বিশাল সূতা চোরাই কারবারী চক্রের হোতাদের অনেকেই নানা লেবাস ধারণ করে বছরের পর বছর যাবৎ স্থানীয় প্রবাবশালী নেতাদের পাশাপাশি আইনশৃংখলা বাহিনীর গুটি কয়েক কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চালিয়ে আসছিলো চোরাই কারবারের রমরমা বাণিজ্য। নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নিয়মিত মোটা অংকের প্রকাশ্যে মাসোয়ারা প্রদান করার কারণে ইতিপূর্বে কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালায় সূতা চোরচক্রের হোতা আমিন উদ্দিন ও তার সহযোগি সাঙ্গপাঙ্গরা । এমন হামলার ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও পুলিশী সহযোগিতা না থাকায় সূতা চোরাই কারবারী হাজী বিল্লাল, হাজী ইসমাইল, ফরহাদ, সুব্রত রায়, বিপুল মন্ডল, পুলক চৌধুরী, জহির হোসেন, মো. আওলাদ হোসেন, আমিন উদ্দিন, গোবিন্দ সাহা, সেলিম রেজা, ইয়ার্ণ মার্চেন্ট এর সাবেক সহ সভাপতি আব্দুল মান্নান মিয়া, নজরুল ইসলাম, ফরহাদ, আমিন উদ্দিন, আইয়ুব আলী, মোঃ সেলিম, সমির সাহা ও রুহুল আমিন এবং তাদের সহযোগি (যাদের নাম মামলায় অন্তভূক্ত করা হয় নাই ) আমিন উদ্দিনের ভাগিনা রায়হান, ভাতিজা গজারিয়া ট্রেডিং, আরেক ভাতিজা আনোয়ার বেপারী, বিপুল মন্ডল, সুব্রত রায়সহ আরো কয়েকজন সরকারী তদন্ত কর্মকর্তাদেরপিটিয়ে যখমসহ সরকারী গাড়ী ভাংচুর করে । এরপরও তাদের টিকিটিও স্পর্শ করতেদ পারে নাই কেউ
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
এতো ঘটনার পরও সাম্প্রতিক সময়ে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কাস্টমস বন্ড কমিশন অভিযানের পর একই ধারায় সূতার চোরাই কারবার চালিয়ে আসার অপরাধে একের পর এক অভিযানের পর নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ কুক্ষাত সূতা ডাকাতি/ চোরাই ও রাজস্ব ফাঁকির অন্যতম হোতা তোতা মিয়ার উত্তরাধিকার গোলাম কিবরিয়া মামুনকে গ্রেফতার করে ।
গ্রেফতারকৃত চোরাই সূতার ব্যবসায়ী গোলাম কিবরিয়া মামুনকে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানোর পর নারায়ণগঞ্জ আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মিল্টন হোসেন আসামীপক্ষের আইনজীবীর যুক্তি শেষে এক (১) দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও নারায়ণগহ্জ শহরের অনেক ব্যবসায়ীর অভিযোগ থেকে জানা যায়, বহুদিন ধরেই কথিত ছিলো এখানে সূতা ব্যবসার আড়ালে বিশাল বড় একটি চোরাই সূতা কারবারিদের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বন্ড সুবিধায় আনা সূতার রমরমা ব্যবসা করে রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছও হয়ে গেছেন ।
বছরের পর বছর জুড়ে প্রকাশ্যে এমন চোরাই সূতার কারবার চালিয়ে আসলেও চোরাকারবারীদের এদের টিকিটিও ছুঁতে পারেনি প্রশাসন। ফলে, এই চক্রটি বীরদর্পেই চালিয়ে যাচ্ছিলো এই চোরাই সূতার কারবার। প্রায় প্রতিনিয়তঃ শহরের চিহ্নিত এই চোরাই কারবারীদেরকে নারায়ণগঞ্জ থানা, ডিবি কার্যালয়সহ বিভিন্ন আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে খোসগল্প করতে দেখা গেছে ।
দিকে চলতি বছরের ৮ ও ১৪ ডিসেম্বর টানবাজার এলাকায় পৃথক দুটি অভিযান চালায় ঢাকা রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এরমধ্যে ৮ ডিসেম্বর এক কোটি টাকা মূল্যের ১০ টন বন্ডেড সূতা জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কাস্টমস বন্ড কমিশন। টানবাজার এলাকার হাজী বিল্লাল হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিসমি ইয়ার্ন ট্রেডিংয়ের গুদামে এ অভিযান চালিয়ে এই সূতা উদ্ধার করা হয়।
