তৃণমূল বিএনপির সাথে জোটভুক্ত হওয়া বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টির চেয়ারম্যান আবু হানিফ হৃদয় ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-২ তথা আড়াইহাজার আসন থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন । তবে নির্বাচনের ঠিক আগের দিন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণাও দেন আবু হানিফ হৃদয়।
সেই সময়ে আবু হানিফ তৃণমূল বিএনপির সাথে জোট করে সোনালি আশ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়ে বিতর্ক তুলেন। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করেছিলো অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নিয়ে মূলত আওয়ামী লীগকে ফের ক্ষমতায় আসতে সহায়তাই করেন প্রার্থীরা। বিএনপির নাম ব্যবহার করে মূল দলকে বিপাকে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করেছিলো শমসের মবিন ও তৈমূর আলম খন্দকার। তৃণমূল বিএনপির হয়েই সেই বিতর্ক তোলা নির্বাচনে আবু হানিফ হৃদয় লড়াই করেন।
বৈষম্য বিরোধী ছাদ্র আন্দোলনে ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর আবু হানিফ হৃদয় যোগ দিয়েছেন নুরুল হক নূরের দল গণঅধিকার পরিষদের ব্যানারে। এমন ঘটনায় ব্যাপক সমারোচনার ঝড় তুলেছেন নারায়ণগঞ্জে বিতর্কিত এই ব্যক্তি। বিএনপি জামায়াত সহ ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলের কাছে এই ব্যক্তি ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগী হিসেবেই পরিচিত আবু হানিফ হৃদয় ।
অনেকেই সমালোচনা করে বলেন, ‘ নারায়ণগঞ্জ -২ আসনের (আড়াইহাজার উপজেলা) বিশনন্দি ইউনিয়নের বাসিন্দা আবু হানিফ হৃদয়। তিনি নিজেকে সাংবাদিক হিসেবেও পরিচয় দেন। দৈনিক বাংলার চোখ নামক একটি পত্রিকার সম্পাদক। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ ক্ষমতাকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা সমিতির সাধারন সম্পাদক ভাগিয়ে পদ নেন আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে সখ্যতা করে। ওই সমিতির সভাপতি হয়েছিলেন রূপগঞ্জের গোলাম দস্তগীর গাজী।
আর বাংলার চোখ নামক পত্রিকাটির মালিক নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাবেক আওয়ামী লীগের এমপি নজরুল ইসলাম বাবু যিনি এখন স্বপরিবারে পলাতক। আর আবু হানিফ হৃদয় নিজেই তৈরী করেন বাংলাদেশ রিপাবলিকান পার্টি । সেই পার্টির চেয়ারম্যান তিনি ই নিজে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে কিংস পার্টি তৃণমূল বিএনপির সাথে সখ্যতা করে সোনালি আশ প্রতীকে নির্বাচনে করেন। নাটক সাজিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় অতিবাহিত করে নির্বাচনের আগের দিন নির্বাচন থেকে সরে যান চতুর আবু হানিফ হৃদয়।
আবু হানিফ হৃদয় আড়াইহাজারে নজরুল ইসলাম বাবুর ঘনিষ্টজন হিসেবে চিহ্নিত এবং সমালোচিত। বিমান যাত্রা করেন একসাথে, বাবুর সাথে নিয়মতি ছবি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে নানাভাবে সুবিদা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে হৃদয়ের বিরুদ্ধে । ২০২৪ সালের নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী দেখানোর লক্ষ্যেই বাবুর বিপরীতে সেই আবু হানিফ হৃদয় মূলত প্রার্থী হয়ে আরেক বিতর্ক সৃষ্টি করেন । তার বিপরীতে থাকা জাতীয় পার্টির আলমগীর শিকদার লোটনকে ভয় দেখাতেই ৬ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে আবু হানিফ হৃদয় নানাভাবে সুবিধা গ্রহণ করেন বলে অভিয়োগ উঠে । লোটন শিকদার সেই সময় বার্তা দেয় বাবু সবকিছু দখল করে নিয়েছে। যা ছিলো অভিনব কায়দায় প্রতারণা।
বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে থাকা নেতৃবৃন্দদের অনেকেই বলন, ‘ তার (আবু হানিফ হৃদয়) মতো একজন ব্যক্তিকে গণঅধিকার পরিষদে স্থান গিয়ে মূলত সেই পরাকত চক্রের সুবিধাভোগীদের পুনর্বাসনের সুযোগ করে দিয়েছে দলটি। এভাবে বিতর্কিতদের দলে আশ্রয় দিলে অচিরেই এই রাজনৈতিক দল সাধারণ মানুষের আস্থা হারাবে এবং নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়বে। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করে যাওয়া এই দলের সাথে কোনভাবেই এই ব্যক্তির উপস্থিতি যায় না।’
অসংখ্য বিতর্ক ও নানা ন সমালোচনার পর এবার সেই আবু হানিফকে শুক্রবার (১ নেভেম্বর) সন্ধ্যায় ডিআইটিতে আয়োজিত গণঅধিকার পরিষদের সমাবেশে নুরুল হক নূরের পাশে দেখতে পেয়ে সমারোচনার ঝড় উঠেছে সর্বত্র। বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে । অথচ গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগের থেকেই সুবিধা নিয়ে গেছেন এই আবু হানিফ হৃদয়। নূরের পাশে আবু হানিফ হৃদয় দেখতে পেয়ে অবাক হন গণমাধ্যমকর্মী থেকে শুরু করে উপস্থিত গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।









Discussion about this post