সোনারগাঁয়ে শিল্পাঞ্চল ছাড়াও সনাতন ধর্মালম্বীদের উপসনালয় হিসেবে সারা বিশ্বে ব্যাপক পরিচিত বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম বারদী এলাকায় আগমনের জন্য বিশাল পথ জুড়ে রয়েছে শুনশান নিরবতা । গ্রামীন এই জনপথে দিনের বেলায় লোকজনের সমাগম দেখা গেলেও সন্ধ্যার আরো নিভে যাওয়ার সাথে সাথেই ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয় বারদী আশ্রমের আশেপাশের এলাকা ।
অনেকের মতোই বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমে শ্রদ্ধাঞ্জলী ও পূজা আর্চনার পর গত সোমবার সন্ধ্য সাড়ে সাতটায় সিমেন্ট ফ্যাক্টরী সংলগ্ন ভাঙ্গা ব্রীজ এলাকায় কয়েকজন লোকনাথ ব্রহ্মচারী ভক্ত ছিনতাইকারীদের কবেলে পরে । গাড়ী লক্ষ করে ইট নিক্ষেপসহ টেটা নিক্ষেপের পর মাইক্রোবাস থামানোর চেষ্টা করে ছিনতাইকারীরা । একই সাথে প্রতিবেদকের মটর সাইকেল লক্ষ করে অনুরূপ আক্রমন করলেও আঘাত লক্ষভ্রষ্ট হলে অপ্লের জন্য রক্ষা পায় সকলেই ।
এ বিষয়ে তাৎক্ষনিক সোনারগাঁ থানার উপ পরিদর্শক এ কে আজাদসহ পুলিশের অনেককেই অবহিত করলে পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে ব্রীজের নীচে থাকা কয়েকজন ছিনতাইকারী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় ।
এ সময় পুলিশের অনেকেই বলেন, প্রায়ই ছিনতাইকারীদের দৌড়াত্মের খবর পাওয়া গেলেও পুলিশ অভিযান চালালে অপরাধদের আর খুজে পাওয়া য়ায় নািই । এরপরও পুলিশ রয়েছে সতর্ক অবস্থানে।
সোনারগাঁ প্রতিনিধিঃ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁ উপজেলার টিপরদী ও মেঘনা ইকোনমিক জোন এলাকায় ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। চক্রের সদস্যরা চৈতী কম্পোজিট ও ইকোনমিক জোনসহ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সাধারণ শ্রমিকদের টাকা-পয়সা, মোবাইল ফোনও প্রয়োজনীয় মালামাল লুট করে নেওয়া অভিযোগ উঠেছে।
ছিনতাইকারীদের বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করলে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, ছয় মাসে টিপরদী এলাকায় প্রায় অর্ধশত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ কোন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করতে পারেনি। ভূক্তভোগীা থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ ঘটনায় এলাকায় কারখানার শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে চরম ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।
সূত্র জানায়, উপজেলার টিপরদী এলাকায় চৈতী কম্পোজিট, শোভন ওভন ব্যাগ, ক্যানটাকি, ইউসান, কনকা ইলেকট্রনিকস, এনবাল্ক, মেঘনা ইকোনমিক জোন ও এসিআই ঔষধ কারখানাসহ ১০-১২টি শিল্প-প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিল্প-প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শ্রমিক কাজ করে রপ্তানিকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান চৈতী কম্পোজিট লিমিটেড কারখানায়। শিল্প-প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শ্রমিক ও কর্মচারীদের বেতন দেয়ার দিন টার্গেট করে রাতের আধারে বাড়ি ফেরার পথে একাধিক ছিনতাইকারী চক্র টাকা পয়সা ও মোবাইলসেটসহ বিভিন্ন মূল্যবান মালামাল লুট করে। প্রতিবাদ করলেই হামলা ও হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চৈতী কম্পোজিটের কয়েকজন শ্রমিক জানান, টিপরদী এলাকায় ১০-১২টি শিল্প কারখানা রয়েছে। কারখানার মালিকরা মাসের বিভিন্ন সময় শ্রমিকদের মাসিক বেতন দিয়ে থাকে। বেতন নিয়ে বাসায় ফেরার পথে ছিনতাইকারী চক্র গতিরোধ করে ও টাকা পয়সা, মোবাইলফোন ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এসব ঘটনা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ৬মাসে টিপরদী এলাকায় কমপক্ষে অর্ধশত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। অধিকাংশ ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছে সাধারণ পোশাক শ্রমিকরা।
