“পুলিশে ভালো পোলা ভর্তি করে কনস্টেবলে ? সবাই কয় জন্মের পরে আমার পোলা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বানাইবো। কেউ তো কয় না পুলিশ কনস্টেবল বানাইবো। এইটা বলে ? তাইলে কোনটা পুলিশ কনেস্টেবল হয় ? যে পোলা আইয়ে পাস বা মেট্রিক পাস করছে। এ ঘুরে বেড়ায় বাপ-মায় টিকতে পারে না। তখন এমপি-মন্ত্রী-এসপি-ডিসি কারে ঘুষ দেবো কি করবো না করবো তখন পুলিশে ঢুকায়। কারণ এইটা শয়তান এইটারে পুলিশে ঢুকাইতে হইবো। এইটারে ঘরে রাখতে চায় না। এইতো অবস্থা ? কেউতো কয়না আমার ছেলে পুলিশে গিয়ে মানুষের ভালো সেবা করবে। এইটা কেউ বলে? সেখান থেকে আইনা ট্রেনিং দেওয়াইয়া এগুলারে ভালো করা এতো সহজ না। সে কারণে আমি বলতে পারবো না যে আমার সব পুলিশ ভালো। বাংলাদেশে ৯৯ জন লোক আমরা আইন ভাঙতে চাই। সেখানে আইন কীভাবে মানাবো?”
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
মুন্সীগঞ্জ জেলা থেকে বিদায় নিয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদানের পর ২৯ ডিসেম্বর যোগদানের পর উল্লেখিত মন্তব্য করে চরম বিপাকে পরেন মোহাম্মদ জায়েদুল আলম ফুয়াদ । পুলিশের কন্সষ্টেবলদের নিয়ে এমন অপমানজনক মন্তব্য করায় নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রায় আড়াইহাজার পুলিশ সদস্য ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলার পুলিশ সদস্যরা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে উল্টো এসপি বিরোধী মন্তব্য করে যাচ্ছেন অনবরত ।
২৯ ডিসেম্বর করা উল্লেখিত ওই মন্তব্যের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে এ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন পুলিশের সদস্যরা।
পুলিশের কন্সষ্টেবলদের নিয়ে এমন মন্তব্য করে চরম তোপের মুখে এসপি জায়েদুল আলম নিজের ফেজবুক পেইজে ভুল স্বীকার করে একটি পোস্টের মাধ্যমে ‘ক্ষমা’ চান মোহাম্মদ জায়েদুল আলম । তিনি তার পেইজে লিখেন, “আমি মোহাম্মদ জায়েদুল আলম । পুলিশ সুপার হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলায় যোগদানের পর এক মতবিনিময় সভায় আলোচনায় ফোর্স প্রসঙ্গে কথা বলি। আমার বক্তব্য খণ্ডিত আকারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হচ্ছে। আমার বক্তব্যে আমার প্রিয় পুলিশ বাহিনীর কোনো সদস্য কষ্ট পেলে আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি ।”
পরবর্তীতে বুধবার (৮ জানুয়ারি) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলমের নামে করা ফেসবুক পেজে ‘ক্ষমা প্রার্থনার’ ওই পোস্টটি আর পাওয়া যায়নি ।
পুলিশের অনেক সদস্য এমন ঘটনায় নিজেদের ফেজবুক ম্যাসেঞ্জারে প্রতিবাদ স্বরূপ উল্লেখ করেন , “ মোঃ জাহেদুল আলম (পি.পি.এম) পুলিশ সুপার, নারায়ণগঞ্জ বলেছেন……. যে সন্তানেরা নাকি খারাপ,মা বাবার অবাধ্য তারাই নাকি পুলিশের কনসটবলের চাকরি আসে । পরিবারের খারাপ ছেলে খারাপ ভাবে চলাফেরা করে এইসব ছেলেদের নাকি এমপি-মন্ত্রী ধরে ঘুষ দিয়ে পুলিশের এসপি ডিসি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ঘুষ দিয়ে চাকুরীতে ভর্তি করানো হয়।
১! পুলিশ আইন ও পি আরবিতে স্পষ্টভাবে বলা আছে কোন পুলিশ সদস্য বাহিনীর নামে দুর্নাম করতে পারবে না। সে পুলিশ বাহিনীর নামে দুর্নাম রটনা করেছে তা অপরাধ।
২! এসপি ডিসি দেরকে ঘুষ দিয়ে পুলিশে ভর্তি করানো হয় এটা দণ্ডবিধির ১৭১ ঘুষ খাওয়ার অপরাধ।
