সম্প্রতি রফিকুল ইসলামের তথ্য গোপন করে একটি ব্যাংক থেকে বিক্রি করে দেওয়া জমি বন্ধক রেখে ২৭০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার বিষয়টি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। তার ব্যাপারে অভিযোগ পড়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনেও। এসব থেকে বাঁচতে গোপনে বিদেশে পাড়ি জমাতে পারেন রফিক ও তার ভাই মিজান এমনটাও ধারণা অনেকের
রূপগঞ্জের নাওড়া এলাকায় এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম আন্ডা রফিক । এই আন্ডা রফিক বর্তমানে রফিকুল ইসলাম । রঙধনু গ্রুপের কর্ণধার। আন্ডা রফিক ও তার ভাই মিজানুর রহমান ওরফে মিজান রূপগঞ্জে তান্ডব চালাতে মহাপটু । তাদের গড়ে তোলা সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতনে রীতিমত দিশেহারা স্থানীয়রা।
তবে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনীর ভয়ে কেউ সেখানে নিরাপদে নেই এবং মুখ খুলতে সাহস পান না।
তাদের হামলায় অন্তত দুইশ পরিবার ঘরছাড়া বলে জানান ভুক্তভোগীরা। এমনকি রফিক ও তার বাহিনীর কু নজর থেকে রক্ষা পান না নারীরাও। শুধু মানুষের জমি নয়, রফিক দখল করেছেন মাদ্রাসা, ঈদগাহ আর কবরস্থানের জমিও। তার বিশাল অট্টালিকাটিতেও আছে ঈদগাহের ৩২ দশমিক ৫০ শতাংশ জায়গা, কবরস্থানের ৩১ শতাংশ আর মাদ্রাসার ২৬ শতাংশ জায়গা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রফিক ওরফে আন্ডা রফিকের বাহিনীর লোক হিসেবে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে অস্ত্র, মাদক ও নির্যাতন মামলার আসামি আব্দুস সালামের ছেলে বিল্লাল; অস্ত্র, জমিদখল ও নির্যাতন মামলার আসামি আফাজউদ্দিনের ছেলে রুবেল; অস্ত্র, মাদক, জমিদখল ও নির্যাতন মামলার আসামি এছেকের ছেলে জাহিদ। রফিক-মিজানের জমিদখল, মাদক কারবার, খুন বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণে সহযোগীদের অন্যতম অস্ত্র, মাদক ও জমিদখল মামলার আসামি আলী মিয়ার ছেলে মোজাম্মেল, সিরাজুলের ছেলে মিনারুল ও আমির হোসেনের ছেলে ওমর ফারুক, মজিবর রহমানের ছেলে শাহীন মিয়া।
ভুক্তভোগী জয়নাল মিয়া জানান, আন্ডা রফিক তার বাহিনী নিয়ে আমাদের সঙ্গে এসব করে। একটা ছেলে আছে নাপতা দুলাল। যদি জমি না দেয় তাহলে ওরে পাঠায়। ওরে দিয়া সবকিছু করায়। ওর ভাই আছে আলাল আলাউদ্দিন। তার সাথে ৫০-৬০ জনের বাহিনী আছে, সবার সঙ্গে অস্ত্র থাকে। কিন্তু পুলিশ কখনো তাদের অ্যারেস্ট করে না। কেন ? কীসের এত ভয় ? কীসের এত প্রভাবশালী এই আন্ডা রফিক ? মানুষের নিজের জমি নিজের ঘর, কিন্তু নিজে বলতে পারে না ঘরটা আমার। আন্ডা রফিক জমি ছাড়া কিছু বোঝে না। যে নাকি নিজের রাজপ্রাসাদ করসে কবরের ওপরে।
