নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
এবার ফতুল্লার চাঞ্চল্যকর জয়নাল আবেদীন মন্ডল হত্যা মামলার সাক্ষীদের নিধন করতে আদাজল খেয়ে মাঠে নেমেছে সামেদ আলী ও তার টেঁটাবাহিনীরা । সামেদ আলীর সন্ত্রাসী হামলায় নিহত জয়নাল হত্যা মামলার মূল প্রত্যাক্ষদর্শী আহত সাক্ষি আলমাস হত্যাকান্ডের ঘটনার বিবরণ তুলে ধরে ১৬৪ দারায় আদালতে জবানবন্দি প্রদান করায় এবার চার্জসীটভূক্ত আসামী ছামেদ আলী ও তার তিন ছেলে রাজিব, গণি ও হৃদয়সহ অন্যান্যরা মামলার সাক্ষীকে হত্যা করতে নানাভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে আদালতে আবারো অভিযোগ দাখিল করেছে ব্যবসায়ী আসলাম।
১৩ মে সোমবার এক্সিকিউটিভ ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ১৩০/১৯ নং মামলা দায়ের করলে গত এক সপ্তাহে মামলার আসামী সামেদ আলী ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মামলার বাদী ও সাক্ষিদের হেনস্তা করতে । আগামী ১৪ জুন এ মামলায় আসামীদের আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে । 
ফতুল্লার চরাঞ্চল বক্তাবলীতে ছামেদ আলী ও তার টেঁটাবাহিনীর হামলায় টেঁটাবিদ্ধ হয়ে নিহত ইটভাটার কন্ট্রাকটর জয়নাল আবেদীন মন্ডল হত্যা মামলার আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে ছামেদ আলী ও তার টেঁটাবাহিনীরা এলাকায় এসে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে বলেও বারবার পুলিশের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন নিহতের পরিবার ও সাক্ষীরা ।
সাক্ষী ও নিহতের পরিবার ছাড়াও জয়নাল হত্যা মামলায় যারা আসামীদের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলো তাদের প্রত্যেককে বিভিন্ন ছুঁতোয় ছামেদ আলীর স্বজনরা মামলা দিয়ে পুলিশে ফাঁসিয়ে দেয়ার অভিযোগ করছেন এলাকাবাসী। এমন কান্ডে মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যে।
আকবর নগর এলাকার ছামেদ আলী ও তার টেঁটাবাহিনী এলাকাবাসীকে জিম্মি করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আসছে। এলাকার বেশিরভাগ ইটভাটা থেকে টেঁটার ভয় দেখিয়ে মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করে আসছে। পুরো গ্রামকে কার্যত জিম্মি করে এসব কর্মকান্ড করে আসতো ছামেদ আলীর বিশাল টেঁটাবাহিনী। ছামেদ আলী বাহিনীর চাঁদাবাজী ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করতে গিয়েই প্রাণ হারিয়েছেন জয়নাল আবেদীন বলে জানান এলাকাবাসী।
তাদের দাবি, জয়নাল হত্যা মামলার প্রধান আসামী ছামেদ আলী ও তার টেঁটাবাহিনীর ১৪ জন আসামীর সকলেই উচ্চ আদালত থেকে ািমনে মুক্তি পেয়েই এলাকায় এসেই নানা কারণে অকারণে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে চলেছে প্রতিনিয়তঃ । তাদের ভয়ে আতংকের জনপথে পরিণত হয়েছে পুরো আকবর নগর । সামেদ আলী, তার স্ত্রী, চেলে রাজিব, গণি, হৃদয় প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে, আমরা জেল যখন খেটেছি, তখন দেখে নেবো এই এলাকার কে শান্ততে ঘুমায় । আমরা জেলে গিয়ে শিান্তিতে ঘুমাতে পারি নাই । এবার দেখবো কারা শান্তিতে থাকে।
শান্তিপ্রিয় এলাকাবাসী আরো জানান, তারা নিজেদের বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠানে নিজেরাই ক্ষতিসাধন করে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে মামলা দিয়ে এলাকার নিরীহ মানুষদের ফাঁসাচ্ছেন।
জয়নাল জয়নাল আবেদীন মন্ডল হত্যা মামলার বাদী নিহত জয়নালের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বলেন, আসামীরা জামিনে এসে আমাদের হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। আমার ছেলে আলামিনকে ছামেদ আলীর ছেলে কাইল্লা সজিব হুমকি দিয়ে বলেছে, তোর বাবার মতো তোদেরও মাইরা ফালামু। নানাভাবে ছামেদ আলীর পরিবার আমাদের হুমকি দিয়ে আসছে। আমি শুধু এটুকুই চাই যে. আমার স্বামী হত্যার সঠিক বিচার হোক, আসামীরা যাতে কোন ছাড় না পায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছামেদ আলী ও তার টেঁটাবাহিনী একাধিকবার রহিম হাজীর ইটভাটা দখল করে লুটপাট চালিয়েছিল। ওই বিরোধের জের ধরে তাদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে। গত ১২ জুলাই তাদের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের পরে ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মঞ্জুর কাদের তৎকালীন সময়ে রহিম হাজী ও ছামেদ আলীকে ডেকে থানায় নিয়ে বিরোধ মীমাংমা করতে পাওনা ২৩ লাখ টাকা রহিম হাজীকে পরিশোধ করার জন্য ছামেদ আলীকে নির্দেশ দেয় ।
কয়েক কিস্তিতে ছামেদ আলী সেই টাকা পরিশোধ করার কথা ছিল। কিন্তু পাওনা অর্থ পরিশোধ করাতো দূরের কথা গত ৯ আগস্ট রহিম হাজী ও তার লোকদের উপর হামলা চালায় ছামেদ আলী ও তার টেঁটাবাহিনী। এতে রহিম হাজীর আত্মীয় জয়নাল আবেদীনসহ ৮ জন টেঁটাবিদ্ধ হয়। পরদিন ১০ আগস্ট জয়নাল আবেদীন নিহত হয়।
এরপর নিহত জয়নালের স্ত্রী ফাতেমা বেগম বাদি হয়ে ছামেদ আলীকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ২০/২৫ জনকে আসামি করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করে। মামলার অন্য আসামিরা হলো ছামেদ আলীর ছেলে রাজিব, আরিফ, গনি, সজিব, হৃদয়, আবুল হোসেন, আলমগীর, আতিক, দিলু, আলী হোসেন, সুজন, সালাম, জুয়েল। আসামিদের বিরুদ্ধে ফতুল্লা ও সিরাজদীখান থানাতে একাধিক মামলা রয়েছে। ওই হত্যাকান্ডের সময়ে ভাঙচুর ও সংঘর্ষের অভিযোগ পৃথক দু’টি মামলাও করা হয়।
জয়নাল আবেদীন মন্ডল হত্যা মামলার চার্জসীট দাখিলের পর এবার আদালতে চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার সাক্ষিরা যাতে সাক্ষ্য দিতে না পারে সে লক্ষ্যেই হত্যাকারীরা নানা চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে । একই সাথে বিচারাধীন এমন চাঞ্চল্যকর মামলা আদালতকে প্রভাবিত করতে রাজনৈতিক দলের অনেক নেতারাই চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে ।









Discussion about this post