৩! এমপি-মন্ত্রীদের ধরে ঘুষ দিয়ে পুলিশে ভর্তি করানো হয় এমপি মন্ত্রী মহোদয়দের কে মানহানি করার অপরাধ যাহা ৪৯৯ দণ্ডবিধিতে বলা আছে ।
৪! পিআরবি এবং পুলিশ আইন স্পষ্টভাবে বলা আছে কোন খারাপ প্রকৃতির লোক কে পুলিশের চাকরিতে ভর্তি করানো যাবে না । খারাপ লোক ও দুষ্টু প্রকৃতির ব্যক্তিকে পুলিশের চাকরিতে ভর্তি করানোর অপরাধ।
৫ ! সে শুধু পুলিশ ডিপার্টমেন্টের কনস্টবল তথা মেরুদন্ডকে নয়ি পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই । এবং এমন আইন ভাঙ্গার অপরাধে এসপি জায়েদুল আলমের বিচার দাবী করছি । …. (এক কন্সষ্টেবলের ক্ষোভ)
তবে, পুলিশ সুপারের এই ক্ষমা চাওয়ার পরপরই পুলিশ সদস্যদের মধ্যে চলমান ক্ষোভের অগুন যেন আরও বেশি প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠে। শুরু হয় এবার প্রকাশ্যেই সমালোচনা । মুহূর্তের মধ্যেই এসপির ওই ক্ষমা চাওয়ার পোস্টটি ভাইরাল হয়। নজরে আসে গণমাধ্যমকর্মীদের। ফলশ্রুতিতে এ নিয়ে সংবাদও প্রকাশ হয়। এতে করে শুরু হয় তীব্র প্রতিক্রিয়া। পুলিশের বহু কনস্টেবল পুলিশ সুপারের ওই ‘ক্ষমা প্রার্থনা’র পোস্টের মন্তব্য বক্সে এসে সরাসরি নিজেদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করতে থাকেন ।
এদিকে এসব সমালোচনায় অনেকেই বলছেন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য করে পুলিশ ডিপার্টমেন্টের আইন ভঙ্গ করেছেন। যা শাস্তিমূলক অপরাধ। কেননা, পুলিশ আইন ও পিআরবি মোতাবেক পুলিশে থেকে পুলিশ বাহিনী সম্পর্কে কোনো রূপ দুর্ণাম রটাতে পারবে না। এরপরও যদি কেউ সে কাজ করেন তাহলে তিনি অপরাধ করেছেন। যা পিআরবি’র বিধান অনুপাতে শাস্তিযোগ্য।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলমের এমন মন্তব্যের পর নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সদস্যদের মধ্যে চরম ক্ষোভ প্রকাশ হওয়া এবং গাজীপুর জেলা, নড়াইল জেলা, নওগা জেলাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত কন্সষ্টেবেলদের মধ্যে চরম ক্ষোভ প্রকাশ পাওয়ায় তা নিয়ন্ত্রণ করতে জোড়ালোবাবে কাজ করছে পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ । একই সাথে নারায়ণগঞ্জের ৭ থানা ছাড়াও অন্যান্য পুলিশ বাহিনীর প্রায় ৩ হাজার কন্সষ্টেবল নিয়ে জরুরী বৈঠকের আয়োজন করেন ইউনিট প্রধানদের অনেকেই ।
নাম প্রকাশ না করার অনরোধ করে জেলা পুলিশে কর্মরত কয়েকজন কন্সষ্টেবলগণ চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন , নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশে চাকুরীরত এক পুলিশ সদস্য তার ছেলেকে মুন্সীগঞ্জ জেলা কোটায় পুলিশের কন্সষ্টেবল পদে চাকুরী দিতে ৭ লাখ টাাক ঘুষ দিতে হয়েছে । যে ছেলে এখন পুলিশের ট্রেনিয়ে রয়েছে । তাহলে এই ঘুষ নিলো কে ? কনসষ্টেবলরা কারাপ হয় ! তারা বিসিএস ক্যাডার । তারা কি কেরন ? এসপি জায়েদুল সাধু বলে নিজেকে প্রচার করেন । তার সহকর্মী যিনি মাত্র দুই মাস দায়িত্ব পালনকালে কি করেছে ? এসপি জায়েদুল যার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন, তিনি কি করে গেছেন এই নারায়ণগঞ্জে ?
এখন পুলিশের কন্সষ্টেবলদের বিরুদ্ধে অপমানজনক মন্তব্য করে ক্ষমা চেয়ে আবার মুছে ফেলে এখন প্রত্যেক থানার ওসিদের মাধ্যমে রুল কল করে সকল পুলিশ সদস্যদের শান্ত করার চেষ্টা চালোচ্ছেন । আমরা পুলিশ সদস্যরা শুধুমাত্র সার্ভিস বুকের কারণে এসপির কাছে হাত পা বাধা । নাইলে কোন রুল কলই কেউ মানতো না ।









Discussion about this post