ভুক্তভোগী কবির হোসেন বলেন, এই নাওড়ার কোনো মানুষ বাদ নেই। মানুষকে জ্বালিয়ে ফেলছে সে। হিন্দু মুসলমান বাদ নেই, সবার জায়গা বালু ফেলে ভরে ফেলছে। না দিলে ডেকে এনে বাহিনী দিয়ে মারধর করে। এরাই আন্ডা রফিক আর কুত্তা মিজান। এরা দুই ভাই মানুষকে লাঞ্ছনা করে। আজ ৭ মাস ধরে আমরা বাইরে আছি। আমাদের কিছু আর বাকি নেই। সব শেষ করে দিয়েছে। আমার ৬টা ছাগল ছিল আর দুটো গাভী ছিল, আমি ঘর থেকে একটা সুতাও নিতে পারিনি। আমি এখন সর্বস্বান্ত।
ভুক্তভোগী সালমা আক্তার রীনা বলেন, আমি আমার ইজ্জতের ভয় করছিলাম, আমার মা মুরুব্বি ডায়বেটিসের রোগী। যদি ওনার কিছু হয়ে যায়, আমাদের কাছে কোনো পুরুষ মানুষ নাই। আশেপাশের কেউ আসে নাই, সবাই দরজা বন্ধ করে লাইট অফ করে ছিল। আমার বাড়িতে এত লোকে হামলা করসে যে কেউ আমাদের পাশে এসে দাঁড়াবে বা কারও হাতে পায়ে ধরবো ওরকম কোনো লোক নেই। আমার মেয়েকে আমি এক হাতে নিসি আর মোবাইলটা এক হাতে নিসি। ওরা আমার ঘরে দলবল মিলে কুপিয়েছি। ওই রাতে যে আমি ঘর থেকে বের হয়েছি আর ঘরে যেতে সাহস পাইনি।
ভুক্তভোগী নাছিয়া খাতুন বলেন, ওরা আমাদের ঘরের সব নিয়ে গেছে। আমাদের কিছু রাখে নাই। ছাও পোনা নিয়া আমরা খোলা আকাশের নিচে বের হয়েছি। আমরা আর থাকতে পারি নাই ওদের নির্যাতনে।
ভুক্তভোগী আফরোজা বেগম বলেন, আজ আমাদের কিছু নেই। হামলা করেছিল, এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের হয়েছি। ঝি পুত নিয়ে এখন বাপের বাড়িতে থাকি। পড়ালেখা করাতে পারি না সন্তানদের মাদ্রাসায় দিতে পারি না, এই আন্ডা রফিকের জন্য। আল্লাহ যেন তার বিচার করে।
ভুক্তভোগী ফজলু মিয়া বলেন, ২০ থেকে ৫০ জনের নিচে তারা যায় না। দাঁ-কুড়াল নিয়ে তারা যায়। সুন্দরী মেয়ে থাকলে তারা বলে ঘর থেকে বের করে দিবা। টাকা চায়, এদিকে বাড়ি মারে ওদিকে বাড়ি মারে। এই দরজা ওই দরজায় বাড়ি মারে। পাকিস্তানিদের মত হামলা করতাসে। আমার ছেলেরে মারধর করে বস্তায় ভরসে পরে আমরা স্বীকার করছি বাড়িঘর দিয়া দিমু।
ভুক্তভোগী এক নারী বলেন, মেয়েদের ওপরও হামলা করে। একটা নারী যে থাকবে নিরাপদে ঘরে মনে করেন, যে মেয়েটারে পছন্দ হইব ভাবী হোক চাচী হোক মামী হোক তারেই ঘর থেকে টেনে নিয়ে বালুচরে নিয়ে যাবে। দিনেই থাকতে পারে না, ঠিকমত রাতে কীভাবে থাকবে? আন্ডা রফিক আর তার ভাই মিজান এখন, তারাই এসব করছে। তারা মানুষের পাশে গরিবের পাশে না দাঁড়িয়ে তাদের থেকে লুটপাট করে নিচ্ছে। নিজের সন্তান নিয়ে কীভাবে আমরা ঘরে থাকব?
