একবারেই চিহ্নিত চাঁদাবাজ নূরু ক্যাশিয়ারের প্রকাশ্যে চাঁদাবাজির ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে দায়িত্ব পালনকারী একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা নূরুর অপরাধের ফিরিস্তি উল্লেখ করে বলেন, “মহা ধুরন্ধর এক নূরুর কারণেই পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম স্যারের সূণাম নষ্ট হাচ্ছে । একদিকে নূরু পরিচয় দিচ্ছে তার দেশী (কালকিনি) এলাকার মানুষ হচ্ছেন এসপি জায়েদুল আলম । এই প্রচার চালিয়ে অপরাধ করেই যাচ্ছে নূরু ক্যাশিয়ার । নূরু সর্বত্র এমন পরিচয় দেয়ায় হাতেনাতে এমন চাঁদাবাজির খবর জানার পরও তার (নূরুর ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না কেউ । নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পর এসপি জায়েদুল আলম বিশাল বিশাল তদ্বিরবাজদের জোড়ালো তদ্বির থাকার পরও কোন পুলিশ সদস্যদের কাজ করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব দেখামাত্রই ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে কর্পন্য করেন নাই । জোড়ালো তদ্বিরও উপেক্ষা করে সূণাম বৃদ্ধি করে চলেছেন জায়েদুল আলম । সেই সাথে বিশাল এই চাঁদমারী বস্তির প্রকাশ্য মাদকের আস্তানা গুটিয়ে দিয়েছেন । যা গত কয়েক দশকেও কোন পুলিশ সুপার সাহস করেন নাই উচ্ছেদ করতে । সেই সাহসিক পদক্ষেপের জন্য প্রশংসিত পুলিশ সুপারের দূর্ণাম করছে এক নূরু
কথায় আছে, এক ড্রাম দুধ নষ্ট করতে এক ফোটা চনাই যথেষ্ট । নারায়ণগঞ্জ পুলিশের সুনাম নষ্টে এই এক ফোটা চনার ভূমিকা পালন করছে পুলিশের সাবেক কনস্টেবল নূরু মিয়া। সর্বমহলে তিনি ক্যাশিয়ার নূরু নামে পরিচিত। এই নূরু মিয়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই চাঁদাবাজি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র জানায়, কয়েক মাস পূর্বে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলমের নির্দেশে তাকে আটকও করা হয়েছিলো। জেলও খেটেছিলেন তিনি। বর্তমানে ওই মামলায় জামিনে বেরিয়ে এসে আবারও লিপ্ত হয়েছেন চাঁদাবাজিতে। পুরো নারায়ণগঞ্জজুড়েই চলে তার চাঁদাবাজি। যত অবৈধ ব্যবসা আছে তা থেকে তিনি ডিবি পুলিশের নামে মাসোয়ারা আদায় করে থাকেন। যার পরিমাণ মাসে ২০/২৫ (বিশ/পঁচিশ) লাখ টাকারও অধিক।
সম্প্রতি এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম জানিয়েছিলেন, নূরু মিয়ার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ছিল। এর প্রেক্ষিতে তাকে আমরা গ্রেফতারও করেছিলাম। এবারও যদি তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।
এদিকে সূত্র জানায়, কাশিপুর এলাকায় অবস্থিত একটি নাট বল্টুর কারখানা থেকে প্রতি মাসে ২৫ হাজার, একই ইউনিয়নের একটি অবৈধ তারের কারখানা থেকে প্রায় চল্লিশ হাজার টাকা, ফতুল্লার যমুনা ও মেঘনা ডিপো এলাকায় ছোট বড় ১০টি চোরাই তেলের দোকান থেকে অন্তত দেড় লক্ষাধিক টাকা ডিবি পুলিশের নামে তিনি আদায় করে থাকেন।
এছাড়া শীতলক্ষ্যা নদীর আকিজের ঘাট এলাকার চোরাই তেল কারবারি বারেক মাঝির কাছ থেকে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা, রূপগঞ্জ উপজেলার রূপসী এলাকার চোরাই তেল কারবারি (সোয়াবিন) আক্তারের কাছ থেকেও ৫০ হাজার টাকা এবং শহরের সেন ও কেরো এন্ড কোম্পানি (মদের দোকান) থেকে কমপক্ষে আড়াই লাখ টাকা আদায় করে থাকে নূরু মিয়া।
