দীর্ঘদিন যাবৎ রাজধানীতে শিক্ষার নামে নানা অপকর্ম করার ঘটনায় অসংখ্য অভিযোগের পর প্রশাসনের অনেককেই নানাভাবে ম্যানেজ করে ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান লায়ন এমকে বাশার পিএমজেএফ দূর্ততার পরিচয় দিয়ে আসছে । প্রতারণার এমন কোন ফাদ নাই যে তার দ্বারা সংগঠিত হয় নাই । নিজের কোন শিক্ষাগত যোগতা না থাকলেও দেশের বিজ্ঞজনদের ম্যানেজ করে শিক্ষার নামে মহা বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজ । ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে কোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ছবি টাঙ্গিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন ক্যামব্রিয়ান স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান লায়ন এমকে বাশার বিশাল ক্ষমতাধর । অথচ খোজ নিয়ে জানা যায় তিনি মহাধূর্ত এক প্রতারক । অভিভাবকদের কাছ থেকে পাওয়া অসংখ্য অভিযোগের ফিরিস্তি আবারো যাচাই করতে চলছে পূনরায় অনুসন্ধ্যান……….
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
সরকারি আইন ও বিধিবিধান লঙ্ঘন করে নারায়ণগঞ্জে শুরু হয়েছে ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও কলেজের কার্যক্রম। সংশ্লিষ্ট বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ে কোনো অনুমতি না থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে ভর্তি কার্যক্রম শুরুও করে দিয়েছে। যা নিয়মানুসারে ‘অবৈধ’ এবং শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা।
এদিকে, ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও কলেজের এহেন কর্মকান্ডের কারণে হুমকির মুখে পড়তে পারে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান লায়ন এমকে বাশার মন্ত্রণালয়ের নিয়ম-কানুন না মেনেই ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডে জেলা পরিষদের পাশে প্রতিষ্ঠানটির শাখা শুরু করেছেন। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বোর্ড ও মন্ত্রণালয়ের বিধিবিধান থাকলেও সেদিকে তিনি থোড়াই কেয়ার করেন।
সূত্র জানায়, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের বিধির মধ্যে সুস্পষ্ট রয়েছে, একই নামে একটি স্কুল ও কলেজ অন্যত্র শাখা করলে সেটির অনুমোদন পাবে না। এমন নিয়ম থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অদৃশ্য এক ক্ষমতা বলে নারায়ণগঞ্জে শুরু করেছেন তাদের শাখা। যা ইতোমধ্যে কার্যক্রমও শুরু করেছেন নিয়ম নীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সচিব প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলছেন, “সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি ব্যতিত কোনো কলেজ বা স্কুল শাখা পরিচালনা করতে পারবে না। তারা (ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও কলেজ) মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমতি নিয়েছে কিনা তা আমার জানা নেই।”
নারায়ষগঞ্জ জেলা শিক্ষা অফিসার শরীফুল ইসলাম বলছেন, “নিয়ম না থাকলেও ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও কলেজ তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। আমারও একই প্রশ্ন তারা এটা কীভাবে করছে ?”
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু তালেব বলেন, “তারা শিক্ষা বোর্ড থেকে এখনও কোনো অনুমোদন পায়নি। শুনেছি আবেদন করেছেন। অনুমোদন না পেলে তারা বোর্ড পরীক্ষা নিজেদের নামে দিতে পারবে না। অন্য স্কুলের রেজিস্ট্রেশন থেকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেওয়াতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “নারায়ণগঞ্জে অনেক স্কুলই চলছে অনুমতি ছাড়া। অনেক কিন্ডার গার্টেন রয়েছে। তাদের সাথে শিক্ষা বোর্ড সংশ্লিষ্ট কোনো সম্পৃক্ততা নেই যেমন সত্য তেমনি সত্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও কোনো এখতিয়ার বা ক্ষমতা আমাদেরকে দেওয়া হয়নি।”
