ওসমান পরিবারের অপরাজনীতির কারনে পুরো নারায়ণগঞ্জবাসী এই পরিবারের সকলকেই খুনি পরিবার হিসেবে ধিক্কার দেয়। অপরদিকে ওসমান পরিবারের সকলে এবং তাদের সমর্থিত অন্ধ ভক্তরা ওসমান পরিবারের সদস্যদের তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া পরহেজগার বলেও মনে করেন।
যারা শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সদস্যদের এমন পরহেজগার পরিবার বলে প্রচার চালাতেন তাদের সকলেই এখন পলাতক। এমন পলাতকের ঘটনায় নগরীর অনেকের প্রশ্ন, গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরা পরহেজগার নেতারা এখন পালালো কেন ?
জানা, যায়, ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিনিধি আসিফ হোসেন ১৮ বছরে ১২ খুনে জড়িত আজমেরী ওসমান ! শীর্ষক সংবাদ প্রকাশেল পর আর দেশে থাকতে পারেন নাই আসিফ হোসেন। মৃত্যূ ঝুঁকির কারণে আসিফ হোসেন সাংবাদিকতা ছেড়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এরপর থেকে আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে আর কেউ তার সখল অপকর্ম নিয়ে কোন সংবাদ প্রচার করার সাহস পান নাই।
গত ১৫ বছরে কোন সাংবাদিক আজমেরী ওসমান তো দূরের কথা তার অপরাদী চক্রের কোন সদস্যদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জন্য তথ্য সংগ্রহ করতে গেলেই হুমকি হামলার শিকার হতে হয়েছে বারবার। কোন কোন সংবাদ মাধ্যম ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে কোন সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে হামলা, মামলা, পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল অথবা নিউজ সার্ভিস সংস্থাগুলোকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর মাধ্যমে ব্লক করে দেয়াসহ প্রজ্ঞাপন জারি করে গণমাধ্যমের পথচলা একবারেই রুদ্ধ করে দেয়ার ঘটনা তো অনেক ই ঘটেছে । ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিকদের হয়রানীর ঘটনাও অসংখ্য ।
আর এমন গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ওসমান পরিবারের হয়ে দালালী করে কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। একই সাথে ওসমান পরিবারের সকল সদস্যদের একবারে পায়ে ধরেই প্রকৃত সাংবাদিকদের ক্ষতি করেছেন প্রকাশ্যেই। এমন দালালদের সংখ্য ৮?১০ জন । যাদের কেউ কেউ এবার বিভিন্ন মামলার আসামী হয়ে পলাতক রয়েছেন কেউ রয়েছেন প্রকাশ্যে আবার কেউ কেউ ওসমান পরিবারের কাছ থেকে পাওয়া পোষাক কারখানার ঝুট সাম্রাজ্য ধরে রাখতে এখন নতুন নাটক মঞ্চায়ন করে লেবাস পাল্টে নতুন নেতার খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরছেন।
আসিফ হোসেনের সেই প্রতিবেদনে যা ছিলো :
নারায়ণগঞ্জ-৫ (শহর-বন্দর) আসনের জাতীয় পার্টির (জাপা) সাংসদ নাসিম ওসমানের একমাত্র ছেলে আজমেরী ওসমান গত ১৮ বছরে সংঘটিত ১২টি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এর মধ্যে বর্তমান সরকারের আমলে সংঘটিত হয় নয়টি হত্যাকাণ্ড। সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রণীত জেলার শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় ২ নম্বরে নাম থাকা আজমেরী ওসমান গত পাঁচ বছরে নারায়ণগঞ্জে এক মূর্তিমান আতঙ্কে পরিণত হন। একের পর এক লোমহর্ষক খুন, টর্চার সেলে অনেক মানুষকে ধরে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন চালালেও তাঁর বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ কোনো থানায় মামলা বা জিডি করেনি।
নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া সুলতান শওকত ওরফে ভ্রমর আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সম্প্রতি একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাতে তিনি বলেন, গত ৬ মার্চ শহরের কলেজ রোডের টর্চার সেলে আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বেই ত্বকীকে খুন করা হয়। ভ্রমর আজমেরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০৯ সালের এপ্রিলে শহরের আমলাপাড়ায় ১৪ টুকরা লাশ পাওয়া যায়। মামলা হলেও পুলিশ এই খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। ২০১১ সালে শহরের প্রেসিডেন্ট রোডে একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে জবাই করে খুন করা হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক জামালকে। অবৈধ অস্ত্র ও মাদক পরিবহনে রাজি না হওয়ায় তাঁকে খুন করা হয়। এই ঘটনায় মামলা হলে র্যাব-১১-এর সদস্যরা আজমেরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী গালপোড়া রঞ্জুকে গ্রেপ্তার করেন। সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পাওয়া গালপোড়া রঞ্জুকে আজমেরী ওসমান কসমেটিক সার্জারি করে তাঁর মুখমণ্ডলে পরিবর্তন আনেন।
