নরায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
না এটা কোন মেলার দৃশ্য নয় । এটি বাণিজ্যিক নগরী নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কসহ শহরের মাত্র কয়েক কিলোমিটার সড়ক ও ফুটপাতের চিত্র এটি । এমন চিত্র ছাড়াও আরো গিঞ্জি পরিবেশে গাদাগাদি করে পুরো শহরবাসীকে জিম্মি করে চাঁদাবাজচক্র নারায়ণগঞ্জ শহরকে ফটপাত দখলের নগরীতে পরিণত করেছে ।
সবশেষ সদ্য বিদায়ী নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়ে পুরো শহরের ফুটপাত দখল করে কয়েকজন লাইনম্যান খ্যাত চাঁদাবাজরা নগরবাসীকে জিম্মি করে তাদের অপকর্ম ঠিকই চালিযে যাচ্ছে । একদিকে পুলিশের নিরব চাঁদাবাজি অপরদিকে শাসক দলের কয়েকজন পাতি নেতাদের নিয়েমিত মাসোয়ারা দিয়েই শহরের কয়েকজন লাইনম্যান প্রকাশ্যেই চালিযে যাচ্ছে অপকর্ম ।
প্রতিদিনের ন্যায় শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) ছুটির দিনে বিকেল তিনটায় যখন নারায়ণগঞ্জ সদর থানার নতুন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে শাহ জামান নিজ কক্ষ্যে সদ্য বিদায়ী ওসি আসাদুজ্জামেনর সাথে খোশগল্প করছিলেন ঠিক তখনী থানার মাত্র কয়েক গজের মধ্যেই পসরা সাজিয়ে শত শত হকারের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে কুখ্যাত চাাঁদাবাজ পলাশ ও তার নিয়োজিত কয়েকজন চাঁদা আদায়কারী । এমন চিত্র দেখা যায় শহরের প্রতিটি স্থানে ।
নিত্য দিনের এমন চিত্র ছাড়াও শীতকে সমানে রেখে প্রায় কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা ।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে কয়েকজন হকার পৃথকভাবে বলেন, শীতের এই কয়েক মাসে কিছু আয় করতে ধারদেনা করে শীতের কিছু পন্য কিনে ফুটপাতে বসতে হয়েছে । যা কিছু আয় হবে তা দিয়ে আমাদের পরিবারের সংসার খরচাটা চলে সুন্দরভাবে । এই আশায় ফুটপাতে দোকান নিয়ে বসতে এসে বিশাল ধান্ধাবাজদের কবলে পরতে হলো । কোন চাঁদাবাজি হরে না ফুটপাতে এমন কথা মেয়র, এমপি, এসপি জোড়ালোভাবে বললেও চাঁদাবাজরা শুনে না কারো কথা ।
নারায়ণগঞ্জ শহরের হকার ও ফুটপাত নিয়ে এতো গত সমালোচনার পরও বুধবার (২৫ নভেম্বর ) ও বৃহস্পতিবার (২৬ নভেম্বর) রাতেই থানার ভিতরে ওসির কক্ষে কি করেছিলো চিহ্নিত চাঁদাবাজরা ? প্রতি মাসের ১ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ শহরের চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের মূল হোতা রহিম মুন্সি, আসাদুজ্জামান আসাদ, আলমগীর হোসেন পলাশ, আরিফ ও সোহেলসহ আরো কয়েকজন কি করছিলো ওসির সাথে ? অনেকেই মাস শেষ হওয়ার আগেই চাঁদা দিয়ে দিলেও চাঁদাবাজ আসাদ, রহিম মুন্সী, পলাশ ফুটপাতের নিয়মিত চাঁদা ওসি আসাদুজ্জামানের কাাছে হস্তান্তর করে নাই । ‘তারা কইছে, নতুন ওসিরে তইলে কি কমু !’ ফুটপাতের বিশাল আদায়কৃত চাঁদার একটি বৃহৎ অংশ লাইনম্যানখ্যাত চাঁদাবাজরা ওসির কাছে সরাসরি হস্তান্তর করলেও এবার মাস শেষ হবার আগেই সকল চাঁদাবাজদের ডেকে নিয়ে মাসোয়ারা আদায় করেছে বলে মন্তব্য করেছে চাঁদাবাজদের কয়েকজন।
ওসি ঠিক থাকলে আর যে কেউ যা কিছুই করুক তাতে আর কিছু হয় না বলেও মন্তব্য করেছেন হকারদের কয়েকজন নেতা । হকার নেতারা আরো বলেন, এই যে প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি হয় তা কি কেউ দেখে না ? দেখলে কোন সাংবাদিকরা লেখে না কে ? ওসির হাতে আইন আছে ডিজিটাল আইন ! এই আইনের করাণে সংবাদিকরাও ওসিকে ভয় পায় বলেই লিখে না !
