সারাদেশের আন্দোলনে হতাহতের ঘটনা অনেক। আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর সর্বত্র যেন হরিলুটের মেলা চলছে । সুবিদা আদায় করতে চলছে নানা নৈরাজ্য । আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের নৈরাজ্য বন্ধ করতে আন্দোলনের সুফল দেশবাসী ঘরে তুলতে যে আশা করেছিলো সেই আশায় গুড়েবালি পরেছে। এমন মন্তব্য সর্বত্রই শোনা গেলেও এরই মধ্যে ব্যাপক চাউর হয়েছে মামলঅ বাণিজ্য।
লুটপাটকারী আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা কি করে কাকে সন্তুষ্ট রেখে মামলা ও হামলা থেকে রক্ষা পাবে সেই অপচেষ্টা করছে।
নারয়ণগঞ্জের সর্বত্র এমন দখলবাজি আর লুটপাটের ঘটনার পর এবার সোনারগাঁয়ে মামলার বাণিজ্যের ঘটনা উঠে এসেছে যুগান্তর অনলাইনে। এমন ঘটনায় অপরাধীরা যেন রক্ষা পেয়ে যাচ্ছে।
এক সময়ের এমপি খোকার অত্যান্ত আস্থাভাজন ইঞ্জিনিয়ার মাসুম কি পরিমাণ অপকর্ম করেছেন তার হিসাব সকলেই জানেন । পরবর্তীতে এমপি খোকার পরিবর্তন ঘটনায় জেলার কুখ্যাত অপরাধী আওয়ামী লীগের গডফাদার শামীম ওসমান ও তার পরিবারের সকলকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে সকল ধরণের অপরাধ চালিয়ে সাম্রাজ্য অটুট রেখেছিলো ইঞ্জিনিয়ার মাসুম । এবার সেই অপরাধের রেশ কাটাতে অনেকের সাথেই আঁতাত করেই যাচ্ছে মাসুমসহ অপরাদীচক্র ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর হতাহতের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ থানায় ৬টি মামলা হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জের মাদানীনগর ও ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘর্ষে নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ব্রিজের ঢালে ঘটনাস্থল দেখিয়ে এসব মামলা করা হয়।
সব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, সাধারণ ব্যবসায়ী ও দিনমজুরসহ নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে আরও প্রায় চার হাজার মানুষকে আসামি করা হয়েছে।
এসব ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মামলার নেপথ্য কারিগর সোনারগাঁয়ের বিএনপি নেতা আজহারুল ইসলাম মান্নান। নিরপরাধ মানুষদের মামলা দিয়ে বাড়িছাড়া করে তাদের ঘরবাড়ি দখল, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান দখল করা হয়েছে। এ ছাড়া ইকোনোমিক জোনে যারা আগে ব্যবসা করতেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে ঝুটসহ নানা ব্যবসা জোরপূর্বক করে যাচ্ছেন মান্নানের ছেলে খাইরুল ইসলাম সজীব, উপজেলার দত্তপাড়া গ্রামের বিএনপি নেতা মোশারফ, মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকার পরিবহণ চাঁদাবাজ আতাউর রহমান, নিজামুদ্দিন, বাবুল ও শামীম। পিরোজপুর এলাকায় নীরিহ মানুষের জমি দখল করে নিচ্ছে মান্নানপন্থি বিএনপি নেতা মেনা, বারদী এলাকার আ. রহমানসহ বিশাল বাহিনী। ক্লিন ইমেজের বিএনপি নেতাকর্মীদের যাদের মান্নান তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মনে করছেন, তাদেরও এসব মিথ্যা মামলায় আসামি করছেন। এসব মামলায় আসামি করার ভয় দেখিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
আবার পিরোজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সোনারগাঁও ইকোনোমিক জোনে সিন্ডিকেট করে হাজার কোটি টাকা কামানো ইঞ্জিনিয়ার মাসুমকে আসামি করার পর কয়েক কোটি টাকা নিয়ে বাদীকে দিয়ে মামলা থেকে নাম বাদ দেওয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এভাবে টাকা নিয়ে আরও অনেককেই মামলা থেকে বাদ দিয়েছেন আজহারুল ইসলাম মান্নান ও তার বাহিনী।
