
খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ হর্কাসলীগের নামধারী সভাপতি রহিম মুন্সি শহরের চাষাড়াস্থ হর্কাস মার্কেট থেকে বঙ্গবন্ধু সড়কের আমান ভবন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে কয়েক যুগ ধরেই । এই সড়কের পূবদিক ২৫০ এর অধিক হকারের দোকান থেকে প্রতিদিন দোকান প্রতি ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে । প্রতিদিন আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা এবং মাসে প্রায় ৫ লাখ টাকা চাঁদা আদা করে থাকে। যা বছরের হিসেবে চাঁদা আদায় হয় আনুমানিক অর্ধ কোটি টাকা।
কথিত হর্কাস সংগ্রাম পরিষদের আহব্বায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ নিয়ন্ত্রন করেন বঙ্গবন্ধু সড়কের গলাচিপা থেকে চাষাড়া মার্ক টাওয়ার ও শহীদ মিয়ার পর্যন্ত । এ সড়কে আনুমানিক ১৫০-১৭০ টি হকারের দোকান রয়েছে। প্রতিদিন দোকান প্রতি ৫০ টাকা করে যা দাড়ায় আনুমানিক ১০ হাজার টাকা । মাসে চাঁদা আদায় হয় ৩ লাখ টাকা। বছরে চাঁদা আদায় করা হয় ৩৬ লাখ টাকা।
আলমগীর হোসেন পলাশ নিয়ন্ত্রন করেন ২ নং রেলগেইট থেকে ১ নং রেলগেইট পর্যন্ত। ফজর আলী মার্কেট থেকে উৎসব বাস কাউন্টার পর্যন্ত চেম্বার রোড সড়কের রেল লাইনের পাশে কম করে হলেও ২০০ টির অধিক দোকান। উত্তর পাশের প্রতি দোকান থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে ১০ হাজার টাকা, দক্ষিন পাশে ৫০ টাকা করে আরো ১০ হাজার টাকা করে মোট দৈনিক আদায় হয় নিম্নে ২০ হাজার টাকা হাজার টাকা । মাসে চাঁদার পরিমান দাঁড়ায় ৬ লাখ টাকা বছরে চাঁদা আদায় করে চাঁদাবাজ পলাশ । পলাশ নিজে আবার চাঁদা আদায় করতে লোক নিয়োগ করে দিয়েছে । যাদের একেক জনের বেতন প্রতিমাসে বেতন ১০ হাজার টাকা ।
২নং রেল গেইট পুলিশ বক্সের পুলিশ পরির্দশক সুরুজ মিয়া নিয়ন্ত্রন করেন মন্ডলপাড়া থেকে নগর পাঠাগার পর্যন্ত। তিনি এই সড়কের আনুমানিক ২০ টি ভ্যান গাড়ির দোকান থেকে প্রতি সপ্তাহে ভ্যান প্রতি ২০০ টাকা করে মাসে ১৬ হাজার টাকা ব্যক্তিগত ভাবে আদায় করেন। বছরে চাঁদা আদায় করা হয় ২ লাখ টাকা।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের গলি থেকে পপুলার হাসপাতালের গলি পর্যন্ত নিয়ন্ত্রন করেন আরিফ। এখানে দোকান বসে সব মিলিয়ে ১শ টির মতো। দোকান প্রতি চাঁদা তোলা হয় ১শ টাকা করে। দৈনিক ১০ হাজার টাকা হিসেবে মাসে উঠানো হয় ৩ লাখ টাকা। বছরে চাঁদা আদায় করা হয় ৩৬ লাখ টাকা।
কালীবাজার ব্যাংক মোড় থেকে ফ্রেন্ডস মার্কেট পর্যন্ত চাঁদা তোলেন সোহেল। এখানে দোকান আছে ১৫০টি। ৫০ টাকা করে টাকা দৈনিক ৭ হাজা ৫শ টাকা চাঁদা উত্তোলন করে থাকে। মাসে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বছরে চাঁদা আদায় করা হয় ৩০ লাখ টাকা।
তালিকার এ সকল ব্যক্তিরা নিরীহ হকারদের জিম্মি চাঁদাবাজদের কথিত কয়েকজন নেতার নামে হুমকি ধমকি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি । ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় দিয়ে এবং কিছু পুলিশ কর্মকর্তাকে মেনেজ করে চলছে চাঁদা তোলার মহা উৎসব চলছেই অভিরামভাবেই ।
নারায়ণগঞ্জ শহরে দফায় দফায় এমন চাঁদাবাজির বিষয়ে দায়িত্বশীলীল অনেকের সাথে কথা বলতে চাইলে অনেকেই বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে নিজেদের নাম প্রকাশ না করারও অনুরোধ করেছেন ।









Discussion about this post