ভুক্তভোগী রাজিয়া বেগম বলেন, ঘর দুয়ার নিসে না। আমার এক পোলারে পা ভাইঙ্যা লাইসে, ডেনা ভাইঙ্যা লাইসে মোচরাইয়া। বড় পোলার মাথায় কোপ দিসে। এক নাতনিরে বেইজ্জতি করতে নিসিলো পরে গেসিগা।
ভুক্তভোগী নজরুল ইসলাম বলেন, আমার এক ভাইকে গুলি করেছে। আমাদের মারধর করছে। মারধর করে বাড়িঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, এখন আমাদের দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। মানুষকে জোর করে ধরে মারছে, তার সম্পত্তি কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে। তারা বিচার পাচ্ছে না। একটা কথা আছে না, বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে। অনেক সময় বিচারের বাণী কাঁদে। কারণটা হচ্ছে, একটা সার্কেল পর্যন্ত করা যাচ্ছে তার ওপরে করা যাচ্ছেনা। কিন্তু এটা করা উচিত, কারণ অপরাধীরা সবাই সমান। আমাদের দেশে যারা বড় বড় অপরাধী তারা অপরাধ করে অনেক সময় পার পেয়ে যায়। এটা যতদিন না আমরা বন্ধ করতে পারব ততদিন আমাদের দেশে এটি থাকবে। তাই আমাদের রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এখনো আইনের শাসন আমরা পুরোপুরি প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি।
রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জুবায়ের হোসেন বলেন, আমাদের পুলিশ সুপারের নির্দেশ একটাই, কোনো সন্ত্রাসী মাদক ব্যবসায়ীর অবস্থান নেই। এদের যে কোনো মূল্যে আমরা আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করব। আপনাদের ভয়ের কোনো কারণ নেই, আপনারা আসবেন, সমস্যা বলবেন, আমরা সেই মোতাবেক আইনের মধ্যে থেকে ব্যবস্থা নেব।
শিশু স্বাধীন খুনের পেছনে রফিক-মিজান, আহাজারি স্বজনদের
রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নে বালু নদী থেকে সম্প্রতি উদ্ধার করা হয় ওসমান গণি স্বাধীন (৯) নামে এক শিশুর লাশ । তাকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্বজনদের। পরিবারের দাবি, বসতভিটা লিখে না দেওয়ায় একই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও রংধনু গ্রুপের মালিক রফিকুল ইসলাম ওরফে আন্ডা রফিক এবং তার ভাই মিজানুর রহমান ওরফে কুত্তা মিজানের নির্দেশে স্বাধীনকে খুন করে ক্যাডার বাহিনী।
গত ১ ডিসেম্বর বিকেলে স্বাধীন রূপগঞ্জের বসুলিয়ায় মেলা দেখতে যাবার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়েছিল। রূপগঞ্জের নাওড়া গ্রামের বাসিন্দা শাহিনুর রহমানের ছেলে ওসমান গনি স্বাধীন। নিখোঁজের তিন দিন পর ৪ ডিসেম্বর বালু নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ।
তার মা উম্মে হানি মুন্নী এ বিষয়ে বিচার চেয়ে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমার ছেলে সারাক্ষণ আমাকে মা মা করে ডাকতো, আজ আমার ছেলে ডাকে না। অন্ধকার কবরে শোয়ায় রেখে আসছি আমার ছেলেকে।