২০১১ সালের জুনে শীতলক্ষ্যা নদীতে ব্যবসায়ী আশিক ইসলামের লাশ পাওয়া যায়। তাঁর মুখমণ্ডল ঝলসানো ও বিকৃত এবং অণ্ডকোষ থেঁতলানো ছিল। তাঁর ভাই বাদী হয়ে আজমেরীর ঘনিষ্ঠ দুই সহযোগী সিজার ও সিদ্দিককে আসামি করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেন। আজমেরীর কথা বলে সিজার ও সিদ্দিকই আশিককে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে যান।
এরপর খুন হন টানবাজারের সুতা ব্যবসায়ী ভুলু সাহা। তাঁর লাশও শীতলক্ষ্যা নদীতে পাওয়া যায়। চাঁদা না দেওয়ায় তাঁকে হত্যা করা হয় বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হলেও রহস্যজনক কারণে খুনিদের আজও চিহ্নিত করতে পারেনি। মূলত শহরের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য, যেন তাঁরা চাওয়ামাত্রই চাঁদা দিয়ে দেন সে জন্য ভুলু সাহাকে হত্যা করা হয়। এরপর গাবতলী এলাকার বাসিন্দা মিঠুকে শহরের জামতলা এলাকায় প্রকাশ্যে খুন করা হয়। মিঠু গাবতলী এলাকায় আজমেরীর অনুগত মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। মিঠু হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিলেন আজমেরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ঢাকাই চলচ্চিত্রের একসময়ের জনপ্রিয় খলনায়ক আদিলের ছেলে হামীম।
খুনের সাক্ষী না রাখার জন্যই তিন দিন পরে হামীমকে কক্সবাজারে নিয়ে মদের সঙ্গে বিষ পান করিয়ে হত্যা করা হয়। সাংস্কৃতিককর্মী চঞ্চলকে খুন করা হয় গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শামীম ওসমানের পক্ষে কাজ না করে সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষে কাজ করার অপরাধে। সর্বশেষ ত্বকী হত্যাকাণ্ডের পরপরই ওসমান পরিবারের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন গড়ে ওঠে। মিঠুর বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা খোরশেদুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ফতুল্লা থানার তৎকালীন ওসি তাঁকে উল্টো ভয় দেখান আজমেরীর নাম দিলে মামলাই নেওয়া হবে না।
শুধু খুন নয়, আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে তাঁর টর্চার সেলে ধরে এনে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই তাঁর বাবা নাসিম ওসমান, দুই চাচা সাবেক সাংসদ শামীম ওসমান ও বিকেএমইএ এবং নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি সেলিম ওসমানের প্রশ্রয়ে আজমেরী ওসমান শহরের উত্তর চাষাঢ়ায় একটি ও কলেজ রোডে দুটি টর্চার সেল গড়ে তোলেন। সিসি ক্যামেরা দ্বারা টর্চার সেলের আশপাশের রাস্তায় পথচারী ও যানবাহন চলাচল সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করা হতো।
ত্বকী হত্যা মামলা তদন্তের অংশ হিসেবে র্যাব-১১-এর সদস্যরা গত ৭ আগস্ট শহরের কলেজ রোডে আজমেরী ওসমানের একটি টর্চার সেলে অভিযান চালিয়ে রক্তাক্ত জিনসের প্যান্ট, রক্তমাখা গজারির দুটি লাঠি ও বস্তায় ভর্তি নাইলনের রশি জব্দ করেন। গত ১২ নভেম্বর ভ্রমরের দেওয়া জবানবন্দিতে জানা যায়, আজমেরীর নেতৃত্বে ৬ মার্চ এই টর্চার সেলেই ত্বকীকে খুন করা হয়।
ত্বকী হত্যা মামলার বাদী রফিউর রাব্বি বলেন, ভ্রমরের জবানবন্দিতে উল্লেখ রয়েছে, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে তাঁর অফিসে ত্বকীকে খুন করা হয়েছে। তিনি বলেন, অনেক খুন করার পরও তাঁর বিরুদ্ধে একটিও মামলা নেই। কারণ, তাঁকে আসামি করে ভুক্তভোগীরা মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয় না। আর এ জন্যই শামীম ওসমান বলতে সাহস পান যে তিনি নিরপরাধ। শত কোটি টাকার চাঁদাবাজি করলেও তাঁরা চাঁদাবাজ নন, জোরপূর্বক নিরীহ মানুষের ভূমি দখল করলেও তাঁরা ভূমিদস্যু নন। খুন করলেও খুনি নন। কারণ, তাঁদের নামে কোনো মামলা নেই।
ত্বকী হত্যা মামলা তদন্তকারী র্যাব-১১-এর সহকারী পুলিশ সুপার রবিউল হক বলেন, ‘আজমেরী ওসমানকে গ্রেপ্তারের জন্য আমরা খুঁজছি।’









Discussion about this post