একেক সময় একেক জনের নাম ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন এই কুখ্যাত রকমত। নিজের বাবার (বাবা বা ধর্ম পিতা) নাম না জানালেও কুখ্যাত অপরাধী একক সময় একেক পিতার (ধর্মপিতা) গডফাদার কে উন্নতির সিঁড়ি হিসেবে প্রচার করেছেন সগৌরবে
গ্রাম্য ভাষায় প্রবাদ আছে, “কুকুরের লেজ সোজা হয় না ! যত কিছু হউক তার অপরাধ যেন নিত্য সঙ্গী।” নারায়ণগঞ্জের অভিজ্ঞ অনেকের মন্তব্য, ফতুল্লার বিসিকের ব্যাপকব সমালোচিত ঝুট সন্ত্রাসী রকমত ওরফে কাইল্লা রকমতের ক্ষেত্রে এই প্রবাদ পূর্ণঙ্গভাবেই প্রযোজ্য ।
আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ ১৭ বছরের শাসনামলে রকমত ছিলেন বিসিকের অপ্রতিরোধ্য এক ঝুট সন্ত্রাসীর নাম। আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী পরিবার ও নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে নিয়ন্ত্রণ করেছেন গোটা বিসিক, এমনকি ভূমি দস্যুতারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে । একই সাথে মাদক ও নারী কেলেংকারী এই অপরধী ধনকুবের বনে যাওয়া আওয়ামী সন্ত্রাসী এখন বিএনপির ছায়া তলে আছেন। এ নিয়ে সচেতন মহলে নানা আলোচনা চলছে।
জানা গেছে, একেক সময়ে একেক নেতার আশির্বাদ নিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন রকমত। এর মধ্যে কখনো শামীম ওসমান, কখনো অয়ন ওসমান আবার কখনো ছিলেন আজমেরী ওসমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে। সবার দরবার ঘুরে শেষ পর্যন্ত রকমত ছিলেন আজমেরী ওসমানের ছায়ায়। আজমেরীর ছায়ায় আসার পর আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠে রকমত ও তার অনুসারীরা।
অভিযোগ রয়েছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে আজমেরী ওসমান তার কর্মী বাহিনী নিয়ে অস্ত্রসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে গাড়ি বহর নিয়ে শোডাউন দিয়েছে। এমনকি তার লোকেরা আন্দোলনকারীদের উপর গুলি ছুড়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যেই আজমেরী এবং তার বাহিনীর অনেকেই হত্যা মামলার আসামী হয়েছে। তবে রকমতের বিরুদ্ধে এখনো মামলা না হওয়ায় তা নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, কাইল্লা রকমত বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত ইসরাম মিয়া তার বিশাল অপরাধী সাঙ্গপাঙ্গদের সাথে নিয়ে অস্ত্র-শস্ত্রসহ শহরের গলাচিপা কলেজ রোড এলাকায় অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিহত করার চেষ্টা চালিয়েছিল। তার এই অপরাধের সাথে ছিলো বিশেষ পেশার কয়েকজন স্বার্থান্বেষী ব্যাক্তিবিশেষ । যারা নিজেদের বিশেষ পেশার নাম ব্যব্হার করে অপরাধ করেই যাচ্ছে।
কাইল্লা রকমতের নির্দেশনায় ইসলাম মিয়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন বিরোধী অবস্থানে রাজপথে সরব ছিলো বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে এরপরও মামলায় রকমত আসামী না হওয়ায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
এদিকে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে আজমেরী ওসমানসহ ও তাদের সহযোগিরা আত্মগোপনে চলে যায়। পালিয়ে যায় শামীম ওসমান সহ ওসমান পরিবারের সকলেই। নিজ কৃতকর্মের কারণে ৫ আগস্ট সন্ত্রাসী রকমতও এলাকা ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন। তবে সম্প্রতি স্থানীয় বিএনপি নেতাদের অভয় পেয়ে আবারও এলাকায় প্রকাশ্যে এসেছে কাইল্লা রকমত।
জানা গেছে, মাসদাইর প্রাইমারি স্কুল এলাকার ফটিক চাঁনের ছেলে রকমত উল্লাহ ওরফে কাইল্লা রকমত। আওয়ামী লীগের কোন পদপদবীতে না থাকলেও ‘মুক্ত গার্মেন্টস ফেডারেশন’ নামক একটি শ্রমিক সংগঠনের ফতুল্লা থানার সভাপতির পদ নিয়ে চষে বেড়িয়েছেন গোটা বিসিক অঞ্চল। বিসিকের ঝুট সেক্টর দখলে রাখতে একটি অস্ত্রধারী বাহিনীও রয়েছে কাইল্লা রকমতের কব্জায়। ইতিপূর্বে বিভিন্ন প্রতিপক্ষের সাথে রকমত গ্রুপের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের একাধিক নজিরও রয়েছে। তার বাহিনীর মধ্যে ইসলাম, জুয়েল ও কাইয়ুম অন্যতম।