উম্মে হানি মুন্নী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, আমাদের বাড়িটি রফিকুল ইসলামকে দিয়ে দিলে আমার শিশু সন্তানটির এমন করুণ পরিণতি হতো না। রফিকুল ইসলামের চাওয়া যে কত গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের ৩৫ শতাংশের বসতভিটাটি যে তার খুবই প্রয়োজন ছিল, সেটা আমার সন্তানকে মেরে রফিকুল ইসলাম বুঝিয়ে দিয়েছেন। রফিকুল ইসলাম জায়গার জন্য এমন জঘন্য কাজ করবেন, সেটা বুঝতে পারলে অনেক আগেই বাড়িটা দিয়ে দিতাম।
৯ বছরের শিশুটির লাশ যারা দেখেছেন, সবাই কেঁদেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, সবাই আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে বিচার দিয়েছেন। কারণ তার লাশ যাতে শনাক্ত না করা যায়, পুরো মুখ থেঁতলে দেওয়া হয়েছে। পুরো শরীর এসিড জাতীয় কিছু দিয়ে ঝলসে দিয়েছে। আমি অবুঝ ওসমান গণি স্বাধীনের ওপর এমন হিংস্র আক্রমণের বিচার চাই। আমাদের সন্তানকে এত বেশি কষ্ট দিয়ে মেরেছে যে, আমাদের বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল- এই লাশটি আমাদেরই সন্তান। পরনের প্যান্ট দেখে আমরা ওসমান গণিকে শনাক্ত করি। লাশ উদ্ধারে অংশ নেওয়া নৌ-পুলিশের সদস্যরাও অনেক আফসোস করে বলেছেন, এমন বীভৎস ও নৃশংসভাবে কাউকে হত্যা করা লাশ এর আগে কখনো তাদের উদ্ধার করতে হয়নি। প্রয়োজনে আপনারা নৌ-পুলিশের উপ-পরিদর্শক আসাদুজ্জামান সাহেবের কাছে যান। উনি আমার সন্তানের লাশ উদ্ধার করেছেন। উনি বলবেন কতটা নির্মম ছিল এ হত্যাকাণ্ড।
রাজাখালি নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উপ পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, লাশ উদ্ধারের পর পরিবারের সদস্যরা এসে তার কাপড় দেখে শনাক্ত করেন, এটি তাদের সন্তান। তার চোখ ছিল অর্ধেক বের করা, অর্ধগলিত। এভাবেই পাওয়া গেছে লাশ।
স্বাধীনের বাবা শাহিনুর বলেন, রফিক-মিজানের লোক রুবেল, বিল্লাহ, মোজাম্মেল ও শাহীন এরা এসে বাড়িতে হুমকি-ধমকি দেয়। এখন যাকে পাবে একজন একজন করে মারবে বলে তারা বলেছিল। রফিকের লোক ফারুক বলেছিল, এখন কবরে গিয়েও শান্তি পাবি না। এর এক সপ্তাহ পরেই আমার ছেলেকে আর পাইতাসিলাম না। ছেলের লাশ কার্যালয়ের সামনে দেখা গেছে। দেখা যাবার পরে সেখান থেকে আমার ছেলে নিখোঁজ। আমার বিশ্বাস ওরা ওই যায়গা থেকে আমার ছেলের লাশ গুম করেছে। সিসিটিভি দিয়ে যদি সঠিকভাবে এটা দেখা যায়, যদি ডিবি-সিআইডি পুলিশ দেখে তাহলে এটি পাবে।
তিনি বলেন, ১ ডিসেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বাধীন নিখোঁজ হলে আত্মীয়-স্বজনসহ ২০-৩০ জন মিলে অনেক খোঁজাখুঁজির পরও পাইনি। এরপর রাত ৮টার দিকে তার সন্ধান চেয়ে মসজিদের মাইকে মাইকিং করতে গেলে মোয়াজ্জিন জানান, রফিকুল ইসলামের নিষেধ আছে। এ বিষয়ে মাইকিং করা যাবে না। এখন তার ক্যাডার বাহিনী সব জায়গায় বলে বেড়াচ্ছে, আমার সুস্থ-সবল সন্তানটি নাকি প্রতিবন্ধী ছিল। সে পানিতে পড়ে মরে গেছে! আপনারা আমাদের এলাকায় গিয়ে খবর নেন, সে আসলে প্রতিবন্ধী ছিল কি না!
