নারায়ণগঞ্জে প্রতিদিনই বাড়ছে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সংখ্যা। ইতিমধ্যেই নারায়ণগঞ্জে করোনায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৪১১ জন। মৃত্যু হয়েছে মোট ৩০ জনের। সুস্থ্য হয়েছেন ১৬ জন।
সোমবার ২০ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত জেলায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ তথ্য জানান সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির প্রতিনিধি ডা. জাহিদুল ইসলাম।
জাহিদুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘন্টায় জেলায় ১১৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে যার মধ্যে প্রাপ্ত ফলাফলে ৮১ জনের করোনা পজিটিভ শনাক্ত করা হয়েছে। আর এখন পর্যন্ত জেলায় মোট ৯৫৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।
আর এই ভাইরাসের ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি জেলার সিভিল সার্জন, হাসপাতাল তত্বাবদায়ক, চিকিৎসক,নার্স,ম্যাজিস্ট্র্যাটরাও।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ ১৬ চিকিৎসক ও ৩ ম্যাজিস্ট্রেট। মারা গেছেন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখার এক কর্মকর্তা মনজুর হোসেন (৫৭)।
তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করে নিজ দায়িত্ব পালনে অনড় নারায়ণগঞ্জের এ সরকারী কর্মকর্তারা। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ ও মোকবেলায় অসুস্থ অবস্থায় ঘরে বসেই দায়িত্ব পালন করে চলেছে সিভিল সার্জন, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও সরকারী অন্যান্য কর্মকর্তারা।
তাদেরই একজন নারায়ণগঞ্জের ই-সেবা কেন্দ্রের সহকারী কমিশনার তানিয়া তাবাসসুম। বর্তমানে তিনি ও তার স্বামী, মা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত। তিনি ছাড়াও আক্রান্ত হয়েছেন আরো দুইজন সহকারী কমিশনার। সেই সকল নানা অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন তার ফেসবুক টাইমলাইনে।
ফেসবুক টাইমলাইনে তিনি সকলকে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নিজেদের কাজ থেকে পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই করোনার ভয়াল থাবা এসে পরবে, সবাই প্রস্তুত হন সরকারি নির্দেশ।
এমনি বর্ননা করেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ।
সরকারের কর্মচারী তাই পিছপা হবার সুযোগ নেই। দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধই প্রশাসশনে চাকরির ধর্ম। অগত্যা ১ বছরের তাইফ আর ৩ বছরের নামিরাকে মায়ের কাছে ঢাকায় রেখে নারায়ণগঞ্জে থাকতে শুরু করলাম। নিয়মিত অফিস, মোবাইল কোর্ট, গনসচেতনতা কার্যক্রম, জরুরী ত্রান কাজ, কন্ট্রোল রুম ডিউটি, প্রতিদিনের রিপোর্টসহ প্রেস ব্রিফিং তেরী, বেসরকারী ত্রান সংগ্রহ কার্যক্রম যখন যেটা সামনে পড়েছে করেছি।
ভাবছেন এতো বলছি কেন, এসব তো প্রশাসনের কাজই। হ্যাঁ, সেজন্যই ফটোসেশন, ফেসবুক পোস্ট বাহুল্য এড়িয়ে চলেছি । আমি খুব নিভৃতচারী তাই কাজকে প্রাধান্য দিয়েছি আগে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ছাত্রী ছিলাম বলে জীবানু নিয়ে কিছুটা অভিজ্ঞতা রাখি বলে দাবী করি। জীবাণু ভীতিটাও তাই সরিয়ে রেখে কাজ করতে পেরেছি বোধ হয়। সারাদিনের চেষ্টা ক্লান্তি শেষে যখন দেখতাম লোকজন কথা শুনছে না, একই ব্যক্তি নানা অজুহাতে ঘরের বাইরে আসছে, ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়ে ত্রাণ চাইছে আর প্রশাসনের সকল কাজ নিয়েই, যত দোষ নন্দঘোষ অপপ্রচার তখন শুধু নতুন উদ্যম হাতরে খুঁজে বেড়াতাম।
কিন্তু খারাপ লাগা ঘিরে ধরত যখন ভিডিও কলে সন্তানের মুখ আর প্রিয় স্বরগুলো শুনতে পেতাম। নিজের চেয়ে বেশি ভাবতাম পরিবারকে নিয়ে। জানেন কতো রাতে ঘুমাতে পারিনি। শারীরিক মানসিকভাবে কিছুটা দুর্বলও হয়ে পড়েছিলাম।
তার মধ্যে সারা দেশে রি রি করে উঠলো প্রশাসন বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন নাকি পিপিই চোর। অথচ ডিসি স্যার নিজ উদ্যোগে আমাদের সেটা যোগাড় করে দিয়েছিলেন। পরে যতো বেসরকারি পিপিই পাওয়া গিয়েছিলো চিকিৎসকসহ অন্য সবাইককে দেওয়া হয়েছিলো জনস্বার্থে।
যাই হোক নূন্যতম নিরাপত্তাটুকু নিয়েই কাজ চালিয়ে গিয়েছি, সকল প্রশাসন যোদ্ধারাও সারাদেশে তাই করছে।মুসলমান হিসেবে মৃত্যু ভয় মনে রাখিনি, প্রিয় নারায়নগঞ্জবাসীর প্রান বাঁচাতেই দৌড়ে বেড়িয়েছি।
নিজ জেলা চাঁদপুর, কিন্তু কর্মস্থল দেশের সমৃদ্ধ একটি জেলা নারায়নগঞ্জকে আজকে যখন লোকে বাংলাদেশের উহান বলছে তখন বুকটা মুচড়ে উঠে। আপনাদের সেবা করতে গিয়ে আজ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা আক্রান্ত, ত্রান কাজের একজন পরিশ্রমি কর্মচারী মৃত্যুবরন করেছেন ।
এখনও মনে পড়ছে শেষ যেদিন সন্ধ্যায় কাশিপুর, গোগনগর এলাকায় মোবাইল কোর্ট করছিলাম মাইকে চিৎকার করে বলছিলাম ” প্রিয় নারায়নগঞ্জবাসী, এ জেলার অবস্থা আর কতো খারাপ হলে আপনারা সচেতন হবেন!”
আজ আমি, আমার পরিবার (স্বামী, মা) , প্রশাসন পরিবার কোভিড ১৯ আক্রান্ত। আমাদের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়ার পর আত্মীয়, বন্ধু বিশেষ করে বাংলাদেশ এডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন আমাকে যেভাবে সাহস যুগিয়ে যাচ্ছেন মনে হচ্ছে এ যাত্রায় বেঁচে গেলে আল্লাহ যেন দ্রুত আবার সুস্থ করে দেন, দেশের সেবা করার তৌফিক দেন। তাদের সকলের নাম বলতে গেলে তালিকাটি দীর্ঘ হয়ে পোস্টটি আরো বড় হয়ে যাবে। অসংখ্য ধন্যবাদ সকলকে।এমনি আবেগময় স্টাটাসটি তুলে ধরেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।









Discussion about this post