নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থেকে ১৮ জানুয়ারী সার্ভেয়ার কাওসার আহমেদকে ৪২ লাখ টাকা ঘুষ লেনদেনের একটি মামলায় গ্রেফতার করে দুদক । এমন ঘুষ কান্ডের ঘটনায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হলেও ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে এখনো তৎপর শাসক দলের একজন প্রভাবশালী চক্র। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তা এডিসিকে (রাজস্ব) ওএসডি করা হলেও ওই ঘটনা নিয়ে এখনো সমালোচনা চলছে পুরো নগরজুড়ে ।
মাত্র চার মাসের ব্যবধানে এমন ঘুষকান্ডের ঘটনার ক্ষত এখনো জেলাবাসী ভুলে না গেলেও এরই মধ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সার্কিট হাউজে কয়েকটি কাজের ক্ষেত্রে প্রায় দেড় কোটি টাকা লুটপাটের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে গণপূর্ত ও গৃহায়ন অধিদপ্তরের শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা ও প্রভাবশালী ঠিকাদারচক্র ।
এমন লুটপাটের কান্ডে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ ঠিকাদারদের অনেকেই।
ক্ষোভ প্রকাশ করে কয়েকজন ঠিকাদার জানান, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে কোন ধরনের টেন্ডার ছাড়াই গোপন চুক্তির মাধ্যমে ১ (এক) কোটি ৩৮ (আটত্রিশ) লাখ টাকার কাজ শুরু করার মৌখিক আদেশ দেয় নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব। এমন ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের আদালত চত্তরের কার্যালয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও তোলপাড়ের সৃষ্টি হলেও কর্ণপাত না করেই বিনা টেন্ডারেই নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সার্কিট হাউজের ভিতরের চারিদেকে দেয়াল উচুঁ করার কাজ, সার্কিট হাউজের ড্রেন নির্মান, স্যানিটারী নবায়ন, টয়লেট নির্মানসহ ৭টি ভাগে ভাগ করা কর্মযজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে বিনা বাধায়।
কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে শুধু মাত্র ১ কোটি ৩৮ লাখ টাকার মধ্যে দুইজন ঠিকাদারকে এই কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করতে দায়িত্ব দেয়া হয় নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) সাইফুল ইসলাম।
নাম প্রকাশ না করা অনুরোধে নারাযণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের একজন কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এভাবেই নিয়ম না মেনে পছন্দ মতো ঠিকাদারদের ডেকে এনে শতকরা ২৫ শতাংশ অর্থ কাজের পূর্বেই স্টাফ অফিসার, উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) সাইফুল ও নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব ভাগভাটোযার মাধ্যমে এই কর্মযজ্ঞের আদেশ দেয়া হয় মৌখিকভাবে।”
মুঠোফোনে ৩ মিনিট ১৭ সেকেন্ড আলোচনায় এই কর্মকর্তা আরো বলেন, “লুটপাটের মহোৎসব চলছে এই গণপূর্ত দপ্তরে। যার খোজ কেউ রাখেন না।”
এমন গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) সাইফুল ইসলাম অসংখ মুঠোফোনে ২ মিনিট ১১ সেকেন্ডের আলোচনায় বারবার বলেন, “ভাই আপনি অফিসে আসেন, অফিসে এসে আলোচনা করেন। মুঠোফোনে এমন তথ্য দিতে পরবো না।”
পরবর্তীতে উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) সাইফুল ইসলামের হোয়াটস্যাপ ম্যাসেঞ্জারে “আসসালামু আলাইকুম ভাইজান, আমি সাংবাদিক ……………বলছি যা জানতে চেয়ে ফোন দিয়েছিলাম আপনাকে, সার্কিট হাউজের মেরামত কাজের প্রাক্কলনের একটি কপি ও কার্যাদেশের একটি কপি দয়া করে দিলে কৃতজ্ঞ থাকিব। ধন্যবাদ।“
এমন বার্তার পর শনিবার (১৮ মে) এমন ম্যাসেজের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও এ বিষয়ে কোন মন্তব্য আর করে নাই সাইফুল ইসলাম।
এমন গুরুতর অভিযোগ ও লুটপাটের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশসক কার্যালয়ের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) তামসিদ ইরাম খানের সাথে যোগায়োগ করলে তিনি বলেন, “এমন ঘটনা আমার জানা নাই। এই বিষয়টি দেখেন গণপূর্ত বিভাগ। এই অভিযোগের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলার পরামর্শও দেন তামসিদ ইরাম খান ।
গুরুতর এমন অভিযোগের বিষয়ে ক্ষুব্ধ ঠিকাদারদের কেউ কেউ আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব নারায়ণগঞ্জে চাকরীর পূর্বেও চাকরীকালীন সময়ে এমন অপকর্ম করে নিজের ইচ্ছে মতো ঠিকাদারদের মাধ্যমে লুটপাট করে সরকারী রাজস্ব নিজের মনে করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। কাজ না করেও সরকারী বিল উত্তোলনের গুরুতর অভিযোগও রয়েছে আহসান হাবিবের বিরুদ্ধে ।









Discussion about this post