নিত্যদিনের দফায় দফায় চাঁদাবাজির শিকার হকারদের অনেকেই আরো জানান, আমরা ফুটপাতে বসে দোকানদারী করি পেটের দ্বয়ে । কিন্তু আমাদের প্রতিদিন একেকটি দোকানের খরচা হয় ১২০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। আবার কোন কোন ফুটপাতের দোকানের খরচা হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত । শহরের মূল পয়েন্টের ফুটপাতের চাঁদা দিতে হয় ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত । তাদের পুজিঁ বেশী আবার রোজিও বেশী বিবেচনা করেই চাঁদা নেয় চাঁদাবাজরা ।
খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, ক্ষমতাশীন দলের গুটিকয়েক নেতার সমণ্বয়ে নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের হকারদের কর্মকান্ড । বর্তমানে যে সকল সেক্টরগুলোতে ব্যাপক চাঁদা বাণিজ্য হচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে হকারদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়। শহরের মাত্র দুই কিলোমিটারে ফুটপাত থেকে দৈনিক লক্ষাধিক টাকার বেশী চাঁদা আদায় করছে চাঁদাবাজরা।
শহরের চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের মূল হোতা রহিম মুন্সি, আসাদুজ্জামান আসাদ, আলমগীর হোসেন পলাশ, আরিফ ও সোহেল। এসব চাঁদাবাজরা প্রতি বছরে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে নেতা, পুলিশসহ অনেক সেক্টরে বিতরণ করে যাচ্ছে । প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের পর রহিম মুন্সি, আসাদুজ্জামান আসাদ, আলমগীর হোসেন পলাশ, নিজেদের বন্টন বুঝে নিয়ে নেতাদের ও থানাসহ সকলের জন্য নির্ধারিত অর্থ বরাদ্ধ রাখে ।
খোজ নিয়ে আরো জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ হর্কাসলীগের নামধারী সভাপতি রহিম মুন্সি শহরের চাষাড়াস্থ হর্কাস মার্কেট থেকে বঙ্গবন্ধু সড়কের আমান ভবন পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে যাচ্ছে কয়েক যুগ ধরেই । এই সড়কের পূবদিক ২৫০ এর অধিক হকারের দোকান থেকে প্রতিদিন দোকান প্রতি ৫০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে । প্রতিদিন আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা এবং মাসে প্রায় ৫ লাখ টাকা চাঁদা আদা করে থাকে। যা বছরের হিসেবে চাঁদা আদায় হয় আনুমানিক অর্ধ কোটি টাকা।
কথিত হর্কাস সংগ্রাম পরিষদের আহব্বায়ক আসাদুজ্জামান আসাদ নিয়ন্ত্রন করেন বঙ্গবন্ধু সড়কের গলাচিপা থেকে চাষাড়া মার্ক টাওয়ার ও শহীদ মিয়ার পর্যন্ত । এ সড়কে আনুমানিক ১৫০-১৭০ টি হকারের দোকান রয়েছে। প্রতিদিন দোকান প্রতি ৫০ টাকা করে যা দাড়ায় আনুমানিক ১০ হাজার টাকা । মাসে চাঁদা আদায় হয় ৩ লাখ টাকা। বছরে চাঁদা আদায় করা হয় ৩৬ লাখ টাকা।
আলমগীর হোসেন পলাশ নিয়ন্ত্রন করেন ২ নং রেলগেইট থেকে ১ নং রেলগেইট পর্যন্ত। ফজর আলী মার্কেট থেকে উৎসব বাস কাউন্টার পর্যন্ত চেম্বার রোড সড়কের রেল লাইনের পাশে কম করে হলেও ২০০ টির অধিক দোকান। উত্তর পাশের প্রতি দোকান থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে ১০ হাজার টাকা, দক্ষিন পাশে ৫০ টাকা করে আরো ১০ হাজার টাকা করে মোট দৈনিক আদায় হয় নিম্নে ২০ হাজার টাকা হাজার টাকা । মাসে চাঁদার পরিমান দাঁড়ায় ৬ লাখ টাকা বছরে চাঁদা আদায় করে চাঁদাবাজ পলাশ । পলাশ নিজে আবার চাঁদা আদায় করতে লোক নিয়োগ করে দিয়েছে । যাদের একেক জনের বেতন প্রতিমাসে বেতন ১০ হাজার টাকা ।
এছাড়া নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের গলি থেকে পপুলার হাসপাতালের গলি পর্যন্ত নিয়ন্ত্রন করেন আরিফ। এখানে দোকান বসে সব মিলিয়ে ১শ টির মতো। দোকান প্রতি চাঁদা তোলা হয় ১শ টাকা করে। দৈনিক ১০ হাজার টাকা হিসেবে মাসে উঠানো হয় ৩ লাখ টাকা। বছরে চাঁদা আদায় করা হয় ৩৬ লাখ টাকা।
কালীবাজার ব্যাংক মোড় থেকে ফ্রেন্ডস মার্কেট পর্যন্ত চাঁদা তোলেন সোহেল। এখানে দোকান আছে ১৫০টি। ৫০ টাকা করে টাকা দৈনিক ৭ হাজার ৫শ টাকা চাঁদা উত্তোলন করে থাকে। মাসে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা। বছরে চাঁদা আদায় করা হয় ৩০ লাখ টাকা।
তালিকার এ সকল ব্যক্তিরা নিরীহ হকারদের জিম্মি চাঁদাবাজদের কথিত কয়েকজন নেতার নামে হুমকি ধমকি দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার চাঁদাবাজি । ক্ষমতাসীন দলের পরিচয় দিয়ে এবং কিছু পুলিশ কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে চলছে চাঁদা তোলার মহা উৎসব চলছেই অভিরামভাবেই ।
নারাযণগঞ্জ শহরের প্রতিটি এলাকায এমন নগ্ন চাঁদাবাজির ঘটনায় সদ্য যোগদান করা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ জামান সাংবাদিকদের বলেছেন , শহরের ফুটপাত নিযন্ত্রণে এসপি স্যারের নির্দেশ মতে হকার মুক্ত করা হবে শহরকে ।









Discussion about this post