তথ্য সূত্রে জানা যায়, একটি স্কুল বা কলেজ করতে হলে শিক্ষা বোর্ড থেকে অনুমতি নিতে হয়। আর অনুমোদনপ্রাপ্ত স্কুল বা কলেজকে বোর্ড থেকে একটি ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সনাক্তকরণ নম্বর (ইআইইএন)’ প্রদান করে থাকে। যা একটি কলেজের জন্য একটি নম্বরই দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও কলেজের জন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সনাক্তকরণ নম্বর একটিই প্রদান করা হয়েছে। নিয়মানুসারে এই প্রতিষ্ঠানটি একই নামে দ্বিতীয় কোনো শাখা করতে পারবে না। এবং শাখা করলেও তাদেরকে ইআইইএন নম্বর প্রদান করা হবে না।
থোজ নিয়ে আরো জানা গেছে, ইআইইএন নম্বর ব্যতিত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা নিজ প্রতিষ্ঠানের নামে কোনো রকম বোর্ড পরীক্ষা তথা জেএসসি, এসএসসি এবং এইচএসসিসহ বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃত কোনো পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না বা রেজিস্ট্রেশনভূক্ত হবে না। এ ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকে বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে ইআইইএন প্রাপ্ত কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে রেজিস্ট্রেশন করে পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে।
এদিকে ইআইইএন প্রাপ্ত না হয়েই ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও কলেজ নারায়ণগঞ্জে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। যা প্রতারণামূলক বলেই মন্তব্য করেছেন অনেকে। বলা হচ্ছে, একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন নীতি ও নৈতিকতা থেকে দূরে সরে গিয়ে ব্যবসাটাকেই বড় করে দেখে একমাত্র তখনই তারা এহেন কর্মে লিপ্ত হতে পারে। নারায়ণগঞ্জেও ঠিক তেমনটির আশ্রয় নিয়েছে ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও কলেজ ।
তবে, এখানে জেনে বা না জেনে অভিভাবকেরা তাদের সন্তানদের ক্যামব্রিয়ানে ভর্তি করিয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। কেননা, এই প্রতিষ্ঠানটি ইআইইএন এর জন্য আবেদন করেছেন মাত্র, আদতে তাদেরকে ইআইইএন দেওয়া হবে কিনা, এর নিশ্চয়তা কে দিবে ? আর দিলেও শিক্ষা নীতি অনুসারে ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও কলেজ নামে তারা ইআইইএন পাবে না, এটুকু শতভাগ নিশ্চিত করেছেন শিক্ষা নিয়ে কাজ করা সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনেরা।
তাদের ভাষ্য মতে, ইআইইএন প্রাপ্ত না হলে কোনো প্রতিষ্ঠান যখন শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিবে তখন তাদের অভিভাবকদেরকে বিষয়টি পরিস্কার করে দেওয়া উচিত। আর সেটি যদি কোনো প্রতিষ্ঠান না করে থাকে তাহলে সেটি নিঃসন্দেহে প্রতারণা, অনৈতিক কাজ।
এদিকে জেনে বুঝে নারায়ণগঞ্জে তেমনই অনৈতিক কাজ করে যাচ্ছে ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও কলেজ নামের প্রতিষ্ঠানটি। নানা ধরণের প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে তারা শুরু করেছেন ভর্তি কার্যক্রম। যা সম্পূর্ণ রূপেই অবৈধ। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, জেনে বুঝে এমন অবৈধ কার্যক্রম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কীভাবে চালাতে পারে ?
এ প্রসঙ্গে ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও কলেজের নারায়ণগঞ্জ শাখার ভাইস প্রিন্সিপাল মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ূম জানায়, ইআইইএন তারা এখনও পাননি বিষয়টি স্বীকার করে তিনি জানিয়েছেন, “আমরা আবেদন করেছি। নিশ্চয় পাবো। আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব অবশ্যই পেয়ে যাবেন। সেদিক তার জানা আছে। সব কিছু মাথায় রেখেই কার্যক্রম শুরু করেছি।”
শাখা করার অনুমতি নেই, তাহলে একই নামে কি করে ইআইইএন পাবেন এবং যদি না পান তাহলে এখানে যারা ভর্তি হচ্ছেন তাদের শিক্ষা জীবনও তো হুমকির মুকে পড়বে, এমনটা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা অবশ্যই পাবো। আর শাখার অনুমোদন আছে কিনা সেটা মুখ্য নয়, আমাদের নরসিংদি, আখাউড়াসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলাতে ক্যামব্রিয়ানের শাখা চলছে।”
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান লায়ন এমকে বাশার পিএমজেএফ বলেন, “আমরা ইআইইএন পেতে আবেদন করেছি। পেয়ে যাবো। যদি না পাই তাহলে শিক্ষার্থীরা ঢাকা থেকে পরীক্ষা দিবে। ভর্তি নেওয়ার সময় অভিভাকদেরকে এভাবেই বলে নিয়েছি।”
