একদিকে তৈমুল আলম খন্দকার বলেছেন দলের শীর্ষ নেতার গ্রিনন সিগনাল পেয়ে নির্বাচনের মাঠে নেমেছেন, আবার বলেছেন নির্বাচনী কৌশল হিসেবে তাকে দল থেকে আপাততঃ সরানো হয়েছে, একই সাথে বলছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফকরুল ইসলাম আলমগীর নির্বাচনে আসবেন নারায়ণগঞ্জে । পরবর্তীতে তাকে ফোন করে খোজ খবর নিচ্ছেন ভোটের মাঠের । এমন হাজারো বক্তব্যের পরও দ্বিধাদ্বন্দ্বে পরেছেন নারায়ণগঞ্জ বিএনপির বিশাল সমর্থক ও ভোটারগণ । সব শেষ বৃহস্পতিবার রাতে দৈনিক আমাদের সময় প্রিন্ট ও অনলাইন ভার্সনে প্রকাশ পেয়েছে (নাসিক) নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের প্রচার-প্রচারণায় বিএনপি নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এ নিষেধাজ্ঞা ভাঙলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের এরই মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ।
এমন কঠোর মন্তব্য দিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ।
জাতীয়তা বাদী দল বিএনপির এমন পরিস্কার মন্তব্যের পর শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) সকালে বিএনপির জেলা পর্যায়ের একজন শীর্ষ নেতা প্রাতঃভ্রমণের সময় নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর মাথে আলোচনার এক পর্যায়ে বলেন, এই নির্বাচনে খোদ তৈমূর ভাইয়ের পরিবারে মতবিরোধ রয়েছে । বয়স হয়েছে নির্বাচন না করার অনুরোধ করাও হয়েছিলো । কিন্তু তিনি শুনেন নাই । আর বিএনপির কেন্দ্র থেকে নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত তো আগে জানানোর কারণেই তাকে পদবী থেকে সরানো হলো । তৈমূর ভাইকে নিয়ে মোশারফ করিমের টিভি নাটকের মতো “চলিতেছে সার্কাস”। সহজ সরল এই মানুষটিকে নিয়ে কারা এই সার্কাস করতেছে তা নারায়ণগঞ্জবাসীসহ সকলেই জানেন ।
এমন ক্ষোভ প্রকাশের সময় বিএনপির এই নেতার বক্তব্য বেকর্ড করায় তিনি প্রতিবেদক কে বিশেষভাবে অনুরোধ করে বলেন, “ভাই, আমার কথা প্রকাশ পেলে আমার কি ক্ষতি হবে তা আপনি বুঝেন । প্লিজ আমার নামটিও প্রকাশ কইরেন না ।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকারের প্রচার-প্রচারণায় বিএনপি নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। এ নিষেধাজ্ঞা ভাঙলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতাদের এরই মধ্যে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আমাদের সময়কে বলেন, ‘এটা দলের সিদ্ধান্ত। যারা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তৈমূর আলম খন্দকারের পক্ষে অংশ নেবেন, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দলের শীর্ষ পর্যায়ের আরেক নেতা আমাদের সময়কে জানান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতাদের তৈমূরের নির্বাচনী প্রচারে যাওয়া নিয়ে আলোচনা চলছিল। দলের এ সিদ্ধান্তের পর তাদের নিষেধ করে দেওয়া হয়েছে। যাদের নিষেধ করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দলের একজন ভাইস চেয়ারম্যানও আছেন। ওই নেতা আরও জানান, নারী ও শিশু অধিকার ফোরামের কমিটি গঠনসংক্রান্ত কাজে দলের নেতাদের সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। তাও বাতিল করা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তৈমূর আলম খন্দকার আমাদের সময়ে বলেন, ‘এই আজগুবি খবর আপনাকে কে দিল ? দলের মহাসচিব খোঁজখবর নিচ্ছেন। আমার সঙ্গে জেলার স্থানীয় নেতাকর্মীরা পুরোপুরি ঐক্যবদ্ধ। আমি প্রয়োজন মনে করলে সেন্ট্রাল নেতারাও আসবেন। সবাই চাচ্ছে নারায়ণগঞ্জের গণজোয়ারকে কাজে লাগাতে।’
প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, এটা আপনাকে বুঝতে হবে।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে না। যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সিদ্ধান্ত না মেনে সিলেট-৩ উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়ায় সফি আহমেদ চৌধুরীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় সরকার বিশেষ করে পৌর মেয়র, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলে তাদের কোনো বাধা দেওয়া হবে না।
দলের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দায়িত্বশীল কয়েক নেতার সঙ্গে আলোচনা করে শীর্ষ নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এ সরকারের অধীনে সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও অংশ নেবে না বিএনপি। সে ক্ষেত্রে দলের নেতৃত্বস্থানীয় কোনো নেতা মেয়র পদে নির্বাচন করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যারা ওই প্রার্থীর পক্ষে প্রচারে অংশ নেবেন, তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপি এবারের নির্বাচনে অংশ না নিলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আরও ৪ নেতা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। তারা হলেন- নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন, মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এটিএম কামাল ও মহানগর বিএনপির কার্যকরী সদস্য অ্যাডভোকেট সুলতান মাহমুদ। জানা গেছে দলের সিদ্ধান্ত মেনে তৈমূর ছাড়া বাকিরা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।
এদিক জেলা কমিটির বর্তমান আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় তার স্থলে নতুন ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নিয়োগ দিয়েছে বিএনপি। নির্বাচনকালীন সুনির্দিষ্ট সময়ের জন্য মনিরুল ইসলাম রবিকে এ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেছেন তৈমূর আলম খন্দকার ও তার সহযোগি অনেকেই।
দলের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির কয়েক জ্যেষ্ঠ নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে তৈমূরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন। তৈমূর আলম বহিষ্কারের মুখোমুখি হচ্ছেন- এমন গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে। আবার দলের একাধিক নেতা মনে করেন, বহিষ্কার না হলেও সব পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে ।









Discussion about this post