সন্তানের লাশ দেখতে দেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, আমার সন্তানের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে বাড়ি নিয়ে আসি। বাড়িতে এসে দেখি রফিকুল ইসলামের লোকজন হুজুর নিয়ে অপেক্ষা করছে। বাড়িতে গাড়ি আসার পর তারা ওসমান গণি স্বাধীনের কাছে আর আমাদের যেতে দেয়নি। আমার সন্তানের মরদেহটাও শেষবারের মতো কাউকে দেখতে দেয়নি। রফিকুল ইসলামের নির্দেশে পরিবারের অনুমতি না নিয়েই রাতের অন্ধকারে আমার শিশুটিকে কবর দেয়।
শাহিনুর বলেন, হত্যাকাণ্ডে আমাদের করা অভিযোগটি আমরা চাই সিআইডি নতুবা পিবিআই তদন্ত করুক। এই দুটি সংস্থার ওপর আমাদের আস্থা আছে। আমাদের বিশ্বাস সিআইডি বা পিবিআই তদন্ত করলে হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য উদঘাটন হবে ও প্রকৃত অপরাধীরা শনাক্ত হবে। পুলিশ এ হত্যাকাণ্ড তদন্ত করলে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন হবে না। কারণ এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে আমাদের করা অভিযোগই নিতে পারেনি রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। তাকে নৃশংসভাবে খুন করে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে নদীতে ফেলা হয়। আমাদের সন্তানকে খুন করা হয়েছে একজন প্রভাবশালীর নির্দেশে। অবুঝ সন্তান হত্যার বিচার পেতে আমরা থানায় গিয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারিনি। থানা তার নামে মামলা না দিয়ে অপমৃত্যুর মামলা করার পরামর্শ দেয়।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আপনাদের সহযোগিতা ছাড়া আমরা সন্তান হত্যার বিচার পাব না। কারণ আমার অবুঝ সন্তানটি হত্যা করা হয়েছে আমাদের ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও রংধনু গ্রুপের মালিক আন্ডা রফিক ও তার ভাই কুত্তা মিজানের নির্দেশে। তারা এলাকায় এত বেশি প্রভাবশালী যে, সন্তানকে কবর দেওয়ার পর আমরা বাড়িতে থাকতে পারি না। বিচার কীভাবে পাব? তাদের বাহিনী আমার সন্তানের হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বললে আমাদেরও মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। বাড়িতে পাহারা বসিয়েছে। নিজেদের জীবন বাঁচাতে বাড়ি ছেড়ে আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি।
সন্তানের প্রকৃত অপরাধীদের বিচার চেয়ে শাহিনুর বলেন, আমি একা বললে, এ হত্যাকাণ্ডের বিচার কখনোই হবে না। কারণ আন্ডা রফিক ও তার ভাই কুত্তা মিজান কায়েতপাড়া ইউনিয়নের সর্বত্র ভয়, আতঙ্ক আর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে রেখেছে। আমাদের এলাকায় রফিক-মিজানের শাসনই শেষ কথা। তাদের কথা মনে হলে এই ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ নিঃশ্বাস নিতেও ভয় পায়।
নিজের বাড়ি না দেওয়াতে রফিকুল ইসলাম নাতিকে খুন করেছেন দাবি করে স্বাধীনের দাদা রেজাউল আলম বলেন, রফিকুল ইসলাম ২ মাস আগে আমাদের বাড়ি নামমাত্র দামে কিনতে তার বোনকে পাঠান। তার সঙ্গে আরেকজন নারীও ছিল। তারা আমাদের বাড়িটি রফিকুল ইসলাম কিনতে চান বলে জানালে বলি, মাগো বাড়ি বিক্রি করলে আমরা থাকবো কই। তারপরও যদি কখনো বিক্রি করি, আমি নিজেই রফিক সাহেবের বাড়িতে গিয়ে দিয়ে আসবো, তোমাদের আর কষ্ট করে আসতে হবে না।