একই নামে স্কুল বা কলেজের দ্বিতীয় কোনো শাখা করার নিয়ম নেই, তাহলে আপনারা কীভাবে পাবেন, “জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এর নাম করেছি ‘নারায়ণগঞ্জ ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও কলেজ’ অন্য জেলাগুলোর ক্ষেত্রেও এমনটা করেছি।”
এদিকে শহর ও শহরতলীতে সাটানো ব্যানার ফেস্টুনে সরাসরিই নামকরণ রয়েছে ‘ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও কলেজ’ কেবল ক্যাম্পাসের ভবনে সাটানো সাইনবোর্ডে মূল নামের উপরে লাল রঙ দিয়ে ছোট্ট করে ‘নারায়ণগঞ্জ’ লেখা রয়েছে। যা অনেকাংশেই ফাঁকিবাজির আশ্রয় নিচ্ছে এর কর্তৃপক্ষ। কেননা, এই প্রতিষ্ঠানটি ইআইইএন পেলেও এর নাম কিন্তু ‘ক্যামব্রিয়ান স্কুল ও কলেজ’ হচ্ছে না। আর সাধারণ অভিভাবকেরা কিন্তু এই নামের প্রতিষ্ঠানেই তাদের সন্তানদের ভর্তি করাচ্ছে।
এ বিষয়টি একরকম প্রতারণা, এমন বললে, বাশার জানান, “এটা প্রতারণা নয়। ক্যাম্পাস ঘুরে দেখুন। অত্যন্ত সুন্দর একটি ক্যাম্পাস করেছি। আপনারা কি চাননা, নারায়ণগঞ্জে ভালো মানের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হোক ? আপনি আজ নিউজ না করে শুক্রবার আসেন এক সাথে একটু চা খাবো।”
দেশের লিডিং একটি গণমাধ্যম সূত্র থেকে জানা গেছে, এই প্রতিষ্ঠানটি টাকা কামানো আর শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারী নির্যাতনের সেলে পরিণত হয়েছে। ভর্তি থেকে শুরু করে হোস্টেলে বসবাস পর্যন্ত প্রতিটি খাতে মোটা অংকের অর্থ আদায় করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, সুযোগ-সুবিধা দেয়ার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে উচ্চহারে এই অর্থ আদায় করা হলেও প্রতিশ্রুত সেই সুবিধা দেয়া হয় না। পাঠদান করা হয় কোচিং সেন্টার স্টাইলে। ফলে শিক্ষার্থীরা পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান অর্জন করতে পারছে না। হোস্টেলে দেয়া হয় নিম্নমানের খাবার।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক তথ্য হচ্ছে- প্রতিষ্ঠানটির হোস্টেলে শিক্ষার্থীদের ওপর চলে নিষ্ঠুর নির্যাতন। নির্যাতনের চিত্র এতই ভয়াবহ যে, ২০১৪ সালের ১৭ অক্টোবর হোস্টেলে একজন ছাত্রকে বেধড়ক পেটানো হয়। এ ঘটনার পরদিন সকালে ছাত্রটির লাশ পাওয়া যায়। পরিবার এ ঘটনাকে ‘খুন’ হিসেবে অভিযোগ করেছে। খুনিদের বিচারের দাবিতে ২০ অক্টোবর কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজন সমাবেশ করেন। ২২ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রাষ্ট্রীয় কাজে কক্সবাজারে সফরে গেলে স্থানীয় ছাত্রনেতা এবং রায়হানের পরিবারের সদস্যরা তার (মন্ত্রী) সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ছাত্র হত্যার বিচার দাবি করেন। মন্ত্রী তখন এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। সরেজমিন দেখা গেছে, ১৭ অক্টোবরে পিটিয়ে ছাত্রকে নির্যাতন ও ঝুলন্ত লাশ পাওয়ার পরদিন শিক্ষার্থীরা হোস্টেল ত্যাগ করে।
মূলত শিক্ষা বাণিজ্যকে উপজীব্য করে চলছে এই প্রতিষ্ঠানটি। এই বাণিজ্য নির্বিঘ্নে এবং পোয়াবারো করার লক্ষ্যে পাশাপাশি আরও তিনটি কলেজ খুলেছে এর উদ্যোক্তা গোষ্ঠী। বাকি তিনটি কলেজ হচ্ছে- মেট্রোপলিটন কলেজ, কিংস কলেজ এবং উইনসাম কলেজ।
অভিযোগ রয়েছে, ক্যামব্রিয়ান কলেজের নামে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ক্লাসও করানো হয় সেখানে। কিন্তু পরে এদের অনেককেই আবার অন্য কলেজগুলোর নামে পরীক্ষা দেয়ানো হয়। অথচ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে ক্যামব্রিয়ানের খরচই আদায় করা হয়। অন্য কলেজ থেকে পরীক্ষার ব্যাপারে কেউ আপত্তি করলে তাদের টিসি (বদলি সনদ) দিয়ে কলেজ থেকে বের করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। এ ঘটনাকে অভিভাবকরা প্রতারণা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ ছাড়াও দীর্ঘদিন যাবৎ ক্যামব্রিয়ান কলেজের কর্তৃপকক্ষের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ থাকায় প্রশাসনের অনেক উর্ধতন কর্মকর্তাদেরকে নানাভাবে ম্যানেজ করায় চতুরতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে নানা অপরাধ কার্যক্রমের পরিচয় দিয়েই যাচ্ছে ।









Discussion about this post