সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসনামলের নির্বাচনে সারাহ বেগম কররী ছিলেন নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রাণের স্পন্দন ।
তৎকালীন সময়ে নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা যার বক্তব্য মোবাইল ফোনের সাহায্যে মাইকের মাধ্যমে শুনার জন্য অসংখ্য জনতার ভীড় হতো সেই শামীম ওসমানের অনুপুস্থিতিতে সারা বেগম কররী ধরলেন নারায়ণগঞ্জের হাল। সেই সময় এক হাতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পত্র আরেক হাতে তালাকনামা নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেন কবরী । এরপর অনেক ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জ রাজনীতিতে । সারাহ বেগম কবরীর পরলোকে গমন করলেও নারায়ণগঞ্জের সর্বত্র সেই স্মৃতি জনমানুষের মুখে উচ্চারিত হচ্ছে
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে এমপি ছিলেন সারাহ বেগম কবরী। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে তিনি এমপি হন আওয়ামী লীগের টিকেটে। তখন শামীম ওসমান ছিলেন দেশের বাইরে। তবে পরের ৫ বছরে শামীম ওসমানের সঙ্গে কবরীর নানা বিষয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়।
ফতুল্লায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে তাদের দুই গ্রুপের অনুগামীদের মধ্যে প্রায়শয়ই মারামারির ঘটনা ঘটে। যদি সম্পর্কে কবরী হলেন শামীম ওসমানের চাচী। ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারী শওকত আলীকে কারাগারে পাঠিয়ে তখন ব্যাপক সমালোচিত হন কবরী। শুরুতে মাসলম্যান হিসেবে থাকা শ্রমিক লীগ নেতা কাউসার আহমেদ পলাশেরও সঙ্গে কবরীর পরে বিরোধ দেখা দেয়। বিরোধ ছিল সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান ফাতেমা মনিরের সঙ্গে। মৃত্যুর আগে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি নিয়ে গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে এনেছিলেন অনেক ঘটনা।
সেই কবরী মারা গেছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ এপ্রিল দিনগত রাত সাড়ে ১২টায় মারা যান কবরী।
এদিকে ফুলেল শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাজধানীর বনানী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন কিংবদন্তী অভিনেত্রী, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাবেক সাংসদ সারাহ বেগম কবরী। শনিবার দুপুর একটায় বনানী কবরস্থান প্রাঙ্গণে তাকে ‘গার্ড অব অনার’ দেওয়া হয়। পরে জোহরের পর জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হয় তাকে।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর সংসদ নির্বাচনে চিত্রনায়িকা সারাহ বেগম কবরী নির্বাচিত হন। নারায়ণগঞ্জে শুধু নয়, সারা বাংলাদেশে শামীম ওসমান একটি আলোচিত সমালোচিত নাম। নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব রয়েছে তার এবং তার পরিবারের। তিনি কখনো তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ছাড় দেন না। কিন্তু তার পরও নগরের রাজনীতিতে তার প্রতিপক্ষ হিসেবে দুইজন নারী বেশ আলোচিত হয়েছেন।
দীর্ঘদিন পর সেই ঘটনা নিয়ে “সেন্স অফ হিউমার” নামের একটি টিভি অনুষ্ঠানে কথা বলেন কবরী সারোয়ার।