এসব কারণে সোনারগাঁয়ে বিএনপি বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান এবং অন্য অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপক রেজাউল করিম। মূলত মান্নানপন্থিরাই জড়িয়ে পড়েছে হামলা-মামলা ও বাড়িঘর লুটপাটে।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক রহিম মাস্টার বলেন, আজহারুল ইসলাম মান্নান এক সময় অধ্যাপক রেজাউল করিমের একজন সাধারণ কর্মী ছিলেন। একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের দালালি করে রাতারাতি কোটিপতি বনে যান তিনি। এরপরই বিশাল ক্যাডার বাহিনী গড়ে তোলেন।
গত ৭ আগস্ট মান্নানের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী পিরোজপুর ইউনিয়নের প্রতাবেরচর এলাকায় সাবেক মহিলা মেম্বার মমতাজ বেগমের পরিবারের লোকজনকে পিটিয়ে বাড়ি থেকে বের করে তার ভবনসহ জায়গা-জমি জবরদখল করে নিয়ে যান। এ ব্যপারে তিনি সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে গিয়ে অভিযোগ করেছেন। ৫ আগস্ট মেঘনা টোল প্লাজা থেকে টোলের কয়েক কোটি টাকা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে মান্নানের ছেলে জেলা যুবদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক খাইরুল ইসলাম সজীবের অনুসারিরা।
বর্তমানে সোনারগাঁয়ে আজহারুল ইসলাম মান্নান ও তার বাহিনী মূর্তিমান আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তার বাহিনী প্রতাবেরচর গ্রামের মিন্টু, ঝাউচর গ্রামের আল আমিনের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। মান্নানের ভয়ে প্রতাবেরচর, ঝাউচর ও আষাড়িয়ারচর গ্রামের বড় বড় ব্যবসায়ীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া ইউনিয়নে শীলমান্দি ও পিরোজপুর ইউনিয়নের মেঘনাঘাটে অবস্থিত ৩টি ইকোনমিক জোনসহ ৩৮টি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন মান্নান ও তার ভাই হান্নানসহ তার আত্মীয়-স্বজনরা।
অভিযোগ রয়েছে, সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি মান্নানের নেতৃত্বে প্রতিদিন শতাধিক লোক চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে সচেতনামূলক প্রচার চালালেও সন্ধ্যা নামতেই ভোল পাল্টে যায় তাদের। মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকার ফুটপাতের সব দোকান ও পরিবহণ থেকে শুরু হয় চাঁদা তোলা। সোনারগাঁয়ের ১০টি ইউপির অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি আওয়ামী লীগ ঘরানার হওয়ায় তাদেরকে প্রথমে হত্যা মামলার আসামি করা হয়। পরে তাদের অনুপস্থিত দেখিয়ে শূন্য স্থানে মান্নান তার পছন্দের জনপ্রতিনিধিদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে সুপারিশ করেছেন। তার বাহিনী সোনারগাঁজুড়ে সন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও দখলের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসী এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করেন।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভোরে মান্নানের সহযোগী সোনারগাঁয়ের চিহ্নিত চাঁদাবাজ আতাউরকে যৌথবাহিনী গ্রেফতার করে। পরে আতাউর জামিনে বের হয়ে এসে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এ ব্যাপারে সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নানকে ফোন দেওয়া হলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে দেখেন আমি কে। বিএনপি আপনাদের স্বাধীনতা দিয়েছে, যা কিছু লেখার এবং বলার। এখানে কোনো বাধা নেই। আপনাকে যারা তথ্য দিয়েছে তারা সংস্কারপন্থি এবং আমার লোকজনকেও হয়রানি করছে।









Discussion about this post