নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপেডেট :
এবার মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে নারায়ণগঞ্জ ৩শ শয্যা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে অনৈতিকভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেছে অবসরে থাকা চিকিৎসক আবদুল মান্নান ।
৯ ফেব্রুয়ারী রাতে টানা ৭২ ঘন্টা এমন অনৈতিকভাবে সরকারী হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা সেবার নামে অসুস্থ্যদের সাথে প্রতারণার পর ব্যাপক অভিযোগের ভিত্তিতে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোতালেব হোসেনের আদেশে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরপি) সামছুজ্জোহা সঞ্জয় ডাঃ মান্নানকে হাসপাতাল থেকে বের করে দেয় । দুই মাসের ব্যবধানে আবার অজ্ঞাত ইশারায় সরকারী গুরুত্বপূর্ণ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আবার ৯ এপ্রিল বিকেল থেকে অনৈতিকভাবে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেছে ডাঃ মান্নান ।
এ বিষয়ে জানতে ডাঃ মান্নানের সাথে যোগাযোগ করলে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর সাথে অকপটেই বলতে থাকে, কয়েকটি ওষূধ কোম্পানীর আমার জন্য টাকা খরচা করে আবার হাসপাতালে নিয়ে এসেছে । আজ মঙ্গলবার বিকেল থেকেই ৩শ শয্যা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কাজ করছি । আমি সুপারের সাথে সাক্ষাৎ করেছি, আরপির সাথেও কথা বলেছি আলাদাভাবে । কি পরিমান টাকা খরচা হলো এমন প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান ডাঃ মান্নান ।
অসংখ্য অপকর্ম করার পর আবার কি করে নারায়ণগঞ্জের ৩শ শয্যা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে অবসরে থাকা একজন চিকিৎসক কাজ করেন এমন প্রশ্নে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরপি) ডাঃ সামছুজ্জোহা সঞ্জয় বলেন, তার বিরেুদ্ধে অভিযোগ তো ছিলো আগে থেকেই । সে নিজেকে সংশোধন করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছেন । এরপরও কি করে এমন মন্তব্য করেন ডাঃ মান্নান আমরা বুঝি না । তার বয়স হয়ে গেছে বৃদ্ধ মানুষ কোথাও কোন কাজ পান না সেই বিবেচনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে কিছুদিনের জন্য কাজ করা সুযোগ দিয়েছে । আর আমাদের হাসপাতালের সভাপতি সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সেলিম ওসমানের একটি সুপারিশপত্র নিয়ে এসছে বিবেচনায় তাকে কাজ করার জন্য সাময়িকভাবে অনুমতি দেয়া হয়েছে । তার এমন কর্মকান্ড অবশ্যই খতিয়ে দেখবো । আমি সাদাকে সাদা বলি আর কালোকে কালো বলতে পছন্দ করি । অপরাধ প্রমাণিত হলে আবার তাকে হাসপাতাল থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
অনৈতিকভাবে আবদুল মান্নান কিভাবে কাজ করছেন এবং তিনি সকলের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন বলে হাসপাতালে যে অভিযোগ চাউর হয়েছে এ বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জের ৩শ শয্যা হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার ডাক্তার জাহাঙ্গির আলমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপেডটকে বলেন, আমি অবশ্যই বিষয়টি দেখবো ।
জানা যায়, ৬ ফেব্রুয়ারীর আগ পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোতালেব হোসেন বলেছিলেন, হাসপাতাল থেকে অবসর নেয়ার পরও ডা. মান্নানের চিকিৎসা দেয়া সম্পর্কে তিনি অবগত ছিলেন না ।
