নানা কেলেংকারীর পর র্যাবের হাতে ধরা খাওয়া আন্ডার ওয়ার্ল্ডের ‘ডন’ জিকে শামীমকে চিনেন না জানেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই। শুক্রবার দুপুরে জিকে শামীম ঢাকার নিকেতন থেকে আটকের পর গণমাধ্যমকে এমনই বলেছিলেন আব্দুল হাই।
অন্যদিকে এই জিকে শামীমকে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি হিসেবে প্রস্তাব করেছিলেন দলটির সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল। তবে, এ বিষয়টিও অস্বীকার করেছেন আব্দুল হাই ।
গত বছর অসুস্থ ছিলেন বাদল। ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে। তখন হাই ও জিকে শামীম মিলে দেখতে যান বাদলকে। ওই ছবিতেই দেখা গেছে সে চিত্র।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সন্মানদী ইউনিয়নের দক্ষিণপাড়া গ্রামের মৃত মো. আফসার উদ্দিন মাস্টারের ছেলে শামীম। আফসার উদ্দিন মাস্টার ছিলেন হরিহরদি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তিন ছেলের মধ্যে জি কে শামীম মেজো। বড় ছেলে গোলাম হাবিব নাসিম ঢাকায় জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেন। সন্মানদী ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, প্রাইমারি স্কুল ও হাই স্কুল পাস করার পর তাঁদের গ্রামে দেখা যায়নি। ঢাকার বাসাবো আর সবুজবাগ এলাকায় বড় হয়েছেন। গত জাতীয় নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচনের জন্য প্রচারণাও চালিয়েছিলেন শামীম।
শামীমের ব্যবসায়িক কার্যালয় জি কে বিল্ডার্সে অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা, ১৬৫ কোটি ৮০ লাখ টাকার এফডিআর, সর্টগান, মাদক, বিদেশি অর্থ জব্ধ করা হয়। জি কে শামীমের অস্ত্রের লাইসেন্স থাকলেও অবৈধ ব্যবহারের অভিযোগ ছিল বলে জানিয়েছেন র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর আবদুল হাইকে সভাপতি, সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীকে সহ সভাপতি এবং আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহীদ বাদলকে সাধারণ সম্পাদক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট জেলা আওয়ামীলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। ওই কমিটি গঠনের পর ১৩ মাস পর নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ৭৪ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি অনুমোদন দেয় কেন্দ্র। তবে এই পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সব মিলিয়ে ৮টি পদ খালি ছিল।
২০১৮ সালের ২৯ জুলাই জেলা আওয়ামীলীগের ৮টি পদ পূরণের লক্ষ্যে সভায় সদস্য হিসেবে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান দিপুর নাম সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত হয়। সেই সভার প্রকাশিত সংবাদে দেখা গেছে, ‘সে সময় নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের পক্ষে কাদির এবং জিকে শামীম ও শরফুদ্দিন সহ আরও দুই জনের নাম প্রস্তাব করা হয়। সিনিয়র সহ সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষ থেকে সহ সভাপতি হিসেবে জসিমউদ্দিন এবং জিয়াউল হক কাজলের নাম প্রস্তাব করা হয়।’
ওই খবরের সংবাদ মতে, এদের জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ দুইজন নেতার পক্ষে প্রস্তাবিত জিকে শামীমের ব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম ভূইয়াসহ অনেকেই চরম আপত্তি জানিয়েছিলেন। শামসুল ইসলাম ভূইয়া দাবী করেছিলেন জিকে শামীম বিএনপির রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তার কাছে প্রমাণ রয়েছে সে বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাসের পিএস ছিল। এ নিয়ে সভাপতির সাথে শামসুল ইসলাম ভূইয়া সহ জেলা আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতাদের সাথে চরম বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটেছিল। ফলে কোনো ফলপ্রসূ আলোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্তবিহীন মিটিংয়ের সমাপ্তি করা হয়েছিল।









Discussion about this post