সেই চাঞ্চল্যকর সাত খুনের ঘটনার পর নূর হোসেনের কেলেংকারীর আখড়া হিসেবে পরিচিত সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুর সেতুর নীচের অবৈধ ব্যবসা ও ট্রাকস্ট্যান্ডসহ আশেপাশের এলাকায় অপরাধীদের রাম রাজত্ব গুটিয়ে সরকারী সংস্থা মধ্যে স্থানীয় থানা, সড়ক ও জনপথ এবং বিআইডাব্লিউটিএ সহ সকল সংস্থা নজেদর দায় এড়ানোর চেষ্টা করে। এই শীতলক্ষা নদীর তীর কাঁচপুর ব্রীজের নীচ থেকে কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, এডভোকেট চন্দন কুমর সরকারসহ সাত জন কে নৃশংসভাবে হত্যা করে লাশ ট্রলারে তুলে শীতলক্ষ্যা নদীর মোহনায় ফেলে খুনিচক্র র্যাব সদস্যরা ও নূর হোসেন বীর বেশে ঘুরতে থাকে।
এমন নির্মম হত্যাকান্ডের ঘটনা ধরা পরার পর নূর হোসেনের সাম্রাজ্য আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে বিশাল অপরাধের প্রমাণ ধ্বংস করে নিজেদের কে সুরক্ষা রাখার চেষ্টা করে আইনশৃংখলা বাহিনীর অসাধু চক্র। ওই সময় নদীর তীরের ইট, বালু, পাথরের ব্যবসায়ীদের গুটিয়ে দিলেও ধীরে ধীরে আইনশৃংখলা বাহিনীর ওই অসাদু চক্রের দোষরদের ফের ম্যানেজ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুর সেতুর নিচে ছয় মাস ধরে বিআইডাব্লিউটিএর জায়গা দখল করে রমরমা বালুর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন অসংখ্য বালু ব্যবসায়ী চক্র।
সেতুর নিচে প্রতিদিন বালু নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত ট্রাকগুলোর যাতায়াতে সেতুর পিলার দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
দীর্ঘদিন যাবৎ এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকা পালন করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। পুরো এলাকাবসীর অভিযোগ একটি প্রভাবশালী চক্র স্থানীয় সংসদ সদস্যের নাম ও তার পরিবারের সকল সদস্যদের নাম ব্যবহার করে স্থানীয় থানা, নৌ থানা, নাসিক কাউন্সিলর, সড়ক ও জনপথ এবং বিআইডাব্লিউটিএ – এর অসাধু চক্রকে নিয়মিত মোটা অংকের মাসোয়ারা দিয়ে অবৈধ এই ব্যবসা অব্যাহত রেখে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করে নির্মিত শীতলক্ষা সেতু এবং ওয়াকওয়ে ধ্বংস করে তাদের অবৈধ ব্যবসা চালিয়েই যাচ্ছে।
সরেজমিনে গত কয়েকদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সেতুর নিচে দেখা যায় সোহান এন্টারপ্রাইজের মালিক শফিকুল ইসলাম ও মুক্তার এন্টারপ্রাইজের মালিক মুক্তার হোসেনসহ আরো কয়েকজনের ট্রাক বালু নিয়ে যাচ্ছে। কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই বালুর ব্যবসা করছেন তাঁরা। এতে শুধু সেতুর ক্ষতি হচ্ছে না সেতুর নিচে সরকারি উদ্যোগে তৈরি ওয়াকওয়েরও ক্ষতি হচ্ছে। এই বালু ব্যবসার জন্য ব্যবসায়ীরা ওয়াকওয়ের সব গাছ কেটে ফেলেছেন।
বালুর ট্রাকে ক্ষতিগ্রস্ত সেতুর পিলার দেখে পথচারীদের অনেকেই জানান, কোটি কোটি টাকা খরচ করে ওয়াকওয়ের সৌন্দর্যবর্ধক গাছ লাগিয়েছিল সরকার। কিন্তু বালু ব্যবসায়ীরা সব গাছ কেটে ফেলে সেই জায়গায় বালু ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এতে পরিবেশ যেমন দূষণ হচ্ছে, তেমনিভাবে সৌন্দর্য হারাচ্ছে ওয়াকওয়ে।
সকালে ও বিকেলে ওয়াকওয়েতে হাঁটতে আসা সিদ্ধিরগঞ্জের আটি এলাকার বাসিন্দারা জানান, সরকার কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে শীতলক্ষ্যা নদীর পার দিয়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করেছেন। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই ওয়াকওয়ে দিয়ে হাঁটাচলা করে থাকেন। বালু ব্যবসায়ীদের কারণে ওয়াকওয়ে দিয়ে হাঁটাচলা করতে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
শিমড়াইল এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার জানান, সেতুর নিচে বালু ব্যবসা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। কাঁচপুর সেতুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো কারণে সেতুটির ক্ষতি হয়ে যায় তাহলে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থা একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।
তাই অবৈধ বালু ব্যবসা বন্ধ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সকলেই ।
নাম প্রকশ না করার অনুরোধে এলাকার পথচারী অনেকেই বলেন, সেই নূর হোসেনের দোষররা ই আবার এই ব্রীজ ধ্বংস করে ব্যবসা চালাচ্ছে স্থানীয় এমপি, এমপির ভাই এমপি, এমপির পোলা ও এমপির প্রভাবশালী ভাতিজার নাম ব্যবহার করে । এত জায়গা খালি থাকতে সেতুর নিচে বালু ব্যবসা পরিচালনা করছেন কয়েকজন ব্যক্তি। শুনেছি প্রশাসনকেও ম্যানেজ করেই তাঁরা এই ব্যবসা পরিচালনা করছেন। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বালু ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম ও মোক্তার হোসেন বলেন, ‘জায়গাটি খালি পড়ে থাকায় আমরা বিআইডাব্লিউটিএর অনুমতি নিয়েই বালুর ব্যবসা করছি।’ বালুর ট্রাক আসা-যাওয়ায় সেতুর পিলারের ক্ষতি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তাঁরা জানান, ‘আমরা কোনোভাবেই সেতুর পিলারের ক্ষতি হোক এটা চাই না।’
নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌস গণমাধ্যমকে বলেন, নদীর তীরের জায়গাটি বিআইডাব্লিউটিএর কর্মকর্তারা দেখাশোনা করছেন। তাই তাঁরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
অথচ খোজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাহানা ফেরদৌসের নাম ব্যবহার করে সড়ক ও জনপথের পিয়ন ও স্যারের ড্রাইভার পরিচয় দানকারীরা প্রতি মাসে নিয়মিত সকল দোকান, টং, ঘর, অবৈধ সকল কাঁচা পাকা স্থাপনা থেকে মাসোয়ারা আদায় করে যাচ্ছে। সড়কের পাশের সকল অবৈধ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোয়ারা না পেলে ফের উচ্ছেদ নামক নাটক মঞ্চায়ন করে এই সড়ক ও জনপথ ।
অন্যদিকে নারায়ণগঞ্জ বিআইডাব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক শহিদুল্লাহ জানান, ‘আমি নারায়ণগঞ্জ কার্যালয়ে নতুন যোগদান করেছি। এ বিষয়ে তদারকি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক জানান, কাঁচপুর সেতুর নিচে অবৈধভাবে কেউ বালুর ব্যবসা পরিচালনা করলে তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্টসহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেতুর পিলারের ক্ষতি হলে তাদের কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না।









Discussion about this post