বন্দরের ভূমিদস্যুতা, অটোষ্ট্যন্ড নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিএনপির বহিস্কৃত নেতা নানা অপকর্মের হোতা হান্নান সরকার নিয়ন্ত্রিত দুই গ্রুপের ধারাবাহিক দ্বন্দ্বে জোড়া খুনের ঘটনায় পলাতক অবস্থায় মাষ্টারমাইন্ডার ওসমানীয় দালাল হান্নান সরকারসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে যৌথ বাহিনীর চৌকষ দল ।
জোড়া খুনের পর পালিয়ে গাজীপুর সদরের গাজীপুরা ও বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনের পর অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
আজ দুপুরে (২৫ জুন) জোড়া খুনের মাষ্টারমাইন্ডার হান্নান সরকারসহ চার জনকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী।
গ্রেপ্তাররা হলো : অসংখ্য মামলার আসামী বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা ও সাবেক কাউন্সিলর মো. হান্নান সরকার, তার দুই ছেলে জুনায়েদ ও ফারদিন, বাবু শিকদার।

জেলা পুলিশের কর্মকর্তা তারেক আল মেহেদী বলেন, বন্দরের ডাবল মার্ডারের (জোড়া খুন) ঘটনায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা বর্তমানে থানা পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন। বাকিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান আছে।
তথ্য সূত্র মতে আরো জানা যায়, মাষ্টার মাইন্ডার ও এজাহার নামীয় জোড়া খুনের আসামী হান্নান সরকারের দুই পুত্র জুনায়েদ (২৬), ফারদিন (২২) সহ জুয়ারি বাবুকে সাথে নিয়ে হান্নান সরকারের বাড়ির আংগিনায় ‘খাদিজাতুল কুবরা (রা:) মহিলা মাদ্রাসার সানসেটের টিনের ছাদ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা সুইচ গিয়ার উদ্ধার করে পুলিশ।
জানা যায়, বন্দরের ভূমিদস্যূতা, অটোষ্ট্যন্ড নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিএনপির বহিস্কৃত নেতা হান্নান সরকার নিয়ন্ত্রিত দুই গ্রুপের ধারাবাহিক দ্বন্দ্বের জোড়া খুনের ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের ঝড় উঠে ।
হান্নান বাহিনীর ছুরিকাঘাতে নিহত বৃদ্ধ কুদ্দুস মিয়ার মেয়ে রোকসানা বেগমের দায়ের করা মামলায় বাবু ওরফে জুয়ারী বাবু, হান্নান সরকার, বাবু শিকদার, মোস্তফা, রহিম, শ্যামল, নাঈম, রাতুল, রাকিব, জুনায়েদ, ফারদিন, সিফাত, জাহাঙ্গীর, কানা শাহিনসহ আরো অজ্ঞাতনামা ২০/৩০ জনকে আসামী করা হয়।
অপরদিকে বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান (৪২) হত্যার ঘটনায় মামলাটি করেছেন নিহতের ভাই এবং বৃদ্ধ কুদ্দুস হত্যা মামলার অন্যতম আসামী হান্নান সরকারের ঘনিষ্ট সহযোগি খালেদ সাইফুল্লাহ। অভিযোগে জাফর, জনি, মালেক, রায়হান, শাহিন মিয়া, ঋষিকেশ মন্ডল মিঠু, জাহাঙ্গীর, আসিফ, ইমরান, মুরগী নয়ন, রবিন, শান্ত, সোহেল, অনিক, রবিন, মাশরাফি, বোছা পারভেজ, শুভ, লিখন, পরান, জয়, পিয়াস, সাব্বির চান্দু, ইব্রাহিম, রুবেল, শ্যামল, মুন্না, আতিক, সুমনের নাম উল্লেখ করে আরো অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করা হয়েছে ।
চাঞ্চল্যকর এমন জোড়া খুনের ঘটনার পরপর গাঢাকা দেয় মাষ্টারমাইন্ডার হান্নান সরকারসহ তার পরিবার ও সহযোগিরা।
ঘটনার শুরু থেকে অর্থাৎ শুক্রবার রাত থেকে বারবার সতর্কতার পরও এমন ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক আল মেহেদীর সার্বিক তত্বাবধানে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি), ডিবি নারায়ণগঞ্জ এর দায়িত্ব প্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোহেল রানা, নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খন্দকার জহির, ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা আব্দুল জলিল, টিপু সুলতান, সোহেল মিয়া, রুবেল মিয়া সারাদিন রাত বন্দর, নারায়ণগঞ্জ সদর ও গাজিপুরে অভিযান চালিয়ে মাষ্টার মাইন্ডার হান্নান সরকারসহ ৫ জনকে গ্রেফতার ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করা সুইচ গিয়ার উদ্ধার করে।
প্রসঙ্গতঃ গত শুক্রবার ২০ জুন সন্ধ্যা থেকে মধ্যরাত ২ টা পর্যন্ত দফায় দফায় উপজেলার ২২ নম্বর ওয়ার্ডে এই সংঘর্ষে অন্তত আটজন আহত হলে আইনশৃংখলা বাহিনীর অসংখ্য কর্মকর্তাসহ জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা হান্নান সরকারকে সরসরি তার নিয়ন্ত্রিত সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য কঠোর ভাষায় সতর্ক করে। এমন কঠোর সতর্কতার পরও হান্নান সরকার, তার ভাই, পুত্রসহ অসংখ্য কিশোর গ্যাংয়ের সহায়তায় তান্ডব অব্যাহত রাখে। এমন তান্ডবের ধারাবাহিকতায় প্রথমে কুদ্দুস মিয়া (৬০) কে ছুরিকাঘাত করে হত্যার পর কুদ্দুস মিয়ার হত্যাকান্ডের কাউন্টার হিসেবে বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান (৪২) হত্যার ঘটনা ঘটায় হান্নান সরকার। এই মেহেদী হাসান হত্যাকান্ডের মামলায় নানা নাটকীয়তার পর হান্নান সরকারের চরম প্রতিদ্বন্ধী সাবেক কাউন্সিলর শাহিন মিয়াকে আসামী করে মামরা দায়ের করা হয়। শুক্রবার ৮ জনকে আহত, শনিবার জোড়া খুন, রোববার লাশ ময়না তদন্তের পর দাফন শেষে মামলা হলেও মাষ্টার মাইন্ডার হান্নান সরকার নগরীর টানবাজার এলাকায় অবস্থান করে উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নিতে পুত্র ও সহযোগিদের সাথে নিয়ে গাজিপুরে গাঢাকা দেয় । সেই গাজিপুর থেকেই চারজনসহ গ্রেফতার হয় মাষ্টার মাইন্ডার হান্নান সরকার।









Discussion about this post