এমন বক্তব্য গত বুধবার ৬ ফেব্রুয়ারী রাতে গণমাধ্যমে দেয়ার পর একদিনের ব্যবধানে আজ শুক্রবার ৮ ফেব্রুয়ারী দুপুর থেকে দেখা গেছে ৩০০ শয়্যা হাসপাতালের জরুরী বিভাগে চিকিৎসকের দায়িত্ব পালন করছেন অবসরে থাকা আবদুল মান্নান। যিনি গত দুই বছর আগেই চাকুরী থেকে অবসরে চলে গেছেন । জরুরী বিভাগে একের পর এক রোগী দেখছেন আর প্রতিটি ব্যবস্থাপত্রে মেরোপিনায়ম ইনজেকশনসহ কমিশন পাওয়ার লোভে অনেক স্যালাইন ও ওষুধ লিখে দেয়ার জোড়ারো অভিযোগ ছিলো তার বিরুদ্ধে ।
গত ৫ ফেব্রুয়ারী থেকে টানা ৭২ ঘন্টা অবসরে থাকা এই বৃদ্ধ চিকিৎসক (যিনি চোখেও দেখন না ঠিক মতো) আবদুল মান্নান শুধুমাত্র কমিশন বানিজ্যের লোভে অন্যান্য চিকিৎসকদের বিপরীতে নিজেই জরুরী বিভাগে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।
দীর্ঘদিন যাবৎ এমন অনিয়মের খোজে অনুসন্ধান করলে বেড়িয়ে আসে আরেক দূর্ণীতির চিত্র । কয়েকটি ওষুধ কোম্পানীর সাথে ৩শ শয্যা হাসপাতালের অসাধু চক্রের সাথে গোপন চুক্তি মোতাবেক আবদুল মান্নানকে নিয়মিত জরুরী বিভাগে অনৈতিকভাবে কাজ করার জন্য জোড় চাপ দেয় । এই প্রভাবশালী চক্রটি হাসপাতাল চালু হওয়ার শুরু থেকেই নানাভবে ঠিকাদারীর ব্যানারে সরকারের কোটি কোটি টাকা বছরের পর বছর জুড়ে লুটপাট করে নিয়ে যাচ্ছে । এই চক্রটি এতই প্রভাবশালী তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে মামলা, হামলা করে শহর ছাড়ার হুমকি দিয়ে নিজেদের অস্তিত্ত্ব টিকিয়ে যাচ্ছে যুগ যুগ ধরে । আওয়ামীলীগ সরকারের শাসনমলে স্থানীয় এমপির পদলেহন আবার বিগত বিএনপি সরকারের শাসনামলে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের পদলেহন করে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে প্রভাবশালী চক্রটি ।
প্রভাবশালী এই চক্রটির হুমকি ধমকি ও মামলা, হয়রানীর ভয়ে অনেক সংবাদকর্মীরাও বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে ভয় পায় । কারণ বিগত সময়ে এমন চরম দূর্ণীতির সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্যদের পদলেহনকারীরা কয়েকটি সংবাদপত্রের বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা করে হয়রানী করার ঘটনা এখনো অনেকের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে ।
এমন লুটপাট ও অপরাধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কেউ কোন প্রতিবাদ না করায় অবসরে থাকা চিকিৎসক মান্নানকে দিয়ে যেমন ওষুধ বাণিজ্য করা যাচ্ছে তেমনি এই চক্রের হোতাদের মালিকানাধীন শহরের কয়েকটি ডায়াগণষ্টিক সেন্টার ও ক্লিনিকে রোগি পাঠিয়ে কমিশন বাণিজ্য চালাতে সহজ হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই ।
কারণ হিসেবে অনেকেই বলেন, একেকটি প্রেসক্রিবশনে যদি ৩/৪ টি পরীক্ষা নীরিক্ষা করানো যায় সেক্ষেত্রে রোগী প্রতি নিম্নে দেড়/ দুই হাজার টাকা আসে। আর চিকিৎসকের কমিশন আসে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ । অপরদিকে ব্যবস্থাপত্রে মেরোপিনায়ম ইনজেকশনসহ এমন তিনটি ওষুধ লিখলেই প্রতিদিন কয়েকশত রোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ টাকা। আর এই লাখ টাকার একটি অংশ কাজ শেষে অসাধু চক্রের হাতেও তুলে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে দীর্ঘদিন যাবৎ।









Discussion about this post