অন্যদিকে ১৪ ডিসেম্বর শহরের বংশাল রোডের সুতারপাড়া এলাকার সাদ ট্রেডার্স এবং আজাদ ট্রেডার্সের গুদামে অভিযান চালিয়ে ৩০ টন বন্ডেড সুতা আটক করা হয়। যার মূল তিন কোটি টাকারও উপরে। পরপর দুবার চোরাই সুতা উদ্ধারের ঘটনায় টনক নড়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের।
অভিযান সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, দেশের বস্ত্র-পোশাকসহ বেশকিছু রফতানিমুখী খাতের শিল্পপ্রতিষ্ঠান রফতানির উদ্দেশ্যে আমদানীকৃত পণ্যে বিশেষ শুল্ক সুবিধা পায়। বন্ড বা বন্ডেড ওয়্যারহাউজ নামে পরিচিত এ শুল্ক সুবিধায় আনা পণ্য রফতানি না করে দেশের অভ্যন্তরে বিক্রি করে সংঘটিত হয় শুল্কমুক্ত সুবিধার অপব্যবহার। এ অপব্যবহার রোধে বিশেষ তৎপরতা শুরু করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।
এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দীর্ঘ তদন্ত এবং অনুসান্ধানে চোরাই সিন্ডিকেটের ১৮ চোরাকারবারিকে শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ২৫ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। ঢাকা রাজস্ব বোর্ডের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা নাহিদুল হাসান ও আতিকুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা দুটি দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পরপরই নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ টানবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই চক্রের অন্যতম হোতা সুতা ব্যবসায়ী তোতা মিয়ার ছেলে চোরাই সূতা কারবারি মো. গোলাম কিবরিয়া মামুনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানোর পর রিমান্ড শুনানী শেষে এক দিনের বরমান্ড মঞজুর করেন ।
মামলার অন্যান আসামীরা হলেন, বিসমি ইয়ার্ণ ট্রেডিংয়ের হাজী বিল্লাল, জ্যামি এন্টারপ্রাইজের হাজী ইসমাইল, টানবাজারের ব্যবসায়ী ফরহাদ, এস এস থ্রেড এন্ড এক্সেসরিজের সুব্রত রায়, শুভা এন্টারপ্রাইজের বিপুল মন্ডল, মেসার্স পুলক চৌধুরীর মালিক পুলক চৌধুরী, এইচ এস ট্রেডিং এর মো. সেলিম রেজা, তোতা ইয়ার্ণ ট্রেডিং এর মো. গোলাম কিবরিয়া মামুন, জামাল ইয়ার্ণ ট্রেডিং এর আলহাজ আব্দুল মান্নান মিয়া, শিমুলিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের খান নজরুল ইসলাম, মেসার্স সাদ ট্রেডার্সের মো. জহির হোসেন, আজাদ ট্রেডার্সের মো. আওলাদ হোসেন, সুতাঘরের আমিন উদ্দিন, রিতা ট্রেডার্সের গোবিন্দ চন্দ্র সাহা, টানবাজারের ব্যবসায়ী আইয়ুব আলী, যাকী এন্টারপ্রাইজের মো. সেলিম, এনবি ট্রেডিংয়ের সমির সাহা, আমিন ব্রাদার্সের রুহুল আমিন। এরমধ্যে উভয় মামলায় হাজী ইসমাইল ও ফরহাদকে আসামী করা হয়েছে।
শহরের টানবাজার এলাকার চোরাই কারবারীদের কয়েকটি ঘনিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করে বলেন, এই মামলার এজাহার পত্র হাতে নিয়ে কি করে গ্রেফতার এড়ানো যায় সেই লক্ষ্যে আইনজীবীদের কাছে দৌড়ঝাপ চালাচ্ছে । উচচ আদালত থেকে জামিন নিয়ে ফের একই কায়দায় কারবার চালাতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে চোরাই কারবারীদের সকলেই ।
সদর মডেল থানা পুলিশের অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেটকে বলেন, মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামী গোলাম কিবরিয়া মামুনকে রিমান্ডে আনা হয়েছে।উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেতে দৌড়ঝাপের বিষয়ে ওসি আসাদুজ্জামান আরো বলেন, তাদের কাজ তারা করবে আামাদের আসামী গ্রেফতারে অভিযান চলছে ।









Discussion about this post