অত্যান্ত নিরীহ একটি প্রাণীর নাম গিরগিটি । যা ‘রক্তচোষা’ নামে অতি পরিচিত। মুহূর্তে মুহূর্তে রঙ পাল্টায় আর স্বার্থ হাসিল করতে সব ধরণের ওৎ পেতে থাকে এই গিরগিটি ।
এই গিরগিটির মতো ফতুল্লার এক সময়ের নয় (৯) লাইখ্যা (নয় লাখ) খ্যাত শিল্পপতি মোহাম্মদ আলীর বড় ভাই নজরুল ইসলামের পুত্র ভাতিজা হাবিবুর রহমান লিটন ও তার ভাই সাইদুর রহমান রিপন আর সোহেল এমন কোন অবৈধ কর্মকান্ড নাই যা তাদের হাত দিয়ে সংগঠিত হচ্ছে না ।
স্বাধীনতার পর আদমজী জুট মিলের স্টাফ বাসে নয় লাখ টাকা ডাকাতি করে মুখে মুখে রটে যায় নয় লাখ টাকার ডাকাতির হোতা ফতুল্লার মোহাম্মদ আলী। ওই ডাকাতি মামলার কয়েকজনদের মধ্যে গোদনাইলে নূর ইসলাম, মোস্তফাসহ তিন জন দীর্ঘদিন জেল খাটলেও মূল হোতা এক নম্বর আসামী শিল্পপতিখ্যাত মোহাম্মদ আলী ছিলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ওই নয় লাখ টাকা ডাকাতির পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নাই মোহাম্মদ আলী ও তার পরিবারের। সেই উত্থানের পর এরশাদের নেতৃত্বে রাস্ট্র ক্ষমতা গ্রহণ করলে জাতীয় পাটিতে যোগদান করেন মোহাম্মদ আলী। এরশাদের পতনের পর আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসলে ফের বিএনপিতে যোগদান করে সেই নয় লাইখ্যা খ্যাত মোহাস্মদ আলী । এরপর বিএনপির থেকে মাত্র কয়েক দিনের জন্য এমপি হিসেবেও জাতীয় সংসদে যাওয়ার সৌভাগ্য হয়। বিএনপির পর ফের আওয়ামীলীগ শামীম ওসমান প্রথম নির্বাচিত হয়েই গডফাদার তকমায় জলমল করে উঠে। এবার আন্দোলনে সেই নয় লাইখ্যা মোহাম্মদ আলী কিং মেকার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত হবার চেষ্টা করেন।
ওই আন্দোলনের পূর্ব থেকেই ভাতিজা হাবিবুর রহমান লিটন ও তার ভাই সাইদুর রহমান রিপন আর সোহেল তেল চুরি, চাঁদাবাজি, লুটিপাটসহ সকল ধরণের অপরাধ যেন তাদের নিত্যদিনের কর্মকান্ডে পরিণত হয়। এরপর আর তাদের অপরাধ কর্মকান্ড থেকে ফেরানো যায় নাই । তারা এখন ফতুল্লার নিয়ন্ত্রক।
বিগত ১৫ বছর আওয়ামীলীগের শাসনামলে শামীম ওসমান, সেলিম ওসমান, আজমেরী ওসমান, অয়ন ওসমানের নাম ব্যবহার করে দুইটি তেল ডিপোর সকল অপরাধ নিয়ন্ত্রণ পরিবহণ সেক্টর নিয়ন্ত্রণ, ভূমিদস্যুতা, মাদকসহ ব্যাবসায়ীদের অতিষ্ঠ করে রেখেছিলো রিপন লিটন চক্র । ফতুল্লার আওয়ামী লীগের বড় নেতা হিসেবেও নিজেদের পরিচয় দিতেন লিটন – রিপন ও সোহেল । তাদের অপর তিন ভাই শাহিন ও শামীম থাকেন বিদেশে আর আরেফিন রুলিং ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় তাদের তিন ভাইকে নিয়ে কোন অভিযোগ নাই কারোর ই।
৫ আগষ্ট শামীম ওসমানসহ সকলেই পালিয়ে যাওয়ার পর সকল আওয়ামসীলীগের নেতাদের মতো হাবিবুর রহমান লিটন ও তার ভাই সাইদুর রহমান রিপন আর সোহেল গা ঢাকা দেয়। এরপর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর বিএনপির নেতাদের সাথে যোগাযোগ করে ফের ৭ আগস্ট এলাকায় ফিরে এসেই দুইটি তেলের ডিপো পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। শুরু করে রাম রাজত্ব। পাশাপাশি শামীম ওসমানদের চেলা চামচাদের মধ্যে যারা অন্যতম পলাতক ছিলেন তাদের মধ্যে আসাদ চেয়ারম্যান, পাগলা হামিদসহ অনেককেই ফতুল্লায় ফিরিয়ে এনে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য শুরু করে লিটন ও রিপন।
ফতুল্লার পঞ্চবটি এলাকার অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ওসমান পরিবারের অন্যতম দালাল এই মোহাস্মদ আলীর ভাতিজারা কি পরিমাণ অপকর্ম যে করছে পুরো এলাকায় তার হিসাব মিলানো খুবই কঠিন। অথচ দুই ভাই লিটন ও রিপনের কিডনী পুরোপুরিই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সপ্তাহে ২ / ৩ বার করে ডায়ালাইসিস করে বেচে থাকলেও অপরাধ কর্মকান্ড যেন তারা ছাড়তেই পরে নাই।
অথচ বর্তমানে হাবিবুর রহমান লিটন ও তার ভাই সাইদুর রহমান রিপন আর সোহেলের কর্মকান্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফতুল্লা বিএনপির কয়েকজন নেতা জানান, বিএনপির রাজনীতি করার কারনে বিগত ১৭ বছর মোহাম্মদ আলীর ভাতিজাদের কর্মকান্ডে বাড়িতে ঘুমাতে পারিনি। একের পর এক মামলা হজম করেছি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হামলা করেছে বাড়িতে। স্ত্রী-সন্তানরা প্রতিনিয়ত আতংকের মধ্যে দিন কাটিয়েছে। এখন তারা আবার বিশাল বিএনপি নেতা। গিরগিটির মতো মুহূর্তে মুহূর্তে রঙ পাল্টায় আর স্বার্থ হাসিল করেই যাচ্ছে তারা।









Discussion about this post