নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের ৯৫ শতাংশ মানুষ মেয়র আইভীর সঙ্গে। নারায়ণগঞ্জবাসী মেয়র আইভীকে বিশ্বাস করে। তারা মনে করে মেয়র যেই কথা বলেছে প্রাণ দিয়ে হলেও তা রাখবে। নারায়ণগঞ্জের মানুষ জানে তাদের সেবার জন্যই আমি আমার জীবনকে উৎসর্গ করেছি।
মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) রাতে একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নিজের সফলতার কথা বলতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
যানজট, অবৈধ স্ট্যান্ড এবং যত্রতত্র পাকিং কে বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের বড় সমস্যা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের বড় সমস্যা যানজট, অবৈধ স্ট্যান্ড এবং যত্রতত্র পাকিং। শহরটাকে একদম চেনা যায় না। মনে হয় না এটা একটি শহর। বাংলাদেশে একটি সমস্যা সমাধান করতে গেলে অনেকগুলো সংস্থার প্রয়োজন হয়। যে কোনো শহরের রাস্তা হলো সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার। ট্রাক, বাস স্ট্যান্ডগুলোও তাদের মানে স্থানীয় সরকারের আওতায় থাকে কিন্তু বাস, ট্রাক কার আন্ডারে থাকে ? রোড পারমিট দেয় বিআরটিএ। রোড পারমিট দেয়ার আগে তারা জিজ্ঞাস করে না বাস স্ট্যান্ডের ধারণ ক্ষমতা কতটুকু! একটি শহরকে সাজাতে চাইলে সিটি গভার্নেন্স সবচেয়ে প্রয়োজনীয়।`
নারায়ণগঞ্জের জলাবদ্ধতা সম্পর্কে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের জলাবদ্ধতার অবস্থা অনেক ভালো। পৌরসভা থাকা অবস্থায় আমি অনেকগুলো গভীর ড্রেন করেছি। প্রতিবছর ২ বার টেন্ডার দিয়ে ড্রেনগুলো পরিষ্কার করাই। যার ফলে ১-২ ঘন্টার বেশি জলাবদ্ধতা থাকে না। নারায়ণগঞ্জের খালগুলো সিটি কর্পোরেশনের আন্ডারে আর অনেকগুলো খাল আমরা উদ্ধার করেছি। আমার শহরে বিগত ৪-৫ বছরে জলাবদ্ধতা অনেক কম। এবার যা হয়েছে নদীর পানি অনেক বেড়ে যাওয়ায় ড্রেনের পানির সমান সমান হয়ে গেছে। যার ফলে বৃষ্টির পানি অনেকটা সময় থাকে। তবে আমি চেষ্টা করছি কিভাবে এটা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি।
নদী দূষণ নিয়ে তিনি বলেন, শীতলক্ষ্যা নদী আমাদের কিন্তু নৌ মন্ত্রানালয়ের তত্ত্বাবধানে। আমি বিভিন্ন সময় শীতলক্ষ্যার সৌন্দর্য্য বর্ধনের জন্য নদীর পাড় বাধানো, বিউটিফিকেশন করেছি। নৌ মন্ত্রনালয় এবং বিআইডাব্লিইটিএ অভিযান চালিয়ে অনেক জমি দখল মুক্ত করছে। কিন্তু এসব তো বাইরের বিষয় নদীর দূষণ রোধ করবে কে? শুধু গার্মেন্টস নয় লবন, সাবান, সার কারখানাসহ অসংখ্য কারখানা রয়েছে। যা নিয়মিত শীতলক্ষ্যার পানি দূষণ করছে।
তিনি বলেন, কদম রসূল ব্রীজের কাজ এগিয়ে এসেছে। কোরিয়ান কোম্পানি কাজটি পেয়েছে, কিন্তু করোনার কারণে কাজটা পিছিয়ে গেছে। সার্ভে, ব্রীজের ডিজাইনের কাজ প্রায় শেষ। জমি অধিগ্রহণের কাজ এখন চলমান। আশা করছি ২০২১ সালে ভিত্তিপ্রস্তর করতে পারবো।’