উপস্থাপক শাহরিয়ার জয়ের প্রশ্নের জবাবে কবরী বলেন, ‘শামীম ওসমানের কাছে হেরি গেছি, নাতো। আমি তো জিতে এসেছি। আমি হারি নাই। ওর কাছে কী হারবো। চুটকি বাজিয়ে কাজ করেছি ৫ বছর। আমাকে প্রধানমন্ত্রী নোমিনেট করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন নারায়ণগঞ্জবাসীর কাছে কবরীকে তুলে দিলাম। আপনারা ভোট দিয়ে তাকে জিতাবেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিবেন। এটা ছিল আওয়ামীলীগের স্লোগান। আওয়ামীলীগ আমার দল। আমি গর্ব করি। আমি যখন কাজ করতে গেলাম। হু দ্যা হেল হিজ। ও কথা বলবে কেন। আমাকে প্রধানমন্ত্রী নোমিনেট করেছে। আমি মুক্তিযোদ্ধা। আমি সিলেকশনে আসি নাই। আমি কিন্তু ইলেকশান করে এসেছি। আমি নারায়ণগঞ্জ-৪ এ ইলেকশন করেছি। ডোর টু ডোর ভোট চেয়েছি। ভোটে চেয়ে পাশ করে এসেছি। রাজনীতি হচ্ছে একটি কৌশলের খেলা। শামীম ওসমান কৌশল করতে গেছিল। আমি জানি না। উনি কৌশলে ফেল করেছে।
শামীম ওসমানকে ইঙ্গিত করে কবরী বলেন, আমার চেয়ে কী ভাল অবস্থানে আছে? টাকা পয়সা দিয়ে ভাল অবস্থানে। আমি নিষ্ক্রিয়? আমি তো ওর চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয়। আমি এমপি না, তারপরও আমি ওর চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। আমি অনেক সম্মান নিয়ে বেড়াচ্ছি।
সাবেক এই সংসদ সদস্য বলেন, সামনে কোন নির্বাচন করবো কি না, তা মাননীয় প্রধানমন্ত্রি জানেন। ওনার রাজনীতি কিভাবে সাজাবেন। রাজনীতি একটি সংসার। আমাদের প্রধানমন্ত্রী অনেক শক্তিশালী। বিশ্বের ১৭ কোটি বাঙালী মানুষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার অনেক মেধা। তিনি আগেই অনেক কিছু বুঝতে পারেন। সুতরাং ওনি যদি মনে করেন তাহলে নোমিনেশন দিবেন। নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার আগে আমি একবারও ভাবি নাই। আমি জানি সিলেকশনে আসবো। ইলেকশান করতে চাইনি। ইলেশনকে ভয় পাইছি। সে সময় শামীম ওসমান সাহায্য তো দূরের কথা সে আমার ভোট কেড়ে নিয়েছে। আমার কর্মী কেড়ে নিয়েছে। আমি ছোট ছোট টোকাইদের নিয়ে কাজ করেছি। ওয়ার্ডের ছেলেদের নিয়ে কাজ করেছি। থানা কমিটির নেতারাও আমার সাথে বিট্রে করেছে। আমিতো এতদিন বলেনি। প্রধানমন্ত্রী সাপোর্টে ছিলেন, নেতারা ছিলেন বলে আমি শক্তহাতে দমন করেছি। আমি আমজনতার সঙ্গে মিশে গেছি।
কবরী বলেন, শামীম-আইভীর যে দ্বন্দ্ব আমি এতে কাউকে সমর্থন দিতে চাই না, বিরুদ্ধে বলতেও চাই না। আমিতো ফেইস করেছি। যার যার তাকেই ফেইস করতে হবে। কারণ আপনাকে যখন একটি জায়গায় নামিয়ে দেয়া হবে তখন তো আপনি বুঝবেন কী ভাবে ঠেলা সামলাতে হবে। আমি তো বুঝেছি।
শামীম ওসমানকে দায়ী করে কবরী বলেন, জানি ও আমাকে বিরক্ত করবে। ও আমাকে শুরু থেকে বলতেছে আপনি টিকবেন না। আমি যদি অ্যাকটিং করতে চাই তা হলে হিরো হতে পারবো। আমি বলেছি তুমি কখন হিরো হতে পারবা না। তোর মেধা আছে? আমি জানি কী করে রাজনীতি করতে হয়। আমি তোমার রাজনীতি করবো না। আমি ঠিক পলিটিক্স করে বেরিয়ে আসতে পারবো ইনশাল্লাহ। আল্লাহর রহমতে আমি ঠিক ইলেকশন করে পাশ করে বেরিয়ে আসতে পেরেছি। সে বলে আমাকে ৬০ পার্সেন্ট লোক পছন্দ করে না। আমি বলেছি জরিপ করেছ? সে ইন্ডিয়া বসে আমাকে মোবাইলে থ্রেট করছে। আপনি পারবেন না, পারবেন না।
তিনি আরো বলেন, আমি একটি পেশাদার জায়গা থেকে রাজনীতি করবো। আমি একটি সিস্টেমে মধ্যে বড় হয়েছি। ১৩ বছর বয়সে বাড়ী-ঘর ছেড়ে কাজে বেরিয়েছে। আমি সাধারন মানুষের কাতারের মানুষ। খোদাতা’লার অশেষ রহম। মানির মান রাখছে। আমি যদি হারতাম কষ্ট লাগতো। কারন মানুষ যে ভালবাসে। শামীম ওসমান সাকসেস ফুল কী ভাবে, আমিতো এমপি না তারপরও মানুষ আমাকে ভালবাসে। ওনার কথা কয়জনে শুনে জানি না, কিন্ত আমার কথা অনেকে শুনে।
এমন অসংখ্য স্মৃতি ছাড়াও নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বিষয়েও অনেকেই করেছেন নানা নেতিবাচক মন্তব্য ।









Discussion about this post