সূত্রের দাবি- ইসলাম, জুয়েল ও কাইয়ুমের মাধ্যমে বিসিকে কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপ নিয়ন্ত্রণ করেন রকমত। ঝুট সেক্টরে আধিপত্য বিস্তার করতে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি ও মহড়া দিতেও দেখা যেত রকমত বাহিনীকে। সেক্টর দখল করতে একদা শান্ত বিসিককে অশান্ত করে রাখতো এই কাইল্লা রকমত বাহিনী। তাদের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় একাধিক মামলাও রয়েছে। বিশেষ করে, রকমতের বিরুদ্ধে অবৈধ পিস্তল ও গুলি উদ্ধার, সরকারী কাজে বাঁধা ও ঝুট সন্ত্রাসীর অভিযোগে ফতুল্লা মডেল থানায় চারটি মামলা ছিল।
এসব মামলায় ইতিপূর্বে গ্রেফতারও হয়েছিলেন রকমত।
তবে বহু ক্ষেত্রেই রকমত ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করতে যান না বিসিকের ব্যবসায়ীরা। পরবর্তীতে ঝামেলা বাড়বে- এমন ভাবনায় অনেক ব্যবসায়ী রকমতের ‘গজব’ সয়ে গেছেন নীরবেই।
তথ্য মতে, বিসিকে রকমতের হুকুমত চলছে বেশ কয়েক বছর হলো। তবে একেক সময়ে রকমত একেক ‘পীরের’ মুরিদ হয়েছেন। একদা তিনি বিএনপি নেতাদের আর্শিবাদ নিয়ে চলতেন। ছিলেন বিএনপি নেতা জাকির খানের লোক। ২০০৮ সালে সারাহ বেগম কবরী ফতুল্লার এমপি হওয়ার পর তিনি কবরীর লোক বনে যান। কবরীকে ম্যানেজ করে বিসিকে আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন।
২০১৪ সালে এমপি হন শামীম ওসমান।
অতঃপর নিজেকে এমপি শামীম ওসমানের লোক হিসেবে জাহির করার চেষ্টা শুরু করেন। এরপর থেকেই ওসমান পরিবারের কয়েকজন সদস্যের নাম ভাঙ্গিয়ে বিসিকের একক নিয়ন্ত্রক বনে যান রকমত। বর্তমানে এক বিএনপি নেতার আশ্রয়ে আছেন তিনি- এমন গুঞ্জন চলছে বিভিন্ন মহলে।
রকমতের ঘনিষ্ঠ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, এই দীর্ঘ সময়ে রকমত অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। প্রভাবশালীদের আর্শিবাদে তার আধিপত্যও বেড়েছে কয়েকগুন। কেবল চর কাশিপুরেই রকমতের কয়েক শত শতাংশ সম্পত্তি রয়েছে বলে জানা যায়। এছাড়াও নামে বেনামে একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লটের মালিক হয়েছেন তিনি। ভূমি দস্যুতা ও জমির ব্যবসাও বেশ জমজমাট তার। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বহাল তবিয়তে থাকা রকমতকে নিয়ে রহস্য বাড়ছে স্থানীয়দের মাঝে।
এদিকে, গতকাল রাতে রকমতের বক্তব্যের জন্য ফোন করা হলেও তার মুঠোফোন নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার বক্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে কাইল্লা রকমতের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, ফতুল্ল থানার ওসি, ডিবি পুলিশের ওসি ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তাকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা (যখন যা দরকার পাঠিয়ে দিতো) দিয়ে পুরো বিসিকের সকল অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতো কাইল্লা রকমত । আর আজমেরী ওসমান কে তো কি পরিমাণ অর্থ দিতে হতো তার হিসেব ই নাই । ওকে অর্থে পুলিশ আর আজমেরী ওসমান ছিলো কাইল্লা রকমতের বাপ ! এখন তার বাপ কে তা নির্ধারণ হলেও প্রকাশ করছে না । একদিকে বিএনপির নেতা আরেক দিকে বিশেষ পেশার কয়েকজন রয়েছে রকমতের শেল্টারদাতা ।
সরকার পবির্তনের পর এবার এই কুখ্যাত অপরাধী কাইল্লা রকমতের বাপ (বাবা বা ধর্মপিতা) কে তার প্রকৃত নাম জানতে চায় ব্যবসায়ী মহল। ইতিমধ্যেই এই অপরাধীকে শেল্টার দিতে সেই পুরানো পুলিশ কর্মকর্তা ছাড়াও নতুন বাবার (বাবা বা ধর্মপিতা) সন্ধ্যান পেয়েছে নগরীর অনেকেই । কে সেই ধর্মপিতা তা পরিস্কারভাবে জানতে চায় নগরবাসী ।









Discussion about this post