শুধু তাই নয়, সীমা ডাইংয়ের মাসুমের চোরাই তেল কারবার থেকে প্রতি মাসে ২২ হাজার টাকা, সিদ্ধিরগঞ্জের বার্মাশীল, এসও এলাকা থেকে সব থেকে বেশি অংকের মাসোয়ারা আদায় করে থাকে নূরু মিয়া। এখান থেকে কম করে হলেও চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা আদায় করা হয়। বুড়িগঙ্গা নদীর চোরাই তেল ব্যবসায়ী পাবেলের চারটি দোকান থেকে প্রতি মাসে অর্ধলক্ষ টাকারও অধিক আদায় করে থানে এই ক্যাশিয়ার নূরু। এসব টাকাই তিনি জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের নাম করে তুলে থাকেন বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এসব বিষয়ে কয়েকটি স্থানের কথপোকথনের রেকর্ডও পাওয়া গেছে। এসব রেকর্ড পর্যালোচনা করে এর সত্যতাও মিলেছে।
সূত্র আরও জানায়, নূরু মিয়ার একাধিক বাড়ির মধ্যে যমুনা ডিপো এলাকার উল্টো দিকে রুসেন হাউজিং এলাকায় রয়েছে একটি ষষ্ঠতলা বাড়ি। এই বাড়ির মূল গেটের কাছেই আছে একটি বিকাশ এজেন্টের নম্বর। মাসোহারার অনেক টাকাই এই এজেন্টের কাছে পাঠানো হয়। এই দোকানির নম্বরে ফোন করের নূরুর কথা বলার সাথে সাথেই চেনা হোক বা অচেনা, ভাতিজা সাইফুল নামক একজন বলে উঠেন, ‘এটা নুরু কাকার বিকাশ নাম্বার, এই নাম্বারে পাঠান।’
এদিকে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, গেল কয়েক মাস আগে নূরু নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সামনে দুর্ঘটনার শিকার হোন। হাসপাতালেও ভর্তি ছিলেন বেশ কিছুদিন। কিন্তু হাসপাতালের বিছানায় থাকলেও চাঁদাবাজি থেমে ছিল না। স্বপন নামক এক যুবকের মাধ্যমে মাসোয়ারা তিনি আদায় করেছেন। স্বপনকে তিনি এবং স্বপন নিজেও নূরু মিয়ার নাতি হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। দুর্ঘটনার পর থেকে নূরু মিয়া স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতে না পারলেও চাঁদাবাজি তার বন্ধ হয়নি। বিকাশ ও স্বপনসহ নিজেও প্রতি মাসে নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে টাকা উঠিয়ে আসেন।
সীমা ডাইংয়ের মাসুমের সাথে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘আমরা নিয়মিতই টাকা দিচ্ছি। প্রতি মাসে ২২ হাজার টাকা করে দিই। নূরু কাকা ফোন করে একজনকে পাঠায় তার কাছে দিয়ে দিই।’ ফতুল্লার যমুনা গেটের তেল চোরাকারবারি কালাম জানিয়েছেন, প্রতি মাসেই তিনি পাঁচ হাজার টাকা করে নূরু মিয়াকে দেন। সর্বশেষ তিনি জুলাই মাস পর্যন্ত টাকা (আগস্টে জানতে চাইলে) দিয়েছি। সিদ্ধিরগঞ্জের একটি ছোট্ট চোরাই তেল দোকানি আশিক। তিনি জানান, গেল সপ্তাহেই নুরু কাকা স্বপন নামে একজন লোক পাঠিয়েছিল। খাতা স্বাক্ষর করে টাকা নিয়ে গেছে। তিনি প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা করে দেন বলে জানান।