ওয়াসা সম্পর্কে মেয়র বলেন, মাত্র ৭-৮ মাস হলো ওয়াসার দায়িত্ব নিয়েছি। কথা ছিলো দায়িত্ব নেয়ার পর বছরক্ষাণেক আমাদের সাহায্য করবে। ১৯৯১ সালে পানি বিভাগ ঢাকা ওয়াসা নিয়ে নেয়। গোদনাইলে একটি পুরনো ওয়াটার ট্রিন্টমেন্ট ছিলো আর ২০১৩ সালে তারা সোনাকান্দাতে নতুন করে একটি করে। নারায়ণগঞ্জের প্রত্যেক লাইন জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। এ অবস্থায় ১ কোটি গ্যালন পানি উৎপাদন করার কথা থাকলেও হচ্ছে ৫০ লাখ। এখন আমি নতুন করে জ্বরাজীর্ণ লাইনগুলো পরিবর্তনের জন্য এডিপি’র সঙ্গে মিলে ৮০০ কোটি টাকার একটি কাজ শুরু করেছি। এর বাইরে ২০ কোটি টাকার একটি টেন্ডার করেছি ডিপ টিউবয়েল বসানোর জন্য। এছাড়া এ বছর আমরা ৪টা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন করতে যাচ্ছি। তবে ১ থেকে ২ বছরের মধ্যে নারায়ণগঞ্জবাসীকে খুব ভালো কোনো সংবাদ দিতে পারবো না। কারণ এসব কাজ করতে আমার কিছুটা সময় লাগবে। এছাড়া শীতলক্ষ্যার দূষণ যদি আমরা বন্ধ করতে না পারি তাহলে কাজ করা সম্ভব হবে না। এত দূষিত পানি যত ট্রিটমেন্ট করি না কেন তা জনগণের আশানুপাত হবে না।
ফুটপাত দখল সম্পর্কে বলেন, ২০১৮ সালে ফুটপাত দিয়ে হাটতে গিয়ে আমি হামলার শিকার হয়েছি। সেদিন আমি মারাও যেতে পারতাম। আমি হকারদের দোষ দিচ্ছি না। আবার বাবা পৌরসভার থেকে হকার মার্কেট করে দিয়েছিলেন। মেয়র হবার আগে আমি নিজে ৬০০ হকারের জন্য মার্কেট করে দেই। এরপর তাদের কিছু রাস্তাও দেয়া হলো বসার জন্য। এরপরও এত হকার কোথায় থেকে আসলো। সপ্তাহক্ষাণেক আগে হকাররা থানা ঘেরাও করে। থানা ঘেরাও করার পরদিন যখন ফুটপাতে হকার বসে তখন আমি বলবো, তাদের খুটির জোর কোথায়। কোনো প্রভাবশালী নেতা তাদের মদদ করছে ?
নারায়ণগঞ্জ শহরকে শিশুবান্ধব করার প্রশ্নে তিনি প্রশাসনের সহযোগিতা পাচ্ছেন না জানিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, শহরকে শিশুবান্ধব নগরী করতে হবে। পর্যাপ্ত খেলার মাঠ রাখতে হবে। এ শহরে যদি জায়গা না থাকে তাহলে আমরা কোথায় খেলার মাঠটা করবো? বিভিন্ন মন্ত্রণালরে পরে থাকা ও সরকারি কিছু খাসের জায়গা চেয়েছি। কিন্তু কোন সাড়া পাইনি। মন্ত্রণালায় থেকে দেড়, ২ মাস আগে সার্ভে চিঠি এসেছে কিন্তু এখনো এর উত্তর দেয়নি। এরকম অনেক হয়েছে। অসংখ্য মন্ত্রণালয়ে আমি জমির জন্য চিঠি দিয়েছি। দুঃখের হলেও সত্য কোনো জায়গা ব্যবহারের পারমিশন তো দূরের কথা নাসিকের দখলকৃত জায়গা অন্য মন্ত্রণালয়কে দিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যেখানে শিশুদের প্রায়োরিটি দিতে চাচ্ছে সেখানে প্রশাসন কেন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছে না? আমাদের মাঠের জন্য জায়গা দেন না আর অন্যদিকে রাতের আধারে সে জায়গা ফ্যাক্টরি করার জন্য টেন্ডার ছাড়া দিয়ে দেন এখানে সুশাসন কোথায় ?
প্রধানমন্ত্রী বলার পরও কেন তাদের টনক নড়ে না। কেন তারা মাঠের জন্য জায়গা দেয় না ? মাঠের জায়গা প্লট করে রাতের আধারে বিক্রি করবে কেন ? অনেকে বলে, মেয়র আইভী এটা শুনে না ওটা শুনে না। মামলার উপর দিয়ে মাঠ করে। হ্যা আমি করি, মানুষের জন্য করি। সারাদেশের রেলের পর্যাপ্ত জায়গা আছে এবং বিভিন্ন জেলা রেলের জায়গা ব্যবহার করে মাঠ, পার্ক করেছে। নারায়ণগঞ্জে আমরাও করেছি। হ্যা, দখল করেই পার্কটি করেছি।
নিজের ব্যর্থতা নিয়ে মেয়র আইভী বলেন, আমার ব্যর্থতা হলো আমি প্রশাসনকে বুঝাতে পারি না যে, এই কাজটা আমি সরকারের জন্য করতে চাচ্ছি। এখানে আমার ব্যক্তি কোনো স্বার্থ নাই। কেন প্রশাসন সাড়া দেয় না, কাকে তারা ভয় পায়! কেন তাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও মেয়র আইভীর টেবিলে যেতে পারে না। কেন ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নাসিককে জমি দিতে তারা দ্বিধাগ্রস্থ হয়। এখানে আমার ব্যর্থতা।









Discussion about this post