তিনি বলেন, এরপর থেকে রফিকুল ইসলাম শুরু করেন ক্যাডার বাহিনী দিয়ে হামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন, চাঁদাবাজি। আমার নাতিকে খুন করার দুই মাস আগে থেকে একাধিকবার বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। দোকানে দুই দফা আমার ওপর হামলা করে মারধর করে। পরে আমাদের দোকানটি বন্ধ করে দিয়েছে। তারপরও পরিবার নিয়ে থাকার বাড়িটি বিক্রি করতে রাজি হইনি। আমার নাতিকে হত্যার এক সপ্তাহ আগে রফিক-মিজানের ক্যাডার ফারুক বাড়িতে এসে হুমকি দিয়ে যায়। আমার ছেলেকে রফিকের চিহ্নিত ক্যাডার ফারুক পিস্তল দেখিয়ে বলে এমন মারা মারবো, কবরে গিয়েও শান্তি পাবি না। এসব ঘটনার ঠিক এক সপ্তাহ পরে স্বাধীন নিখোঁজ হয়। এরপর আমরা তার বীভৎস লাশ পাই।
জাকির নামে এক মাঝি, যার নৌকার করে স্বাধীনের মরাদেহ হাসপাতালে নেওয়া হয়, তিনি বলেন, আমার ট্রলারে পুলিশ এসে লাশ দেখে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তার মুখে আঘাত, চেহারা চেনা যায় না।
আরও কয়েকজন যারা লাশ দেখেছেন তারা জানান, লাশ দেখে বোঝাই যায় এটা মেরে ফেলা হয়েছে এমন। ৯ বছরের বাচ্চাটা সুন্দর ছিল, তবে এভাবে চেহারা দেখেই বোঝা যায় এটা হত্যাকাণ্ড।
স্বাধীন ইস্যুতে খিলগাঁও থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়। মামলার বিষয়ে খিলগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এটা তো আমরা খিলগাঁও থানা পুলিশ তদন্ত করছি না। তদন্ত করছে নৌ পুলিশ। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আসার পর যেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন সেভাবে নেওয়া হবে।
ঢাকা জেলা নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার (এসপি) গৌতম কুমার বিশ্বাস বলেন, ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাবার পর বলতে পারবো এটি স্বাভাবিক মৃত্যু না অস্বাভাবিক মৃত্যু। শিশুটি কীভাবে নদীতে লাশ হয়ে আসলো এ ব্যাপারে আমরা তদন্ত করছি, তদন্ত শেষে আমরা বিস্তারিত জানতে পারব।
এ ব্যাপারে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, বালু নদীতে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি আমাদের নৌ পুলিশের আওতাভুক্ত। এ ব্যাপারে খিলগাঁও থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। সেটির তদন্ত এগিয়ে চলছে।
পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি সৈয়দ নুরুল ইসলাম গণমাধ্যম কে বলেন, আমরা প্রায়শই দেখেছি যে নদীগুলোতে অজ্ঞাত পরিচয় মরদেহ ভাসে। পরবর্তীতে তদন্তের মাধ্যমে বের করা হয় ডাম্প করা স্থান। অনেক সময় ক্রাইম জোন হিসেবে তারা এসব জায়গাকে বেছে নেয়। যে বাচ্চাটার কথা বলা হয়েছে সেটা নৌ পুলিশের তদন্তাধীন। তদন্তকারী সংস্থা যারা আছে তারা এ ব্যাপারে তদন্ত করছে।
রূপগঞ্জের এক সময়ে বাড়ি বাড়ি ও হাটে হেটে হেটে ডিম বিক্রেতা রফিক কে সকলেই এখনো আন্ডা রফিক হিসেবেই চিনেন । বসুন্ধরা গ্রুপের ভূমিদস্যূদের সাথে হাত মিলিয়ে এই আন্ডা রফিক দিন কে রাত আর রাত কে দিন বানানো ছাড়া সকল ধরণের অপরাধ ই করে আসছিলো । অভিযোগ রয়েছে এই আন্ডা রফিক বসুন্ধরা গ্রুপের ভূমিদস্যূদের সাথে দ্বন্ধে জড়িয়ে বেড়িয়ে আসছে একের পর এক অপরাধের চিত্র । একদিকে আন্ডা রফিকের অপকর্ম নিয়ে ভূমিদস্যু ও নানা অপরাধের হোতা বসুন্ধরা গ্রুপ তাদের নিয়ন্ত্রিত কয়েকটি মুখপাত্র কে ব্যবহার করে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে আবার সেই আন্ডা রফিক যিনি এক সময় বসুন্ধরা গ্রুপে লাঠিয়াল বাহিনীর প্রধান হিসেবে কাজ করে এক অপরকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বাণিয়েছেন তারাই বর্তমানে তৈরী করেছে একে অপরের সাথে দা কুমড়া সম্পর্ক । আর এমন দা কুমড়ার সম্পর্কের জের ধরে অপরাধের সকল ফিরিস্তি উঠে এসেছে নিজ নিজ (মূখপাত্র) প্রচার মাধ্যমে ।









Discussion about this post