একটি রেকর্ডে ক্যাশিয়ার নূরু মিয়া ও অপর একজনের কথপোকথন থেকে জানা গেছে, এসব কাজের নেপথ্যে ইমরান, বাবু নামে আরও দুজনের সম্পৃক্ততা রয়েছে। সূত্র জানায়, এই দুজন প্রতি মাসেই নুরুর কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকার মত পেয়ে থাকেন। তারা নিজেদেরকে সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। তবে, এই ইমরান ও বাবু ঠিক কোন এলাকার এবং কোন পত্রিকায় কাজ করেন তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে মোহাম্মদ জায়েদুল আলম যোগদানের পর পুলিশের সুনাম রক্ষার্থে কঠোর পরিশ্রম করে আসছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যদেরকেও ছাড় দেননি। পুলিশের সুনাম অক্ষুন্ন রাখার জন্য তিনি বেশ কজন পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিলেন। অর্থাৎ কোনো প্রকার বিতর্কিত ব্যক্তিকে তিনি আশ্রয় ও প্রশ্রয় দেন না। কিন্তু তার এত কড়াকড়ির মধ্যেও নুরু মিয়া কীভাবে ডিবি পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতি মাসেই মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি করছে সে নিয়ে বিস্মিয় প্রকাশ করেছেন অনেকেই। তারা বলছেন, পুলিশের কোনো অসাধু কর্মকর্তা নুরুর সাথে সম্পৃক্ত কিনা, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার। কেননা, ডিবি পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে এভাবে চাঁদাবাজি করা কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। কেউ না কেউ তার সাথে অবশ্যই সম্পৃক্ত রয়েছে। ফলে, পুলিশ সুপারকে সতর্কভাবে সেই কেউ বা কারা নুরুকে উৎসাহিত করেন, তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তারা। অন্যথায় একদিকে যেমন অবৈধ কারবারির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে অন্যদিকে পুলিশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
এমন চাঁদাবাজির ঘটনায় নারায়ণগঞ্জে দায়িত্ব পালনকারী একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা নূরুর অপরাধের ফিরিস্তি উল্লেখ করে বলেন, “এক নূরুর কারণেই পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম স্যারের সূণাম নষ্ট হাচ্ছে । একদিকে নূরু পরিচয় দিচ্ছে তার দেশী (কালকিনি) এলাকার মানুষ হচ্ছেন এসপি জায়েদুল আলম । এই প্রচার চালিয়ে অপরাধ করেই যাচ্ছে নূরু ক্যাশিয়ার । নূরু সর্বত্র এমন পরিচয় দেয়ায় হাতেনাতে এমন চাঁদাবাজির খবর জানার পরও তার (নূরুর ) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারছে না কেউ । নারায়ণগঞ্জে যোগদানের পর এসপি জায়েদুল আলম বিশাল বিশাল তদ্বিরবাজদের জোড়ালো তদ্বির থাকার পরও কোন পুলিশ সদস্যদের কাজ করার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার অভাব দেখামাত্রই ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে কর্পন্য করেন নাই । জোড়ালো তদ্বিরও উপেক্ষা করে সূণাম বৃদ্ধি করেছেন । সেই সাথে বিশাল এই চাঁদমারী বস্তির প্রকাশ্য মাদকের আস্তানা গুটিয়ে দিয়েছেন । যা গত কয়েক দশকেও কোন পুলিশ সুপার সাহস করেন নাই উচ্ছেদ করতে । সেই সাহসিক পদক্ষেপের জন্য প্রশংসিত পুলিশ সুপারের দূর্ণাম করছে এক নূরু ।
প্রসঙ্গত, নূরু মিয়া পুলিশের কনস্টেবল পদে চাকরি করলেও বর্তমানে তিনি অবসরে আছেন। কনস্টেবল থাকা অবস্থায়ই তিনি থানা ও ডিবি পুলিশের নামে মাসোয়ারা উঠাতেন তিনি। সেই ধারা এখনও অব্যাহত রেখেছেন। আর এসব কর্ম করে বর্তমানে তিনি অঢেল ধন সম্পদের মালিকও বনেছেন এই নুরু মিয়া।









Discussion about this post