সাতই জানুয়ারির নির্বাচনে যেমন বিএনপি নেই, তেমনি নেই আরো কিছু উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক দল। বিরোধী বিএনপিসহ অন্য দলগুলো এই নির্বাচনকে ‘একতরফা’ বলে অভিযোগ তুলেছে।
ফলে এই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মাঠে নামিয়ে নির্বাচন জমজমাট করার চেষ্টা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এর বাইরে জাতীয় পার্টি ছাড়াও নির্বাচনে আছে বেশ কিছু ছোট দল।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচন কতটা জমে উঠলো সেটা একটা বড় প্রশ্ন। ভোটারদের অংশগ্রহণ কেমন হবে সেটাও দেখার বিষয়।
ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ। নির্বাচনী আসন হিসেবে এর নাম নারায়ণগঞ্জ-১। সেখানেই ভক্তবলী নামের এক গ্রামে বেশ বড় একটি একটি নির্বাচনি সভা দেখা গেলো।
সভাটি কেটলি মার্কায় স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভুইয়ার। মি. ভুইয়া আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা। তার প্রচারণাগুলোতে বেশ লোকসাগম হচ্ছে।
ভক্তবলী থেকে এগিয়ে ইছাখালী ব্রিজের গোড়ায় গিয়ে দেখা গেলো কয়েক হাজার নারী-পুরুষের খণ্ড খণ্ড মিছিল। কোন কোন মিছিলে আছে ব্যান্ড পার্টির বাদ্য-বাজনা। পুরো এলাকা মুখর নৌকার শ্লোগানে।
নৌকা এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী যখন পাড়া-মহল্লা মাতিয়ে রেখেছেন তখন বসে নেই এই আসনের আরেক আলোচিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার।

একইভাবে পাড়া-মহল্লায় জোর প্রচারণা চালাচ্ছেন নৌকার প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী। প্রতিদিনই হাজির হচ্ছেন বড় বড় মিছিল নিয়ে। কিংস পার্টি হিসেবে পরিচিত আলোচিত দল তৃণমূল বিএনপি’র শীর্ষ নেতা হওয়ায় তৈমুর আলমকে নিয়েও ভোটারদের আগ্রহ আছে। তৈমুর আলম প্রতিদিনই নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে এসে গাড়িবহর নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন।
সবমিলিয়ে নারায়ণগঞ্জ -১ আসনের সবখানেই ভোটের আমেজ স্পষ্ট।
আব্দুল খালেক নামে একজন ভোটার বললেন, এই আসনে অন্তত চারজন প্রার্থী শক্তিশালী। তারা সবাই মাঠে থাকায় ‘হাড্ডাহাড্ডি লড়াই’ হবে।
ভোটার আনতে বড় বাধা ‘সহিংসতার ভয়’
বিএনপি বিহীন এবারের নির্বাচনকে জমজমাট এবং নির্বাচনে ভোটার টানার জন্য আওয়ামী লীগের যে কৌশল তার বড় অংশ জুড়েই আছে স্বতন্ত্র এবং অন্য ছোটদলগুলোর প্রার্থীদের মাঠে নামানো।
রূপগঞ্জে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়াও তৈমুর আলম খন্দকারের ব্যক্তিগত পরিচিতির কারণে ভালো অবস্থায় আছে তৃণমূল বিএনপি। আছে লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সাইফুল ইসলাম।
শক্তিশালী এই চার প্রার্থী ভোটারদের নিবাচনে উৎসাহী করে তুলতে পারলেও শেষ পর্যন্ত ভোটারদের কেন্দ্রে আনা যাবে কি-না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে নৌকার প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর। যার মূল কারণ তাদের ভাষায় নৌকার প্রার্থীর পক্ষ থেকে ভয়-ভীতি দেখানো।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভুইয়া বিবিসি বাংলাকে বলেন, নির্বাচনে ভোটারদের আগ্রহ আছে, উৎসবও আছে। তবে তারা শেষ পর্যন্ত ভোট দিতে আসবে কি-না তা নিয়ে সন্দিহান তিনি।
“নৌকার প্রার্থীর লোকজন, তারা কিছু আতংক ছড়াচ্ছে। বলছে কেটলি মার্কায় ভোট দিলে বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানির লাইন কেটে দেয়া হবে। এবং বিভিন্ন ভাতা আছে সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।”
তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারও অভিযোগ করছেন যে, নৌকার প্রার্থীর সমর্থকরা নৌকার বাইরে অন্য মার্কায় ভোট না দিতে ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন ভোটারদের। এতে হয়তো ভোটাররা ভোট দিতেই যাবেন না।
তিনি বলছিলেন, “এখানে নৌকার প্রার্থীর যে দাপট, তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে যেন আমরা এজেন্ট না পাই। হুমকি দেয়া হচ্ছে যে ৭ই জানুয়ারির পর দেখে নেয়া হবে। এমন হলে তো ভোটাররা ভয়ের মধ্যে থাকবে।”
তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজী এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, কোনরকম ভয়-ভীতি দেখানোর সঙ্গে তারা নেই। ভোট হবে উৎসবমুখর পরিবেশে।
“এখানে কোন আতংকের পরিস্থিতি নাই। যেহেতু বিএনপি মাঠে নেই, আতংকও নেই। আমি কাউকে ভয় দেখাতে বলি না। এটা কোনকালেই এখানে হয়না। এখানে নির্বাচন কমিশন খুব শক্তহাতে এগুলো দেখছে।”
নারায়ণগঞ্জ ১ আসনে এই তিন প্রার্থী ছাড়াও আরো আছেন চেয়ার প্রতীকে ইসলামিক ফ্রন্টের একেএম শহীদুল ইসলাম, ট্রাক প্রতীকে মো. জয়নাল আবেদীন চৌধুরী, ঈগল প্রতীকে গাজী গোলাম মুর্তুজা, আলমিরা প্রতীকে মো. হাবিবুর রহমান এবং জাকের পার্টির মো. জোবায়ের আলম ভুইয়া।
সব মিলিয়ে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগ থাকলেও এটা স্পষ্ট যে, নারায়ণগঞ্জ ১ আসনে ভোটের লড়াই জমে উঠেছে। কিন্তু সবখানে পরিস্থিতি এমন নয়।









Discussion about this post