নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের জঙ্গি বিরোদী অভিযানের পর এবার মদনপুরে ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযান সম্পন্ন করেছে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্র্যান্স ন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। এ অভিযানে চারটি রিমোর্ট কন্ট্রোল, বোমার তৈরির সরঞ্জাম এবং বিপুল সংখ্যক জিহাদি বই উদ্ধার করেছে সিটিটিসি।
জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মদনপুরের কাজীপাড়ায় ঘিরে রাখা বাড়িতে অভিযান সমাপ্ত করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
রোববার (১১ জুলাই) দিনগত রাত ৩টা ৩০ মিনিটে অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২ টা ৫০ মিনিটে অভিযান শুরু করা হয়েছিল। অভিযানে বিপুল পরিমাণ জিহাদী বই, বোমা তৈরীর সরঞ্জাম, রিমোট কন্ট্রোল উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ভেতরে কোন বোমা ছিলনা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) সিটিটিসি ইউনিটের আসাদুজ্জামান অভিযান শেষে জানান, আমাদের একটি টিম তিনদিন পূর্বে বামসি বারেক ওরফে সাব্বির সহ তিনজন জঙ্গীকে মিরপুর থেকে গ্রেফতার করে। সেই মামলায় বারেকের তথ্য মোতাবেক আমাদের একটি টিম আজ সন্ধ্যার দিকে কেরানীগঞ্জ থেকে মেজর ওসামা ওরফে নাইমকে গ্রেফতার করে।
নাইম জিজ্ঞাসাবাদে জানায় সে নব্য জেএমবির সদস্য। সে বোমা বানায় এবং বোমা তৈরির প্রশিক্ষকও বটে। সে এখানে পার্শ্ববর্তী মসজিদে ইমামতি করত। যে বাসা থেকে বোমার তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করেছি সেই বাসায় সে সপরিবারে থাকত। কয়েকদিন পূর্বে সে তার পরিবারকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় এবং সে একা একা বোমা তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে বোমা তৈরি করছিল।
আমরা কোন কমপ্লিট বোমা পাইনি। এখানে সরঞ্জাম ও চারটি রিমোর্ট পেয়েছি আমরা। এখান থেকে আমরা শক্তিশালী আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বোমা তৈরির সামগ্রী পেয়েছি। সে বোমা তৈরিতে শুধু পারদর্শীই নয় একজন প্রশিক্ষকও বটে।
এর আগে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের নোয়াগাঁও মিয়াবাড়ি এলাকায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি থেকে ১১ জুলাই রোববার রাতে তিনটি শক্তিশালী আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) উদ্ধার করে নিস্ক্রিয় করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট।
প্রথমে ১০টা ৪৫ মিনিটে, পরে ১০টা ৫৪ মিনিটে ও শেষে ১১টা ০৮মিনিটে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। প্রতিটি শব্দই ছিল বিকট। সেখান থেকে বোমা তৈরির বেশ কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট- সিটিটিসি এর ডিআইজি আসাদুজ্জামান জানান, জঙ্গি আস্তানা থেকে উদ্ধারের পর আমরা তিনটি শক্তিশালী আইডি নিষ্ক্রিয় করেছি। অভিযান চলিয়ে আরও একজনকে গ্রেফতার কর হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তি ওই বাসাতেই থাকতেন। মামুন জঙ্গী গপের সাথে সাথে জড়িত। সে জঙ্গি গোষ্ঠীর সামরিক গ্রপের সদস্য। এদের এমন সামরিক সদস্যের সংখ্যা খুবই লিমিটেড হয়। তারা সাধারণত কোন হামলা সংগঠিত করতে তার পরকল্পনা করে থাকে।
ডিআইজি জানান, মামুন নব্য জেএমবির সদস্য। তারা বিভিন্ন ট্যাক্টিকাল পয়েন্টে হমলার জন্য বোমা তৈরি করছিল। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তাৎক্ষনিকভাবে এখানে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
বন্দর উপজেলার মদনপুরের কাজীপাড়ায় আর একটি বাসা ঘিরে রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সিটিটিসির বোমা উদ্ধার ও নিস্ক্রিয়করণ টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার এ কে এম রহমতউল্লাহ বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া আব্দুল্লাহ আল মামুন প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, তিনি নব্য জেএমবির সক্রিয় সদস্য। মামুন আড়াইহাজারের একটি বাড়িতে থাকতেন এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন, সেখানে তিনি আইএস অনুপ্রাণিত আইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) তৈরি করতেন।
গত ১৭ মে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে প্লাস্টিকের ব্যাগের ভেতর থেকে শক্তিশালী একটি বোমা উদ্ধার হয়। ওই ঘটনা তদন্তে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, ওই বোমা আড়াইহাজারে এই আস্তানায় তৈরি করা হয়। নোয়াগাঁও মিয়াবাড়ি এলাকায় একটি মাদ্রাসার পাশে ওই বাড়িতে অভিযান চলছে।
রহমতুল্লাহ চৌধুরী জানান, গ্রেপ্তার মামুন সাংগঠনিকভাবে ডেবিট কিনারা ওরফে আকিন আল বাঙালি নামে পরিচিত। তিনি ওই এলাকার একটি মসজিদে মুয়াজ্জিন হিসেবে কাজ করতেন এবং একটি এতিমখানাতেও কাজ করতেন।









Discussion about this post