চৈতি কম্পোজিটের ডিজিএম এডমিন বদরুল ইসলাম খাঁন জানান, গত শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে কারখানা থেকে বাসায় ফেরার পথে মধুমতি ফিলিং স্টেশনের সামনে ৪-৫জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র ঠেঁকিয়ে কারখানার এ্যাসিট্যান্ট ডায়িং ম্যানেজার মোঃ রাকিবের কাছ থেকে নগদ ১৯ হাজার টাকা ও মোবাইল সেট নিয়ে যায়। থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরও পুলিশ কোন কার্যকারী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। গত ২৬ আগষ্ট কারখানার ডায়িং সেকশনের ডেপুটি ম্যানেজার মোঃ শিহাব উদ্দিনকে ছিনতাইকারীা পিটিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে ২২হাজার ৫‘শ টাকা ও মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেয়।
এ ঘটনায় থানায় মামলা দায়েরের পরও পুলিশ কোন ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেনি। এছাড়াও বিভিন্ন সময় কারখানার সাধারণ শ্রমিকদের টার্গেট করে একাধীক ছিনতাইকারী চক্র তাদের সর্বস্ব ছিনতাই করে নিয়ে যাচ্ছে। সাধারন শ্রমিক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে চরম আতংক বিরাজ করছে।
ক্যানটাকি গার্মেন্টেসের শ্রমিক অহিদুর রহমান বলেন, বেতন পেয়ে বাসায় ফেরার পথে পুরান টিপরদী ব্রীজের উপর থেকে তার কাছ থেকে ১২হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। এ বিষয়ে পুলিশ কোন কার্যকারী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
মেঘনা ইকোনমিক জোনের মেঘনা ক্যাবলের শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কের পুরান টিপুরদী এলাকায় বিভিন্ন সময়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। আমার বন্ধু রাসেল মিয়ার কাছ থেকে ৪ হাজার ৭‘শ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। এ এলাকায় সন্ধ্যা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত পুলিশী টহল জোরদার করার পাশাপাশি ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করা প্রয়োজন।
ছিনতাইকারীদের এমন দৌড়াত্মের বিষয়ে বৃদ্ধ অটোচালক মেসলেম উদ্দিন (৬০) বলেন, দিনের বেলায় যেমন তেমন । রাতের আধার নামার সাথে সাথেই ছিনতাইকারীরা সড়কের পাশে ঝোপঝাড়ে বসে থাকে । আর কেউ দূর থেকে আসতে দেখলেই হামলার ঘটনা ঘটায় । ছিনতাইকারীরা এক বা দুই-তিন থাকে না, তাদের অনেক বড় দল আছে । পুলিশ আসলে এই ছিনতাইকারীরা কিভাবে পালিয়ে যায় তা বোঝাই যায় না । দূর থেকে পুলিশকেও লক্ষ করে ছিনতাইকারীরা । প্রায় প্রতিদিনই আশ্রমের আসা যাওয়ার কয়েকটি পথে অহরহ এমন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে ।
সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মনিরুজ্জামান মনির বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্নভাবে ঘটে থাকে। কেউ অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। টিপরদী এলাকায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় ইতিমধ্যে দুটি মামলা গ্রহণ করা হয়েছে। ছিনতাই প্রতিরোধে এলাকায় পুলিশী টহল জোরদার করা হয়েছে।









Discussion about this post