নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের একেকজন ভূমি কর্মকর্তা যেন একেকজন ধনদেবতা। ভূমি কর্মকর্তা ছাড়াও একেকজন ওমেদার কি পরিমাণ দূর্ণীতির সাথে জড়িত তা অনুমান করাও কঠিন। পিয়ন পেসকার থেকে শুরু করে শীর্ষ কর্তাদের অনেকেই (ভূমি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা) কি পরিমাণ অপরাধের সাথে জড়িত তা প্রায় সকলের জানা থাকলেও কেউ টু শব্দটিও করতে সাহস করে না ।
একেক জন রাজনীতিবিদ নানা দূর্ণীতির কারণে জেলা প্রশাসনের সহায়তায় অপকর্ম সিদ্ধ করায় এই দূর্ণীতির খবর থাকে অন্তরালে। আর গণমাধ্যম কর্মীদের অনেকেই জেলা প্রশাসকের হাত দিয়ে পত্রিকার ডিক্রারেশনের কারণ থাকায় গণমাধ্যম কর্মীরা থাকে একেবারেই জিম্মি। যার কারণে জেলা প্রশাসনের এমন দূর্ণীতির চিত্র তাকে একবারেই জনগনের চোখের আড়ালে। আর এমন ঘটনা দুই – একটি অপরাধ ধরা পরার পর তোলপাড়ের সৃষ্টি হলেও আবার থেমেও যায় হঠাৎ করেই।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে ঘুষের ৪২ লাখ টাকা ভর্তি কার্টন উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একই সঙ্গে ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ডিসি অফিসের সার্ভেয়ার মো. কাওসার আহমেদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘুষের ৪২ লাখ টাকা ভর্তি কার্টন উদ্ধারের ঘটনায় দূদকের দায়ের করা মামলায় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সার্ভেয়ার মো. কাওসার আহমেদকে গ্রেপ্তারের পর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন আসামী কে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বলে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে নিশ্চিত করেছেন আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।
বৃহস্পতিবার (১৮ জানুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরে তাকে আদালতে হস্তান্তর করা হয়। দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ১০ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে কার্টনটিসহ এক ব্যক্তি ধরা পড়েন। এরপর বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হলে তার নির্দেশে কার্টনসহ ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়।
জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ওই কার্টন খুলে ৪২ লাখ টাকা পাওয়া যায়। এই টাকা গণনা শেষে জব্দ করা হয়। টাকার কার্টন জব্দের বিষয়ে জেলা প্রশাসক অফিস থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়।
একই সঙ্গে ওই টাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ট্রেজারিতে জমা রাখা হয়। পরে গত ১৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাহমুদুল হক দুদকে চিঠি দেন।
ঘটনার বিষয়ে দুদক সচিব বলেন, গত ১০ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনের সড়কে সিদ্দিরগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের আউট সোর্সিংয়ের সাবেক কর্মচারী মো. জাহিদুল ইসলাম সুমনের কাছে একটি কার্টন পাওয়া যায়। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী রিফাত হোসেন নেজারত ডেপুটি কালেক্টরকে ঘটনাটি অবহিত করেন। সুমনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ কার্টনে নগদ টাকা থাকার কথা স্বীকার করেন।
সচিব জানান, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে জব্দ তালিকা তৈরি করে দেখা যায়, কার্টনে ৪২ লাখ টাকা পাওয়া যায়, এতে এক হাজার টাকার ৩ হাজার ৭০০টি নোট এবং ৫০০ টাকার এক হাজারটি নোট পাওয়া যায়। প্রাথমিক তদন্তে ওই টাকার বিষয়ে জেলা প্রশাসক মনে করেন যে, জব্দ করা ৪২ লাখ টাকা দুর্নীতি সংশ্লিষ্ট অর্থ এবং ধারণা করা হচ্ছে এ কার্যক্রমের সঙ্গে আরও ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এরপর এ ঘটনায় গত ১৬ ডিসেম্বর দুদকের নারায়ণগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে একটি মামলা হয়।

দুদক সূত্রে আরও জানা যায়, মামলায় ৪২ লাখ টাকার কার্টন বহনকারী মো. জাহিদুল ইসলাম ওরফে সুমন এবং ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখার সার্ভেয়ার কাওসার আমেদকে আসামি করা হয়। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থেকে আসামি সার্ভেয়ার কাওসার আহমেদকে গ্রেপ্তার করে আদালতে মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামি জাহিদুল ইসলাম সুমনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে।
গ্রেফতারে বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) মোহাম্মদ রবিন মিয়ার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে তেমন কোন তথ্য দিতে না পেরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ মাহামুদুল হক সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন।
এমন ঘটনা অনকেটা আড়ালে রেখে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন রাখঢাক করায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে এরই মধ্যে । নগরীর অনেকেই কঠোর ভাষায় সমালোচনা করে বলেছেন, ‘পুলিশ কি করে তা সকলেই দেখে বলেই এই বিভাগের দূর্ণীতি নিয়ে ব্যাপক সোচ্চার থাকে সবসময় । কিন্তু আজ বস্তাভর্তি দূর্ণীতির টাকা নিয়ে ডিসি অফিসের সার্ভেয়ার মো. কাওসার আহমেদ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যাওয়ার পর খবরটি প্রকাশ হলে এখন টনক নড়েছে অনেকের। এতেই প্রমাণিত হয় কতটা দূর্ণীতিতে নিমজ্জিত আমাদের নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন। এই লজ্জার দায় নেবেন কে ? অথচ আজ বৃহস্পতিবার রূপগঞ্জের অজোপাড়া গা ঠাকুরবাড়ী হাউজ সায়মা ফেব্রিকস এ সড়ক পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ মাহামুদুল হক। মাত্র ২ কোটি ৯১ লাখ টাকায় সড়কটির ব্যয় ধরা হয়েছে যা পরিদর্শনে গেলেন ডিসি নিজেই। আর তার দপ্তরেই এতো বড় বড় ঘটনা ঘটলেও ধরা না পরলে তার টেরও পাচ্ছেন না কেউ ।‘









Discussion about this post